দেশ-গ্রামে একটি প্রবচন খুবই প্রচলিত ও পুরনো- সেই তো নথ খসালি, তবে কেন লোক হাসালি।… দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের দাবিদার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল তথা বিএনপির ক্ষেত্রে কথাটি শতভাগ প্রযোজ্য। শেষ পর্যন্ত সকল জল্পনা-কল্পনা, আজব-গুজবের অবসান ঘটিয়ে ২৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় বিএনপির নির্বাচিত চার সংসদ সদস্য সুড়সুড় করে শপথ গ্রহণ করেছেন স্পীকারের কাছে। শুধু শপথ নিয়েই ক্ষান্ত হননি, চলতি সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনে যোগদানও করেছেন। অথচ মাত্র দু’দিন আগে বিএনপিদলীয় এক সংসদ সদস্য স্বউদ্যোগে ও স্বেচ্ছায় শপথ গ্রহণ করায় তাকে বেইমান, বিশ্বাসঘাতক অভিধায় অভিহিত করে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। ভাগ্যের পরিহাস এই যে, শেষোক্ত চার সংসদ সদস্যের ক্ষেত্রে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা লন্ডনে পলাতক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সিদ্ধান্ত ও নির্দেশেই নাকি শেষ পর্যন্ত শপথ গ্রহণ করেছেন সংসদ সদস্য হিসেবে। শপথ নেয়া চার সদস্য আত্মপক্ষ সমর্থনে যেমন এই বক্তব্য দিয়েছেন, তেমনি এই ব্যাখ্যা দলের পক্ষ থেকেও দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব। এদিন তার নিজের শপথ গ্রহণের ব্যাপক জনশ্রুতি থাকলেও শেষ পর্যন্ত নেননি। এও বলা হয়েছে যে, এটি বিএপির রাজনৈতিক কৌশল। তবে ৯০ দিনের মধ্যে শপথ গ্রহণ না করায় তার আসন শূন্য ঘোষণা করেছেন স্পীকার। অতঃপর বিএনপির সংসদ সদস্যরা নাকি কারাবন্দী খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা, মুক্তি এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে অবতীর্ণ হবেন।
দেশব্যাপী ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা ও জনশ্রুতি অবশ্য অনেক আগে থেকেই ঘুরপাক খাচ্ছিল জনমনে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সংসদ সদস্য হিসেবে আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণের শেষ দিন ছিল ২৯ এপ্রিল। এটা একরকম নিশ্চিতই ছিল যে, এই সময়সীমার মধ্যে বিএনপির নির্বাচিত ছয় সংসদ সদস্য শপথ নিবেন তা সে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে হলেও। উল্লেখ্য, এর আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিত দু’জন সংসদ সদস্যও দু’দফায় শপথ নিয়েছেন। ঐক্যফ্রন্ট থেকে যথারীতি তাদের নাম কা ওয়াস্তে বরখাস্তও করা হয়েছে। এরপরও তারা দলের কাউন্সিলে যোগ দিয়েছেন। অল্প-বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা হলেও সবকিছুই চলেছে নিয়মমাফিক অথবা লোকদেখানো। একটা কথা সবাইকে বুঝতে হবে যে, তা তিনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনই হোক, অথবা হোক না কেন পলাতক তারেক রহমান, সংসদ সদস্যরা নির্বাচিত হয়েছেন জনসাধারণের ভোটে। সে অবস্থায় শপথ গ্রহণের ব্যাপারে এলাকার জনগণের চাপ এমনকি দাবি থাকা স্বাভাবিক ও সঙ্গত। নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা জাতীয় সংসদে থেকে এলাকার জনগণের সুখ-দুঃখ সমস্যা ও বরাদ্দ নিয়ে বক্তব্য তুলে ধরবেন। এক্ষেত্রে তারা অবশ্যই জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ। সরকারের এ ক্ষেত্রে কিছুই করার নেই। প্রধানমন্ত্রী বরং বলছেন, বিরোধী দলের নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা জাতীয় সংসদে যোগ দিয়ে প্রাণ খুলে কথা বলুন। কোন বাধা দেয়া হবে না।
মাঝখানে কথা রটেছিল যে, খালেদা জিয়ার প্যারোলের বিনিময়ে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের সদস্যরা শপথ গ্রহণ করতে পারেন। তাই বা হবে কেন? সরকার এ বিষয়টি বরাবরই প্রত্যাখ্যান এবং নাকচ করে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিষ্কার করে বলেছেন যে, খালেদা জিয়া একাধিক দুর্নীতির মামলায় সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক দন্ডি হয়ে কারাবাস করছেন। সেখানে তাকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। এরপরও যদি তার জামিন অথবা প্যারোলে মুক্তির প্রসঙ্গ আসে, তাহলে সেটির এখতিয়ার সম্পূর্ণ আদালতের, সরকারের নয়। যা হোক বলতেই হবে যে, বিএনপি শেষ পর্যন্ত জাতীয় সংসদে যোগ দিয়ে বিবেচনার পরিচয় দিয়েছে।