কাজিরবাজার ডেস্ক :
দেশব্যাপী ১০ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে একযোগে চলছে একাদশ শ্রেণীতে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম। শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের কোন রকম বিড়ম্বনা আর হয়রানি ছাড়াই চলছে এ প্রক্রিয়া। প্রক্রিয়া সহজ হওয়ায় ব্যাপক সাড়া পড়েছে একাদশ শ্রেণীতে অনলাইন ও এসএমএসের মাধ্যমে ভর্তির আবেদন। ফলে স্বস্তি প্রকাশ করছেন অভিভাবকরাও। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১০ শিক্ষা বোর্ডের কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করেছেন ১০ লাখ ৩৭ হাজার ৩১ শিক্ষার্থী। কেবল ঢাকা শিক্ষা বোর্ডেই আবেদন করেছেন তিন লাখ ১৩ হাজার ৮৫।
কোন রকমের বিড়ম্বনা ছাড়াই গত ১২ মে দুপুর বারোটা থেকে দেশব্যাপী একযোগে চলছে নতুন নীতিমালা অনুসারে ভর্তি কার্যক্রম। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন অনলাইন বা টেলিটকে এসএমএস পাঠিয়ে আবেদন ইস্যুটি। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটি ও টেলিটক সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দিন অনলাইনে কোন সমস্যা না হলেও প্রথম দিকে টেলিটকে এসএমএসের মাধ্যমে টাকা পাঠানোয় কিছুটা জটিলতা পড়তে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। তবে তা দ্রুতই নিরসন করা হয়েছে। এর ফলে এখন স্বাভাবিক গতিতেই আবেদনের ফি পাঠাতে পারছে শিক্ষার্থীরা। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির প্রধান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, অত্যন্ত নির্বিঘেœ চলছে কার্যক্রম। কোথাও কোন জটিলতা নেই। ঢাকা বোর্ডের সচিব অধ্যাপক তপন কুমার সরকার জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। সারাদেশেই অত্যন্ত সুন্দরভাবে আবেদন কার্যক্রমে শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারছে। শিক্ষার্থীরা টেলিটক মোবাইল ফোনে এসএমএস এবং অনলাইনে ভর্তির জন্য আবেদন করছেন ভালভাবেই। কোন বিড়ম্বনা নেই। অন্য বছর এই সময়ের তুলনায় এবার আবেদনের পরিমাণও বেড়েছে। আমরা বিভিন্নভাবে খবর রাখছি। সার্বিক পরিস্থিতি অত্যন্ত আশাপ্রদ।
শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুবিধার কথা চিন্তা করে এবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে প্রথমবারের মতো কলেজগুলোকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। আসন সংখ্যা ও পাসের হারের ভিত্তিতে করা হয়েছে পৃথক তালিকা। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সচিব বলছিলেন, কলেজগুলোকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে কেবল শিক্ষার্থীদের স্বার্থের কথা চিন্তা করেই। যাতে প্রত্যেক শিক্ষার্থী জানতে পারে কোনটা কোন মানের প্রতিষ্ঠান। এসএসসিতে কেমন ফল হলে কোথায় ভর্তি হওয়া যাবে। এটা করা হচ্ছে শুধু ঢাকা বোর্ডেই।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ভর্তিতে যে প্রতিযোগিতা হয় তাতে সমস্যাটা হয় ঢাকা বোর্ড বিশেষত ঢাকা শহরেই বেশি। তাই অনেকে ভাবে তারা ভাল কলেজে ভর্তি হতে পারেন না। তাই ফলাফল ও সেই মানের কোন কলেজ তা দেখে আবেদন যাতে করতে পারেন সেজন্যই নতুন উদ্যোগ। শিক্ষার্থীরা যাতে এটা শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করেই করা হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীরাই উপকৃত হবে। সে তার নিজের ফল বিবেচনা করে কলেজ চয়েস দিতে পারবে। শিক্ষার্থীদের মেধা ও প্রাপ্যতা অনুযায়ী কলেজ পছন্দ করতে পারবে। এর মধ্যে শুধু ঢাকা বোর্ডের অধীনস্ত কলেজগুলোর আসন সংখ্যা ও পাসের হারের ভিত্তিতে তিনটি পৃথক তালিকা তৈরি করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ক্যাটাগরি দেখে আবেদন করারও পরামর্শ দেন বোর্ড সচিব।
