বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে দেশগুলো সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা ডুবে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। নোনা পানির অনুপ্রবেশ ক্রমেই বাড়ছে। ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের প্রকোপ ও তীব্রতা দুটোই বাড়বে। উত্তরাঞ্চলে দেখা দিতে পারে তীব্র খরা ও বাড়তে পারে মরুকরণ প্রক্রিয়া। বর্ষায় অতিবৃষ্টি ও উজানের ঢলে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি ক্রমেই বাড়বে। এডিবির জলবায়ু ও অর্থনীতিবিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বার্ষিক জিডিপি ২ শতাংশ কমে যেতে পারে। ১৯টি উপকূলীয় জেলা স্থায়ীভাবে ডুবে যেতে পারে। এ পরিস্থিতিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো দুদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘ঢাকা মিটিং অব দ্য গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশন’। সম্মেলনে গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশনের চেয়ারম্যান ও জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশের এ পর্যন্ত গৃহীত পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, জলবায়ু অভিযোজনে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক এই দেশ। তিনি বলেন, আমরা ঢাকায় একটি অভিযোজন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই। বিশ্বব্যাংকের সিইও ক্রিস্টালিনা জর্জিভা একইভাবে অভিযোজনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জনের প্রশংসা করেন। বিশ্বের এই প্রশংসার সম্মান আমাদের ধরে রাখতে হবে।
সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ অনুযায়ী বাংলাদেশে এখন ৬০ লাখ জলবায়ু অভিবাসী রয়েছে, যা ২০৫০ সাল নাগাদ দ্বিগুণেরও বেশি হতে পারে। তিনি বলেন, গত এক দশকে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিপুল উন্নতি করেছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাবে এই অর্জনগুলোও আজ হুমকির মুখে চলে এসেছে। তিনি এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশনের সহযোগিতা আশা করেন। প্রাকৃতিক সম্পদের দিক থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ জেলাগুলোর একটি কক্সবাজার। বিপুল রোহিঙ্গা-উপস্থিতির কারণে আজ সেখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রায় ধ্বংস হতে বসেছে। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলো পরিদর্শন করেন এবং বিশ্বসম্প্রদায়কে আরো জোরালোভাবে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান।
ছোট্ট এই ভূখণ্ডে ১৬ কোটি মানুষের বসবাস। ঘনবসতিপূর্ণ এই দেশের এক-তৃতীয়াংশ যদি তলিয়ে যায়, তাহলে বাকি ভূখণ্ডে এত মানুষের ঠাঁই দেওয়াই মুশকিল হয়ে যাবে। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজন বা অ্যাডাপটেশন এবং জনসংখ্যার ওপর ক্ষতিকর অভিঘাতের মাত্রা কমিয়ে আনা বা মিটিগেশনের ক্ষেত্রে আমাদের আরো বেশি তৎপরতা প্রদর্শনের কোনো বিকল্প নেই।