মো: দিলশাদ মিয়া :
হযরত মুহাম্মদ (স:) বলেছেন – ”রোজা রাখো সুস্থ থাকবে”
রমজানের ফরজ রোজা ব্যতীত ও আরো ও রোজা রয়েছে। যেমন মান্নতে ওয়াজিব রোজা এবং সুন্নত ও নফল রোজা রয়েছে। রোজা রাখলে ক্ষুধা – পিপাসা কারণে দৈহিক কষ্ট হয়। এ কষ্টের বিনিময় আছে রোজার লক্ষ্য হলো-আল্লহর ভয় অর্জন, মুত্তাকি হওয়া, আল্লাহর সন্তোষ অর্জন, জান্নাত লাভ এবং জাহান্নাম হতে মুক্তি। এতো গেল, রোজার পারলৌকিক কল্যাণ। রোজার পার্থিব কল্যাণ অপরিসীম। এর মধ্যে সু-স্বাস্থ্য লাভ অন্যতম দিক। রোজা ও স্বাস্থ্য অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। রোজার মাধ্যমে স্বাস্থ্যের উপকার হয় এবং অনেক রোগ-ব্যাধির প্রতিরোধক ও আরোগ্যমূলক চিকিৎসা লাভ করা যায়। বর্তমান উন্নত চিকিৎসা বিজ্ঞান এ কথা স্বীকার। কিন্তু ১৪০০ বছর পূর্বে রোজার এরূপ বৈজ্ঞানিক ব্যাখার চিন্তা করাও সম্ভব ছিল না। চিকিৎসা বিজ্ঞানের স্বীকৃতি বহু পূর্বে রোজা পদ্ধতি হিসেবে চালু হয়েছে। তাহলে এটা কিসের প্রমাণ দেয়? ইসলাম যে মহবিজ্ঞানী আল্লাহর নিকট থেকে এসেছে, এটাই তার প্রমাণ।
এ পর্যন্ত আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের ব্যাখা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, রোজার মাধ্যমে ২১ প্রকার রোগের চিকিৎসা অর্জন করা যায়। আমি এ সামান্য কলামে তাই তুলে ধরার চেষ্টা করছি। যাতে করে সকলেই রোজার পারলৌকিক সাফ্যলের সাথে পার্থিব সাফল্য প্রসঙ্গে ও জেনে উপকৃত হতে পারি। প্রবাদ আছে বিধির – বিধান মানুষের কল্যাণ। রোজা একটি কষ্টকর ইবাদত হলে ও তাতে কল্যাণ রয়েছে অনেক। আমরা জানি যে কাজে কষ্ট বেশি সে কাজে কল্যাণ ও অধিক। এ মর্মে নবী কারীম (স:) বলেছেন- রোজা রাখো, সুস্থ থাকবে।
এটি একটি হাদীস। এর নিকট বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞান নতি- স্বীকার করেছে। কেননা রোজা মুখ ও স্বাস্থ্যের ভান্ডার হিসেবে প্রমাণিত। উক্ত হাদিসে রোজাকে সু-স্বাস্থ্যের কারণ বলা হয়েছে। যারা রোজা রাখে না, তারা রোজার মাধ্যমে স্বাস্থ্যের উপকারিতা পায়না। রোজার মাধ্যমে আজ পর্যন্ত ২১টি রোগের প্রতিরোধক রহস্য আবিষ্কত হয়েছে। জার্মানী – বর্তমান ফুটবল বিশ্বকাপ জয়ী দেশ, জার্মানীর এক স্বাস্থ্য ক্লিনিকের ফটকে লেখা আছে – রোজা রাখো স্বাস্থ্যবান হবে। এর নীচে লেখা আছে, মোহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ। খৃষ্টান জার্মানীসহ অন্যান্য খৃষ্টান চিকিৎসকেরা ও রোজার উপকারিতা ব্যাপারে বেশ কিছু গবেষণা করেছেন। বিশ্বের অনেক দেশের রোজার মাধ্যমে চিকিৎসা ক্লিনিক খোলা হয়েছে। এর মধ্যে অধিক প্রসিদ্ধ হল জার্মানীর ড. হেজিগ ব্লাহমার ক্লিনিক, ড. ব্রাশরাবজ ও ড. ওয়ালারের ক্লিনিক। রোজা কম খাওয়ার প্রশিক্ষণ কিন্তু রোজা ছাড়া ও ইসলাম কম খাওয়াকে প্রেরনা দেয়। নবী করীম (স:) বলেন- পেট ভর্তি করে খাওয়া অপেক্ষা মানুষের জন্য মন্দ দ্বিতীয় কোন কাজ নেই। আদম সন্তানের টিকে থাকার জন্য কয়েক লোকমা খাবারই যথেষ্ট। যদি তা না করে তাহলে পেটের এক-তৃতীয়াংশ খাবার, এক তৃতীয়াংশ পানি এবং অপর তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখা প্রয়োজন।
