খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পর এবার নিরাপদ খাদ্য আন্দোলনের সূচনা ঘটেছে। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারেও অন্তর্ভুক্ত ছিল বিষয়টি। আর তাই বিষয়টি সামনে চলে এসেছে জাতীয় ইস্যু হিসেবে। মানুষ খাওয়ার জন্য বাঁচে না, বরং বেঁচে থাকার জন্য সে খেয়ে থাকে। তবে দুঃখজনক হলো, কী খাচ্ছি- ভেজাল না বিশুদ্ধ এমন একটি প্রশ্ন প্রায়ই তাড়িত করে থাকে আমাদের প্রত্যেককে। কেননা, প্রায় সর্বত্র ভেজালের দৌরাত্ম্য ও দাপট। মাছ-মাংস-ডিম-দুধ-শাকসবজি প্রায় সবকিছুই রয়েছে সন্দেহের তালিকায়। প্রধানমন্ত্রী খাদ্যে ভেজালকে দুর্নীতি হিসেবে চিহ্নিত করে বলেছেন, সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ-মাদকের মতো এর বিরুদ্ধেও সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য সরকার পাঁচ বছর মেয়াদী একটি কর্মকৌশল প্রণয়ন করেছে, যা বাস্তবায়িত হচ্ছে পর্যায়ক্রমে। ভেজাল ও দূষণ সম্পর্কে অভিযোগ জানানো ও প্রতিকারের জন্য গঠিত হয়েছে কল সেন্টার। খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন এবং নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সারাদেশে কাজ করছে ৪৩৫টি কমিটি। গঠিত হয়েছে ৭১টি বিশুদ্ধ আদালত। ৩৩৫ জনবল নিয়ে কাজ শুরু করেছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। খাদ্যের মান নিশ্চিত করতে রাজধানীসহ সারাদেশে শুরু হয়েছে হোটেল-রেস্তরাঁর গ্রেডিং। এমনকি স্ট্রিট ফুড বা পথের খাবারকেও আনা হয়েছে এই প্রক্রিয়ায়।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিনিখাক), বাংলাদেশ রেস্টুরেন্ট ওনার্স এ্যাসোসিয়েশন (বিআরওএ), সিটি কর্পোরেশন এবং ভারতের আল কিউমারস কোম্পানির সহায়তায় রাজধানীর দশ হাজারের বেশি হোটেল-রেস্তরাঁর গ্রেডিংয়ের কাজ শুরু করেছে। এর জন্য তারা প্রাথমিকভাবে হোটেল রেস্তেরাঁর সার্বিক অবস্থা বোঝার জন্য ৩৫টি প্রশ্নের একটি চেকলিস্ট তৈরি করেছে। মূলত এর ভিত্তিতেই নিরূপিত হচ্ছে একটি হোটেল বা রেস্তরাঁর গ্রেডিং।
ইতোমধ্যে মতিঝিল-দিলকুশায় ৫১টি রেস্তরাঁকে গ্রেডিং প্রদান করা হয়েছে। দুঃখজনক হলো, গ্রেডিং দেয়ার পর দিনই এ গ্রেড প্রাপ্ত হোটেলে মিলেছে বাসি ও দূষিত খাবার। এ অবস্থা চলতে দেয়া যায় না কিছুতেই। ভেজালমুক্ত ও নিরাপদ খাদ্য এবং পানীয় প্রাপ্তিতে নিশ্চয়তার ক্ষেত্রে উদ্যোগটি যে যুগান্তকারী একটি পদক্ষেপ, তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে এর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিয়মিত নজরদারি ও তদারকি অত্যাবশ্যক। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ যদি শক্তিশালী কর্তৃপক্ষ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং হোটেল-রেস্তরাঁর মালিক কর্তৃপক্ষ যদি আন্তরিক হন, তাহলে এই গ্রেডিং পদ্ধতি নাগরিক জীবনে সুফল বয়ে আনলেও আনতে পারে।