দেশে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ চলছে। কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৩৮-৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠছে। জনজীবনে রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠে গেছে। বিশেষ করে, নিম্ন আয়ের যেসব মানুষকে বাইরে রোদের মধ্যে কাজ করতে হয়, তাদের অবস্থা খুবই খারাপ। যেখানে-সেখানে পানি, শরবত ইত্যাদি পান করে প্রচুর মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। ফ্লু, শ্বাসকষ্টের রোগীও বেড়ে গেছে। হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। আবহাওয়াবিদদের মতে, এ অবস্থা আরো কয়েক দিন চলতে পারে। গরম আরো কিছুটা বাড়তে পারে। চিকিৎসকদের মতে, এ সময়টায় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি।
সাধারণত শিশু ও বয়স্করা এ পরিস্থিতিতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও এখন তীব্র দাবদাহ চলছে। কোথাও কোথাও স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখা হয়েছে। অসুস্থ হয়ে পড়া ব্যক্তিদের দ্রুত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশেও জরুরি ভিত্তিতে কয়েক দিনের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা যেতে পারে, তা না হলে বহু শিশু অসুস্থ হয়ে পড়বে। অনেক স্থানেই সুপেয় পানির সংকট তৈরি হয়েছে। ঢাকারও বিভিন্ন এলাকায় ওয়াসার পানি না পাওয়ার কিংবা কোথাও কোথাও পানিতে ময়লা ও দুর্গন্ধ থাকার অভিযোগ উঠেছে। অথচ তীব্র গরমে পর্যাপ্ত পানি পান করতে না পারলে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটতে পারে। আবার দূষিত পানি পান করাটাও বিপজ্জনক। ঢাকায় আইসিডিডিআরবি সূত্রে জানা যায়, এরই মধ্যে সেখানে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে।
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগামী দিনগুলোতে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ধারণার চেয়ে অনেক বেশি বেড়ে যেতে পারে। শুধু তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া নয়, সামগ্রিকভাবেই জলবায়ু চরমভাবাপন্ন হয়ে পড়বে। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, খরা, বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর তীব্রতা যেমন বাড়বে, তেমনি বাড়বে আক্রমণের সংখ্যাও। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশে এসবের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় যে ধরনের প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন ছিল, তা নেই বললেই চলে। আমরা আশা করি, তাপপ্রবাহের অবস্থা বিবেচনা করে কয়েক দিনের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখা যেতে পারে। হাসপাতালগুলো প্রস্তুত রাখতে হবে জরুরি রোগী ব্যবস্থাপনার জন্য। সুপেয় পানি সহজলভ্য করতে হবে। রোদ মাথায় নিয়ে যাঁরা মাঠে-প্রান্তরে কাজ করতে বাধ্য হন, তাঁরা যাতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম পান সে জন্য স্থানীয়ভাবে নিয়োগদাতাদের বাধ্য করার ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি জলবায়ুর চরম বৈরী অবস্থা আসার আগেই ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় আমাদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে হবে।