মানুষ সাধারণত ১২/১৪ ঘন্টা খাবার থেকে বিরত থাকতে পারে। এতে তেমন কোন কষ্ট ও দুর্বলতা অনুভব করে না। এ সময়টুকু রাত্রের ঘুমের সমপরিমাণ। রাত্রের ৭/৮ টায় এশার সময় খেলে পরের দিন সকাল ৭/৮ টায় নাস্তা পর্যন্ত ১২ ঘন্টা সময় না খেয়েই কেটে যায়। রোজার মধ্যে সময় আরো ২/১ ঘন্টা বেশি যোগ হয় ফলে, সেটা স্বাভাবিক। দেহে যে পরিমাণ ক্যালরি মজুদ থাকে তা ১২/১৬ ঘন্টা পর্যন্ত যথেষ্ট। রোজা রাখলে এবং খাবার গ্রহণ না করলে দেহের অভ্যন্তরে বিভিন্ন পদ্ধদিতে কাজ চলে। গ্লাইকোজেন দেহের ভেতরে পুঞ্জীভূত ¯েœহ ও ধমনীতে মওজুদ চর্বিকে কাজে লাগায়। ফলে, প্রথম পুঞ্জীভূত গ্লাইকোজেনের মওজুদ প্রভাব পড়ে। এটা শেষ হলে পুঞ্জিভূত ¯েœহের প্রভাব পড়ে। দেহের ভিতরে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করে সক্রিয়ভাবে সুপ্ত রোগগুলোর চিকিৎসা আরম্ভ করে। রোজার ফলে কী কী রোগের চিকিৎসা হয় এবং কীভাবে একজন মানুষ সু-স্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারে তা উল্লেখিত হাদিসকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে আলোচনা করার প্রয়োজন। জৈব বিষ ধ্বংস হয় – সারা বছর শরীরের ভিতরে যে জৈব বিষ জমা হয়, রোজার দাবদাহে তা জ্বলে যায় এবং রক্ত বিশুদ্ধ হয়। দেহে জৈব বিষ বেশী থাকা ক্ষতিকর। জৈব বিষের কারণে বিভিন্ন রোগ শোক দেখা দেয়। রোজা প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: ওজন ও মেদ-ভুঁড়ি এবং এযেইমার্স (ALZHEIMER’S) রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। রোজার ফলে হজম ও পরিপাক যন্ত্রগুলো বিশ্রাম লাভ করে পতিত জমির মতো নতুন শক্তি লাভ করে। রোজা কিডনীতে পাথর সৃষ্টিতে বাধা দেয়, চর্ম রোগ হতে মুক্তি পাওয়া যায়। বাত রোগের চিকিৎসা আমেরিকার চিকিৎসা বিজ্ঞানী ড. ম্যাক ভাডন বলেন – রোজার কারণে বাত রোগের আরোগ্য হয়। কলিজার Infection ও সেরে যায়। পাকিস্তানের প্রধান চিকিৎসক ডা: মোহম্মদ হোসেনেরও একই মত।
রক্তের কোলেষ্টরল কমায়, যাদের রক্তে চর্বি বেশী এক সপ্তাহ রোজা রাখলে কোলেষ্টেরল কমে আসবে। রোজার মাধ্যমে রক্ত স্বল্পতা ও রক্তশূন্যতা দূর হয়। রোজার মাধ্যমে ক্ষুধার অনুভূতি সৃষ্টি হলে দেহে সঞ্জিত লৌহ জাতীয় পদার্থ নির্গত হয় এবং তা রক্তের স্বল্পতা বা রক্তশূন্যতা পূরণ করে। কঠোর ¯œায়ু ব্যথার উপশম হয় মাত্র তিন সপ্তাহে সিয়াম সাধনা দ্বারা ¯œায়ু ব্যথার আরোগ্য হয়।
ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে আসে, রোজা ডায়াবেটিস রোগের জন্য বিরাট রহমত। কম খাবার গ্রহণ এবং দীর্ঘ সময় খাবার গ্রহণ না করায় শর্করার পরিমাণ কমে আসে। ফলে রোগ নিয়ন্ত্রিত থাকে। ঔষুধ সেবনকারী রোগীদের অনেকেরই ঔষুধ সেবনের প্রয়োজন হয় না। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে রোজা রেখে হাঁটলে ডায়বেটিস আরো নিয়ন্ত্রিত থাকে। যে সমস্ত ডায়াবেটিস রোগী Diet control এ সুস্থ আছেন তাদের জন্য রোজা একটি নিয়মিত। যারা অন্যান্য অবসস্থায় আছেন তাদেরকে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন।