ঢাকা বোর্ডের কম্পিউটার সেকশন সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১০ শিক্ষা বোর্ডের কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করেছেন ১০ লাখ ৩৭ হাজার ৩১ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে অনলাইনে আবেদন করেছেন ৮ লাখ ৭৫ হাজার ১৮ জন ও এসএমএস করেছেন দুই লাখ ৩১ হাজার ৫৫২ শিক্ষার্থী। সর্বোচ্চ আবেদন জমা পড়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীন কলেজের অনুকূলে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডেই আবেদন করেছেন তিন লাখ ১৩ হাজার ৮৫ জন। যাদের মধ্যে অনলাইনে আবেদন করেছেন দুই লাখ ৭৫ হ্জাার ২৩৭ জন। মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়ে আবেদন করেছেন ৩৮ হাজার ৬০৩ জন শিক্ষার্থী।
শিক্ষা বোর্ড জানিয়েছে, ভর্তি নীতিমালা অনুসারে প্রথম ধাপে আবেদন করা যাবে ২৩ মে পর্যন্ত। এই পর্যায়ে আবেদনকারীদের ফল প্রকাশ করা হবে ১০ জুন। দ্বিতীয় পর্যায়ে আবেদন করা যাবে ১৯ ও ২০ জুন। ২১ জুনই তাদের আবেদনের ফল প্রকাশ করা হবে। তৃতীয় ধাপে আবেদন নেয়া হবে ২৪ জুন। ফল প্রকাশ করা হবে ২৫ জুন। ২৭ থেকে ৩০ জুনের মধ্যে শিক্ষার্থীদের নির্বাচিত কলেজে ভর্তি হতে হবে।
অনলাইনে সর্বনিম্ন ৫টি ও সর্বোচ্চ ১০টি কলেজ বা মাদ্রাসায় আবেদন করা যাবে। এর জন্য নেয়া হবে ১৫০ টাকা। মোবাইল ফোনে প্রতি এসএমএসে একটি করে কলেজে আবেদন করা যাবে। এর জন্য মোট ১২০ টাকা লাগবে। এসএমএস ও অনলাইন মিলিয়ে কোন শিক্ষার্থী ১০টির বেশি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে পারবে না। কলেজ পছন্দ করতে এবার প্রথম ধাপের আবেদনের ফল প্রকাশ না করা পর্যন্ত আবেদন তালিকায় কলেজের পছন্দক্রম রদ-বদল করতে পারবে শিক্ষার্থীরা।
ভর্তির জন্য কলেজ পাওয়ার পর শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিশ্চায়ন (রেজিস্ট্রেশন) করতে হবে। এর জন্য বিকাশ, শিওরক্যাশের মাধ্যমে ১৯৫ টাকা পরিশোধ করতে হবে। জানা গেছে, এবার ভর্তির সব আসনই মেধারভিত্তিতে পূরণ করা হবে। তবে বিভিন্ন কোটার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা- রাজধানীতে ৫ শতাংশ, বিভাগীয় ও জেলা সদরে ৩ শতাংশ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধঃস্তন সব দফতরের কোটা ২ শতাংশ, বিকেএসপিতে শূন্য দশমিক ৫ এবং প্রবাসীদের জন্য শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ কোটা রয়েছে। যদি এসব কোটায় উপযুক্ত প্রার্থী না পাওয়া যায় তবে এ আসনে অন্য কাউকে ভর্তি করা যাবে না।
ভর্তি নীতিমালায় একাদশ শ্রেণীতে সেশন চার্জসহ ভর্তি ফি মফস্বল, পৌর (উপজেলা) এলাকায় ১ হাজার টাকা, পৌর (জেলা সদর) এলাকায় ২ হাজার টাকা, ঢাকা ছাড়া অন্যান্য সব মেট্রোপলিটন এলাকায় ৩ হাজার টাকা ধার্য করা হয়েছে।
