কাজিরবাজার ডেস্ক :
আইনী জটিলতা কাটিয়ে জুলাই থেকে গ্যাসের বর্ধিত দাম কার্যকরের ঘোষণা দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। তবে গ্যাসের দাম কতভাগ বাড়বে তা নির্ভর করছে সরকারের ভর্তুকি প্রদানের ওপর। সরকার এ খাতে যত বেশি ভর্তুকি দেবে গ্যাসের দাম ততই কম বাড়বে। সম্প্রতি বিদ্যুত, জ¦ালানি এবং খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, এলএনজি আমদানির ব্যয় বহন করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। আবার সরকার এক সঙ্গে জ¦ালানির দর খুব বেশি বৃদ্ধি করতে চায় না, যাতে জনজীবনে বিপর্যয় নেমে আসে। তিনি বলেন, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি সহনীয়ই থাকবে। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন সূত্র জানায়, এখন প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া আরও একটি এলএনজি টার্মিনাল দেশে আনা হয়েছে। এতে করে আরও ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে। এতে করে দেশে গ্যাস সরবরাহে ১২ থেকে ১৪ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি তৈরি হবে। এই ঘাটতির পুরোটা ভোক্তার কাছ থেকে তোলা কঠিন। গ্যাস বিক্রিতে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে। নির্বাচনের আগে আগে মূল্য সমন্বয়ের যে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল সেখানে গ্যাসের দাম না বাড়িয়ে সরকারকে তিন হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়ার সুপারিশ করেছিল কমিশন। গত ১৬ অক্টোবর কমিশন গ্যাসের মূল্য সমন্বয়ের এই ঘোষণা দেয়।
কমিশন সূত্র বলছে, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দিতে গিয়ে আইনী জটিলতায় পড়েছে বিইআরসি। প্রথমত কমিশন আইনে এক বছরে দু’বার মূল্য সমন্বয়ের বিজ্ঞপ্তি জারির কোন বিধান নেই। অন্যদিকে কমিশন আইনে শুনানির ৯০ দিনের মধ্যে দাম ঘোষণা করার বিধান রয়েছে। যদিও ৯০ দিনের ঘোষণার বেলায় আইনে একটু ফাঁক রাখা হয়েছে। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন ২০০৩ এর ৭ম অধ্যায়ের ৩৮ ধারা ট্যারিফ বা দাম নির্ধারণের ৬ এ বলা হয়েছে লাইসেন্সি ট্যারিফ পরিবর্তনের প্রস্তাব বিস্তারিত বিবরণসহ কমিশনের নিকট উপস্থাপন করবে। কমিশন আগ্রহী পক্ষকে শুননি দেয়ার পর ট্যারিফ পরিবর্তনের প্রস্তাবসহ সকল তথ্যাদি প্রাপ্তির ৯০ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাবে। সকল তথ্যাদি প্রাপ্তির সময়কে কশিমন পিছিয়ে দেখালে আইনের এই ধারা চ্যালেঞ্জের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তবে কমিশন আইনের ৭ম অধ্যায়ের ৩৮ ধারা ট্যারিফ বা দাম নির্ধারণের ৫ এ বলা হয়েছে, কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত ট্যারিফ কোন অর্থবছরে একবারের বেশি পরিবর্তন করা যাবে না। যদি না জ¦ালানি মূল্যের পরিবর্তনসহ অন্য কোনরূপ পরিবর্তন ঘটে। গত ১৬ অক্টোবর একদফা মূল্য সমন্বয়ের পর কমিশন আবার একই অর্থবছরে নতুন করে দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দিতে পারে না।
কমিশনের সাবেক সদস্য মোঃ এমদাদুল হক বলেন, এখানে সরাসরি ৯০ দিনের কথা বলা নেই। বলা হয়েছে সকল তথ্য প্রাপ্তির ৯০ দিন পরে। ফলে এখানে শুনানির ৯০ দিনের মধ্যেই ঘোষণা আসতে হবে বিষয়টি এ রকম নয়। তিনি বলেন, তবে দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বছরে একবারের বেশি ঘোষণা দেয়ার বিষয়ে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কমিশন আইনের সুনির্দিষ্ট শর্ত পূরণ ব্যতিরেকে ঘোষণা দেয়া কঠিন।
গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা সম্পর্কে জানতে চাইলে কমিশনের এক সদস্য নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, আমাদের আইনগত দিকগুলো দেখতে হচ্ছে। এজন্যই ঘোষণা দিতে দেরি হচ্ছে। আইনে এক অর্থবছরে দু’বার দাম বৃদ্ধির বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে এ বিষয়ে তার মন্তব্য জানতে চাইলে বলেন, আমাদের দুটি বিষয়ই দেখতে হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন- ওই বিষয়টি যেমন দেখতে হচ্ছে আবার শুনানির ৯০ দিনের মধ্যে ঘোষণার বিষয়টিও দেখতে হচ্ছে।
তবে কমিশনের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বিতরণ কোম্পানি চাইলেও পহেলা জুলাইয়ের আগে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি কার্যকরের ঘোষণা দিলে বিপাকে পড়তে হবে কমিশনকে। এর আগেও এক বছরে দুই ধাপে গ্যাসের দাম বাড়ালে উচ্চ আদালত দ্বিতীয়ধাপের দাম বৃদ্ধির ঘোষণাকে আটকে দেয়।
জানতে চাইলে জ¦ালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, আমরা এর আগেও তাদের এ বিষয়টি বলেছি। কমিশন আইন অনুযায়ী তারা একই অর্থবছরে দুবার মূল্য সমন্বয়ের ঘোষণা দিতে পারে না। কিন্তু তারা এই বিষয়ে কর্ণপাত না করে আমাদের বলেছিল তখন যেহেতু আমরা গতবার দাম বৃদ্ধি করিনি তাই এখন এটা করা যাবে না এমন নয়।
গত ফেব্রুয়ারিতে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো কমিশনের কাছে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে আসে। কোম্পানিগুলো গড়ে ১০২ ভাগ গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করে।