কাজিরবাজার ডেস্ক :
পবিত্র মাহে রমজানের আজ ১৩তম দিবস। সিয়াম সাধনার সঙ্গে জবানের হিফাজতের একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) ইরশাদ করেছেন রোযা রাখা অবস্থায় কোন ধরনের ঝগড়া, তর্কে জড়াবে না আর যদি কেউ গায়ে পড়ে ঝগড়ায় লিপ্ত হতে চায় তখন বলবে চুমতু লির রহমান অর্থাৎ আমি দয়াময়ের নামে আজ সিয়াম সাধনারত মুখ করেছি সংযত সুতরাং কোন তর্ক নয়। নবীজী অন্যত্র জিহবার দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন তুমি এটাকে সংবরণ কর। বস্তুত জিহ্বা। ইংরেজীতে যাকে ঞড়হমঁব বলা হয়ে থাকে। মানুষের দৈহিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর মধ্যে একটি ছোট বস্তু মাত্র। অথচ এর ভূমিকা হলো অতি বিস্তৃত ও ব্যাপক। এটি যে যত সুন্দরভাবে ব্যবহার করতে পারে সে তত ভালভাবে সমাজে প্রতিষ্ঠা পেয়ে থাকে। পক্ষান্তরে এর প্রয়োগে অসতর্ক হলে সমাজে দেখা দেয় নানা অসন্তোষ। সুতরাং বোঝা যায়, জিহবার প্রভাব মনুষ্য সমাজে অতিপ্রখর ও প্রত্যক্ষ। এই জিহবা নিঃসৃত মহামনীষীদের অমূল্যবাণী মানুষ যুগ যুগ ধরে পরম যতেœ সংরক্ষণ করে। এর সতর্ক ব্যবহারের মধ্যেই প্রভূত কল্যান। ইসলাম ধর্ম এ মহাশক্তিশালী অস্ত্র জিহবার ব্যবহারবিধি খুব গুরুত্বের সঙ্গে ব্যাখ্যা করেছে। অতএব অপরাধমূলক বাক্য উচ্চারণ থেকে একে সংরক্ষণ করা অপরিহার্য। কেননা বিচার দিবসে এটি স্রষ্টার সামনে তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। কুরআন শরীফের ঘোষণা মতে, মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। এ দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষ যখন নিজেকে মূল্যায়ন করে তার সামগ্রিক জীবন নিয়ে চিন্তা করে এবং সঙ্গে সঙ্গে এ বিশ্বাস পোষণ করে যে, তাকে অবশ্যই একদিন স্রষ্টার বিচারালয়ে জবাবদিহির জন্য দাঁড়াতে হবে। তাহলে সে নিশ্চয় সংযত হবে। যা একান্ত বলার তা বলবে, আর যা না বললে চলে তা পরিত্যাগ করবে।
কুরআনে এসেছে, যখন কোন ব্যক্তি কোন শব্দ উচ্চারণ করে অমনিতেই তা লিপিবদ্ধ হয়ে যায়। লিপিবদ্ধকারী সম্মানিত দুই ফেরেস্তা তা যথাযথভাবে হিফাজত করেন। আমরা খেয়াল করলে দেখব, জিহবার দ্বারা দুটি উল্লেখযোগ্য অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে। এক. এটি দিয়ে অপ্রয়োজনীয় ও অবৈধ কথা বলা। দুই. বাস্তব সত্য গোপন করে নীরবতা অবলম্বন করা। এ দুটি অপরাধ কোনটার চেয়ে কোনটা কম নয়। সত্য গোপনকারীকে হাদীস শরীফে বোবা শয়তান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অকল্যাণকামী ও উদাসীন বলে প্রমাণিত হয়। অন্যদিকে অপ্রয়োজনে হৈইহুল্লোড়কারী যে কেউ ব্যক্তিত্বহীন বলে চিহ্নিত হয়।
সুতরাং মধ্য পথ বেছে নিতে হবে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স:) সতর্ক করে বলেছেন : জিহবা এবং উলঙ্গপনার জন্যই অধিকাংশ মানুষ নরকবাসি হবে। শুধু হযরত মুহাম্মদ (স:) এর জীবনে নয় , তাঁর পরবর্তী খলিফা ও সাহাবাদের জীবনেও আমরা জিহবা বা মুখ সংযত করার ব্যপারে গুরুত্বারোপ করতে দেখি। প্রথম খলিফা আবু বকরকে (রাদি:) একদিন নিজ জিব ধরে বলতে শুনা যায়, এ জিহবার কারণে আমি বহুবার বিপদের সম্মুখীন হয়েছি। বিখ্যাত সাহাবি আবদুল্লাহ বিন মাসউদ বলেন, প্রভুর নামে কসম করে বলছি : মানুষকে নিগৃহীত স্থানের দিকে ধাবিত করার জন্য জিহবাই বেশি ভূমিকা রেখে থাকে।
আমীরুল মোমেনীন আলী (রাদি:) একবার প্রসঙ্গক্রমে বলেছেন : একজন মানুষ পূর্ণ ইমানের স্বাদ তখনই গ্রহণ করার দাবি করতে পারে, যখন সে ঠাট্টার ছলে হলেও মিথ্যা বলা পরিত্যাগ করে। এ জন্যই হয়তো হাদীসে বর্ণিত হয়েছে : মান লাম ইযেদা’ ক্বাউলায যুর…অর্থাৎ যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও তদনুযায়ী আমল করা বর্জন করেনি তার এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আলাহর কোন প্রয়োজন নেই।