তবে মেট্রোপলিটন এলাকায় অবস্থিত এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে ৫ হাজার টাকার বেশি আদায় করা যাবে না। মেট্রোপলিটন এলাকায় অবস্থিত আংশিক এমপিওভুক্ত বা এমপিওবহির্ভূত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা হিসেবে শিক্ষার্থীদের ভর্তির সময় ভর্তি ফি, সেশন চার্জ ও উন্নয়ন ফিসহ বাংলা মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৯ হাজার টাকা এবং ইংরেজী ভার্সনে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
দেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ইনস্টিটিউট অব গ্লাস এ্যান্ড সিরামিকস, গ্রাফিক্স আর্টস ইনস্টিটিউট, ফেনী কম্পিউটার ইনস্টিটিউট, বিভিন্ন সার্ভে ইনস্টিটিউট, ভোকেশনাল টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে ৪ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডিপ্লোমা ইন ট্যুরিজম এ্যান্ড হসপিটালিটি কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। একটানা ৮ জুন পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। ফল প্রকাশ ১৫ জুন। পরদিন থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত মূল মেধাতালিকায় স্থানপ্রাপ্তরা ভর্তি হতে পারবেন। ২৯ জুন থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত অপেক্ষমান তালিকার প্রার্থীরা ভর্তি হতে পারবে।
এদিকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া সহজ হওয়ায় খুশি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও। অনলাইন ও টেলিটকে আবেদন করেছেন ভিকারুন নিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী রাবেয়া। সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলছিলেন, আমি ভিকারুন নিসা থেকেই জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেছি। নীতিমালা অনুসারে আমরা আমাদের কলেজে ভর্তিতে অগ্রাধিকার পাব।
তারপরেও যদি কোন সমস্যা না হয় তাই পছন্দের কয়েকটি আবেদন করেছি। কোন সমস্যা হয়নি। নিজের টেলিটক মোবাইল থেকেই এসএমএস করেছি। কোন সমস্যা হয়নি। মা সালেহা বেগম বলছিলেন, আবেদন ভালভাবে হয়েছে। কোন বিড়ম্বনা নেই। এটাই ভাল উদ্যোগ।
এক সময় ভর্তি শুরু হলেই নানা জটিলতার মুখোমুখি হতে হতো ঢাকা কলেজকে। নেতাদের তদ্বির, ভর্তি বাণিজ্য আর হুমকিতে তটস্ত থাকতে হতো কলেজ কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু অনলাইনে ভর্তি শুরুর পর থেকেই পাল্টে গেছে আগের উদ্বেগজনক চেহারা। ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ নেহাল আহমেদ সন্তোষ প্রকাশ করে বলছিলেন, এটা অসাধারণ একটা উদ্যোগ। দিনদিন প্রক্রিয়াটি আরও ভাল হচ্ছে। কলেজে নেই কোন চাপ, নেই কোন বিড়ম্বনা। ভর্তির জন্য কাউকে বলেজেও আসতে হয় না। কোন ছাত্র যদি কক্সবাজার থেকেও আবেদন করে ভর্তির জন্য মনোনীত হয় তাহলেও তাকে এখানে ভর্তির জন্য আসতে হবে না। টাকা জমা দেয়া থেকে শুরু করে সকল প্রক্রিয়া শেষ করা যাবে বাড়িতে বসেই। ভর্তির পর সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থী এসএমএসে পেয়ে যাবে সে কোন সেকশনে ভর্তি হয়েছে তার তথ্যও। সুতরাং এটি খুবই সুন্দর একটি উদ্যোগ। যা আশান্বিত করেছে সকলকেই।
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম বলছিলেন, আবেদন চলছে সুন্দরভাবে। আবেদন নিয়ে কলেগুলোরও কোন চাপ নেই এখন। আমাদের কাজ শুরু হবে তালিকা প্রকাশের পর ভর্তি শুরু হলে। অনলাইনে হওয়ায় আমাদের কোন চাপ নেই। নেই কোন ভর্তির তদ্বিরও।