মধ্যবিত্তদের উপর বোঝা

17

প্রস্তাবিত বাজেটের অনেক বিষয়ে ব্যাপক সমালোচনা ছিল। বিশেষ করে, সঞ্চয়পত্রে উেস কর বৃদ্ধি নিয়ে প্রবল আপত্তি জানানো হয়েছিল; কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। উেস কর ৫ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত বার্ষিক আয়সীমা করা হয়েছিল দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা। এর মধ্যে জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, সেই একই জীবনযাত্রার ব্যয় এখন প্রায় চার লাখ টাকা। অথচ ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা আড়াই লাখ টাকাই রাখা হয়েছে। এর অর্থ, কারো মাসিক নিট আয় ২০ হাজার ৮৩৪ টাকা হলেই তাকে আয়কর দিতে হবে। বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীরা করপোরেট কর কিছুটা কমানোর দাবি জানিয়েছিল। অর্থমন্ত্রী তাদের কর কমানোর আশ্বাসও দিয়েছিলেন; কিন্তু কমানো হয়নি। মোবাইল কলরেট ও স্মার্টফোনের ওপর বাড়তি করারোপের বোঝা টানতে হবে গ্রাহকদেরই। অগ্রিম কর প্রত্যাহার না হওয়ায় এবং জোগানদারের ভ্যাট বাড়ানোর কারণে ব্যবসার খরচ বেড়ে যাবে। তারও চূড়ান্ত প্রভাব পড়বে ভোক্তাদের ওপর। সব কিছু মিলিয়ে এবারের বাজেট সম্পর্কে অর্থনীতিবিদদের মূল্যায়ন হলো, এটি মধ্যবিত্তকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
প্রতিবছরের মতো এবারও বাজেট ঘোষণার পর থেকেই বাজার ঊর্ধ্বমুখী। কারণে-অকারণে বাড়ছে জিনিসপত্রের দাম। তা নিয়ন্ত্রণের কোনো উদ্যোগ নেই। প্রতিবছরই বাড়িভাড়া বাড়ছে। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া, যাতায়াতের খরচ বেড়েছে। ফলে চাকরিজীবী নিম্নমধ্যবিত্তের টিকে থাকাই দায় হয়ে উঠেছে। এর ওপর ২১ হাজার টাকা নিট বেতনের চাকরিজীবীকে আয়করের বোঝাও টানতে হবে। সারা জীবন চাকরি করে অবসরে যাওয়া কোনো ব্যক্তি একসঙ্গে যে সামান্য টাকা পান, তা অন্য কোথাও বিনিয়োগ করার সুযোগ নেই। নিরাপদ ভেবে তা দিয়ে তাঁরা সঞ্চয়পত্র কেনেন। সামান্য যে লভ্যাংশ পান, তা দিয়ে কোনো রকমে চলার চেষ্টা করেন। সেখানেও উেস কর দ্বিগুণ করায় তাঁরা রীতিমতো মর্মাহত। এমন অবস্থায় মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো বাড়ানো হয়েছে গ্যাসের দাম। গৃহস্থালিতে এক চুলায় গ্যাসের দাম ৭৫০ থেকে বাড়িয়ে ৯২৫ টাকা করা হয়েছে এবং দুই চুলায় ৮০০ থেকে বাড়িয়ে ৯৭৫ টাকা করা হয়েছে। মধ্যবিত্তরা এ বোঝা টানবে কিভাবে? এখানেই শেষ নয়, গাড়িতে সিএনজির দাম ৪০ থেকে বাড়িয়ে ৪৩ টাকা করা হয়েছে। এই অজুহাতে বাসভাড়া বাড়ানো হবে অযৌক্তিকভাবে। সেই বাড়তি বোঝাও টানতে হবে মধ্যবিত্তকে।
মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের লোকজনই জনসংখ্যার সিংহভাগ। তাদের জীবন দুর্বিষহ করে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা যায় না—নীতিনির্ধারকদের সেটি বুঝতে হবে। আমরা আশা করি, দেশের বেশির ভাগ মানুষের জীবনে কিছুটা হলেও স্বাচ্ছন্দ্য দিতে বাজেটের কিছু দিক পুনর্মূল্যায়ন করা হবে।