‘সমৃদ্ধ আগামীর’ প্রত্যাশায় গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত হয়েছে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট। ২০১৯-২০ সালের এই বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। এতে রাজস্ব খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে তিন লাখ ১০ হাজার ২৬২ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ দুই লাখ দুই হাজার ৭২১ কোটি টাকা। ঘোষণার পরপরই বাজেট নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নানামুখী আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়ে গেছে। কেউ একে উচ্চাভিলাষী বাজেট বলছেন, আবার কেউ বলছেন প্রয়োজনের নিরিখে বাজেটের আকার আরো অনেক বড় হওয়া উচিত ছিল। বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা এবং করবহির্ভূত আয় ধরা হয়েছে ৩৭ হাজার ৭১০ কোটি টাকা। তাতে ঘাটতি দাঁড়ায় এক লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র মিলিয়ে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেওয়া হবে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণ ধরা হয়েছে ৬৩ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা। অর্থনীতিবিদদের অনেকেই মনে করছেন, রাজস্ব আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তা আদায় করার মতো সক্ষমতা নেই। ফলে বাস্তবে ঘাটতি আরো বেশি হবে।
রাজস্ব আয়ের ঘাটতি মেটাতে এবার বাজেটে কর বৃদ্ধি না করে কর আদায়ের ক্ষেত্র বা আওতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কর অঞ্চল ৩১টি থেকে বাড়িয়ে ৬৩টি করা হবে এবং প্রতি উপজেলায় কর অফিস স্থাপন করা হবে। কর প্রদানকারীর সংখ্যা এক কোটিতে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী এবার ভ্যাটের হার ও ভ্যাট প্রদানকারীদের বেশ কয়েকটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে। সর্বোচ্চ ভ্যাট হার ১৫ শতাংশ থাকলেও কিছু কিছু পণ্যে তা ২ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। অবশ্য ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পণ্য অনুযায়ী ভ্যাটের স্তর নির্ধারণে যথেষ্ট অস্পষ্টতা রয়েছে। বিজিএমইএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের দাবি অনুযায়ী প্রণোদনা দেওয়া হয়নি। তা সত্ত্বেও তারা ঘোষিত বাজেটকে জনকল্যাণমুখী বাজেট হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। বাজেটে এবারও করমুক্ত বার্ষিক আয়সীমা দুই লাখ ৫০ হাজার টাকাই রাখা হয়েছে। অনেকেই এর তীব্র সমালোচনা করেছেন। ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে করমুক্ত আয়সীমা একই আছে। অথচ মূল্যস্ফীতির কারণে এ কয় বছরে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে এবং প্রকৃত আয় কমে গেছে। তাঁদের মতে, করমুক্ত আয়সীমা এখন কমপক্ষে চার লাখ টাকা করা প্রয়োজন। অনেকেই এবারের বাজেটকে ‘শিল্পবান্ধব’ উল্লেখ করে বলেছেন, এতে শিল্পায়ন উৎসাহিত হবে এবং কর্মসংস্থানের হার বাড়বে। পুঁজিবাজারে স্থিতি আনার লক্ষ্যে প্রণোদনাসহ বেশ কিছু উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে।
সার্বিক বিচারে অনেকেই ঘোষিত বাজেটকে বাস্তবসম্মত বলেছেন। একই সঙ্গে তাঁরা বাজেট বাস্তবায়নে আরো গতি আনার পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা মনে করি, যৌক্তিক সমালোচনাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় সংশোধনের পরই আগামী অর্থবছরের বাজেট পাস করা উচিত।