মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চা শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালে ধর্মঘট শুরু

12
বেতন বৃদ্ধির দাবিতে সিলেট ভ্যালীর চা শ্রমিকের ধর্মঘট চলছে। চাঁনপুর বাগান থেকে মিছিল নিয়ে শায়েস্তাগঞ্জে যাওয়ার পথে চুনারুঘাট বাজারে পুলিশ বাধা দেয়। ছবিটি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট থেকে তোলা। ছবি মামুন হোসেন

কমলগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
বর্তমান বাজারে দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সংগতি রেখে চা শ্রমিকের মজুরি ৩০০ টাকায় উন্নীত করার দাবিতে গত মঙ্গলবার থেকে সারাদেশে ১৬৭টি চা বাগানে চার দিনের (প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে ১১টা) কর্মবিরতি পালিত হওয়ার পর বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন ভ্যালীর যৌথ সিদ্ধান্তে শনিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট শুরু হয়েছে। শনিবার সকাল ১১টা থেকে কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর হালিমা বাজার, শমশেরনগর চৌমুহনা চত্বরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে শনিবার সকাল থেকে কমলগঞ্জ উপজেলার ২২টি চা বাগানে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। এসব চা বাগানের শ্রমিকরা কাজে যোগদান না করে স্থানীয় হাটবাজারে বিক্ষোভ মিছিল, সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন চা শ্রমিকরা। শনিবার সকাল ১১টায় কমলগঞ্জের হালিমাবাজারে আলীনগর চা বাগান পঞ্চায়েত এর উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাহী উপদেষ্টা ও কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রামভজন কৈরী, বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি গণেশ পাত্র, সজল কেরী প্রমুখ। দুপুর ১২টায় শমসেরনগর বাজারে শমসেরনগর চা বাগান, কানিহাটি চা বাগান, দেওছড়া চা বাগানের চা শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল করে প্রতিবাদ সমাবেশ করে। এখানের প্রতিবাদ সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো: রফিকুর রহমান, শমসেরনগর ইউপি চেয়ারম্যান মো: জুয়েল আহমদ, মনু দলই ভ্যালীর সাধারণ সম্পাদক নির্মল দাশ পাইনকা, ইউপি সদস্য ইয়াকুব আলী, মহিলা সদস্যা নমিতা সিংহ, শমসেরনগর চা বাগান পঞ্চায়েত সম্পাদক শ্রীকান্ত কানু গোপাল, মাসিক চা মজদুর সম্পাদক সীতারাম বীন, চা শ্রমিক ছাত্রনেতা মোহন রবিদাস প্রমুখ। কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর চা বাগান শ্রমিকরা সকাল থেকে জড়ো হয়ে শমসেরনগর-ভানুগাছ সড়ক অবরোধ করে। এ সময়ে সড়কের দু’পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে শমসেরনগর চা বাগান শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শমসেরনগর বাজার প্রদক্ষিণ শেষে চৌমুহনা চত্বরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর ২টায় আবারো কুলাউড়ার চাতলাপুর চা বাগান ও তিলকপুর চা বাগানের চা শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শমসেরনগর বাজারে চৌমুহনা চত্বর অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন শরীফপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা তোফাজ্জল হোসেন চিনু, চাতলাপুর চা বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি সাধন বাউরী, চা শ্রমিক নেতা সীতারাম বীন, মোহন রবিদাস প্রমুখ। এসব বিভিন্ন সড়কে শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে। চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাহী উপদেষ্টা ও কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রাম ভজন কৈরি বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনা করে ন্যূনতম মানবাধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার দিতে হবে। চা শ্রমিকের হাজিরা ১২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায় উন্নীত করার দাবি অনেক দিনের। বক্তারা বলেন, বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে চা শ্রমিকরা মাত্র ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে কোন মতেই সংসার চালাতে পারছেন না। আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসলেও আমাদের মজুরি বৃদ্ধি হচ্ছে না। ৩০০ টাকা মজুরি বৃদ্ধি না হলে কঠোর আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। ৩০০ টাকা মজুরি চুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে শনিবার থেকে চা শ্রমিকরা লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করেছে। গত বৃহস্পতিবার শ্রীমঙ্গলস্থ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচী ঘোষণা করেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল। একযোগে দেশের ১৬৭টি চা বাগানে মজুরী বৃদ্ধির দাবিতে এই কর্মবিরতি পালন চলছে। কর্মবিরতি পালনকালে সবক’টি চা বাগানে শ্রমিকরা প্রতিবাদ সমাবেশ, বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচীও পালন করছেন।
এদিকে চা-শ্রমিকদের চলমান আন্দোলনের সাথে সংহতি জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা শাখা। সংগঠনের সভাপতি নুরুল মোহাইমিন মিল্টন ও সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস সাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বর্তমান বাজারদরের সাথে সংগতিপূর্ণ মজুরি বৃদ্ধি করার দাবি জানিয়ে বলেন, দেশের সবচেয়ে নিষ্পেষিত ও অবহেলিত হলেন চা শ্রমিকরা। তাদের সর্বো”চ দৈনিক মজুরী ১২০ টাকা। একদিনের মজুরিতে এক লিটার সয়াবিন তেলও পাওয়া যায় না। অথচ চা-শ্রমিকদের শ্রমে উৎপাদিত ২৫০ গ্রাম চা-পাতার মূল্য বাজারে এক থেকে দেড়শ টাকা। চা-শিল্পের ১৬৮ বছরের ইতিহাসে চা-শ্রমিকদের মজুরি ১৬৮ টাকাও হয়নি। করোনাকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চা-শ্রমিকরা উৎপাদনে সক্রিয় থেকেছেন। তাই লাগামহীন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির এ সময়ে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে তিনশ টাকা করা হউক।
এদিকে বাংলাদেশ চা শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির এক বিবৃতিতে বলা হয়, বর্তমান বাজার দরের সাথে সঙ্গতি রেখে ছয়, সাত জন শ্রমিক সদস্যের পরিবারের ভরনপোষনের জন্য চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৬৭০ টাকা নির্ধারণের দাবি জানান।