রোজা সকল Infection এবং টিউমারের জন্য প্রতিরোধক মহিলাদের বিভিন্ন রোগের ওহভবপঃরড়হ কে ও প্রতিহত করে। মায়ের স্বাস্থ্য ভাল গর্ভের সন্তানের কোন ক্ষতি হয় না। রোজার কারণে দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সে কারণে আরোগ্য লাভ করা যায়। হায়াত বৃদ্ধি পায় ও বার্ধক্য দেরীতে আসে। রোজার মাধ্যমে পুরুষের হরমোন বাড়ে। ১৯৮৬ সনে পুরুষ হরমোন বিষয়ক ম্যাগাজিন Archives of Andrology তে জেদ্দায় বাদশা আব্দুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও হাসপাতালের মহিলা রোগ, ডেলিভারী ও বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণ বিষয়ক কন্সালটেন্ট ড. সামীর আব্বাস ও ড. আব্দুল্লাহ বাসালামার একটি গবেষণা চলেনি। তারা তাতেTestosteron, Prolaction, FSH ও LH হরমোনের মাত্রা জানার চেষ্টা করেন। পরীক্ষায় দেখা গেছে রমজানের মাসে FSH ও LH হরমোন অনেক বেড়ে গেছে।
দাঁত ও মাড়ির উপকার হয়, পেপটিক আলসার হ্রাস পায়, তারাবীর সালাত মেরুদন্ডের Flexibilily বাড়ায়, মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়, যৌনরোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়, রমজান মাসে পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে। আত্মহত্যার পরিমাণ কমে এছাড়া রোজ ¯œাায়ুতন্ত্র শান্ত থাকে রোজার মধ্যে দিনে ধুমপান, চা ও কফির মতো উত্তেজক জিনিস সেবন না করায় স্নায়ুতন্ত্র শান্ত থাকে। ফলে, লোকের মন মেজাজ ভাল থাকে এবং গঠনমূলক চিন্তা-ভাবনা করার সুযোগ বেশী পায়। উত্তেজিত ¯œায়ুতন্ত্র দিয়ে অনেক সময় আবেগ প্রবণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম শিক্ষক ড. পি. জি স্পসকী বলেন রোজার মাধ্যমে কালোজ্বর এবং দেহের ভেতরে অন্যান্য পুরাতন রোগ বাইরের হস্তক্ষেপ ছাড়াই ভালো হতে পারে। বৃটিশ ডা: তাশিন বলেন, প্রোটেস্ট্যন্ট খৃষ্টানরা বেশি ভোজন করে। তিনি রোজার মাধ্যমে তাদের চিকিৎসা করেন। তিনি অভিযোগ করেন যেসব ডাক্তাররা রোগীকে অধিক খাবার গ্রহণের কুফলের বিরুদ্ধে সতর্ক করে না তাদের কী সমাজ এবং আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে না?
জার্মানী ডাক্তার ফেডারিক হভম্যান বলেন, রোজার মাধ্যমে মৃগীরে ও আনসারের চিকিৎসা করা যায়। আমরা দেখেছি ভারতের নেহেরু গান্ধী গোটা জীবন রোজার অভ্যস্ত ছিলেন। তিনি তার অনুসারীদের বলতেন, রোজার মাধ্যমে আত্মসংযম বৃদ্ধি পায় এবং মানবতার পবিত্রতা হাসিল করে।
ইটালির শিল্পী মাইকেল এংলো তিনি ৯০ বছর বয়স পর্যন্ত ভাল স্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন। তিনি বলেন:- আমি প্রত্যেক বছর ১ মাস, প্রত্যেক মাসে ১ সপ্তাহ রোজা রাখছি এবং দিনে তিন বেলার পরিবর্তে দু -বেলা খাবার খাই।
রোজার মাধ্যমে দেহের পবিত্রতা অর্জন হয় এবং দেহের ক্ষতিকর জিনিসগুলো দূর হয়। দেহের জন্য ক্ষতিকর খাবার থেকে রক্ষার জন্য ড. এলানকোট রোজার মাধ্যমে চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করেন। আল্লাহ তালায় বলেন- আমরা পানি দ্বারা সকল জিনিসকে জীবিত রেখেছি। জোয়ার-ভাটার সময় মানুষের দেহ ও প্রভাবিত হয়। কেননা মানুষের গঠন প্রক্রিয়ার ৫০-৬০ ভাগ পানি। তাই রাসূল (স:) ১৩,১৪ও ১৫ তারিখের সেই প্রভাবকে কাটিয়ে তোলার জন্য রোজা রাখতেন। আমাদের মুসলিম ডাক্তারদেরকে রোজার উপর গবেষণা করে প্রমাণ করা উচিৎ যে আল্লাহর বিধান রোজা যে বৈজ্ঞানিকভাবে মানুষের জন্য উপকারী।