শিপন আহমদ ওসমানীনগর থেকে :
করোনা পজেটিভ এক ডাক্তার গত শুক্রবার বিকেলে থেকে রাত পর্যন্ত বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অসংখ্য রোগীর চিকিৎসা দেন। এ নিয়ে হাসপাতাল পাড়ায় নানা সমালোচনা হলে বিষয়টি কারো জানার বাকি থাকে না। এতে করে ওই দিন হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নেয়া রোগীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এসব রোগী ও তাদের স্বজনরা বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ এসএম শাহরিয়ারের প্রতি ক্ষোভ ঝেড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা মন্তব্য করতে দেখা গেছে। গত শনিবার এই বিষয়টি নিয়ে সিলেটের সিভিল সার্জন ডাঃ প্রেমানন্দ মন্ডলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি করোনা রিপোর্ট নিয়ে তাচ্ছিল্য করে দায়হীন জবাব দিয়ে বলেন, ওই বিষয়টা আমি জানি আর এটা নিয়ে ভাবনার তেমন কিছু নেই। করোনা টেস্টের কোনো ভিত্তি নেই, অনেক সুস্থ মানুষের পজেটিভ আসার পর দেখা যায় তারা অবাধে ঘোরাঘুরি করে আবার অনেক অসুস্থ মানুষের নেগেটিভ রিপোর্ট আসছে। রিপোর্ট পজেটিভ আসুক আর যাই আসুক ওদেরকে দিয়ে ডিউটি না করালো তো হাসপাতাল বন্ধ রাখতে হবে। চিকিৎসক সংকটের কারণে যদি করোনা পজেটিভদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে হয় তাহলে হাসপাতাল বন্ধ রাখাই ভাল এ কথার জবাবে তিনি বলেন- কারো কথায় তো হাসপাতাল বন্ধ রাখা যাবে না। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ এসএম শাহরিয়ারের নির্দেশে করোনা পজেটিভ ডাঃ দিয়ে রোগীদের চিকিৎসা ও করোনা রিপোর্ট নিয়ে সিভিল সার্জন ডাঃ প্রেমানন্দ মন্ডলের বেফাঁস মন্তব্যে সর্বত্রই তোলপাড় শুরু হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর উপজেলায় স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত কয়েকজন জানান, ডাঃ শাহরিয়ার বালাগঞ্জে যোগদানের পর থেকে সিভিল সার্জনের প্রত্যক্ষ মদতে দুই উপজেলার স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজনের সাথে বিমাতাসূলভ আচরণ, নানা, অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা করে আসছেন। স্বাস্থ্য বিভাগের এমন দায়িত্বশীল যায়গায় থেকে করোনা রিপোর্ট নিয়ে একজন সিভিল সার্জন এধরণের মন্তব্য করতে পারেন কি না? এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএমএর মহাসচিব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের কোষাধ্যক্ষ ডাঃ ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল বলেন, সিভিল সার্জন এধরণের বক্তব্য দিতে পারেন না। বিভ্রান্তমূলক বক্তব্য দেয়া তার ঠিক হয়নি এতে মানুষের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণার সৃষ্টি হবে। দায়িত্ব নিয়ে কথা বলা তার উচিত ছিল। এটা মোটেই সমীচিন নয়। বিষয়টি নিয়ে আমি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতনদের সাথে কথা বলব। বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান মফুর বলেন, সিভিল সার্জন যদি এধরণের মন্তব্য করে থাকেন তাহলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন বলে আমি মনে করি।
এদিকে, বালাগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আনহার আলী বলেন, সিভিল সার্জনের মন্তব্যে বুঝা গেল করোনার রিপোর্ট এগুলো লোক দেখানো। তাহলে দেশে যারা করোনায় মারা গেলেন তাদের কি করুনা ছিল না। আর হাসপাতালের কথা কি বলব সবার একটাই অভিযোগ হাসপাতালে গিয়ে কি করব সেখানে ডাক্তার পাওয়া যায় না। রাতে জরুরী বিভাগে গেলে দেখা যায় আয়া-বুয়ারা চিকিৎসা দেয়। ওসমানীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আনা মিয়া বলেন, বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের অধিনে ওসমানীনগরের স্বাস্থ্য বিভাগ পরিচালিত হওয়ায় ওসমানীনগরের রোগীরা বালাগঞ্জ হাসপাতালে গিয়ে সেবা নেন। করোনার কারণে সরকারি নির্দেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। করোনা আক্রান্ত হয়ে আমাদের অনেক প্রবীণ রাজনৈতিক নেতা, স্বজন-প্রিয়জন না ফেরার দেশে চলে গেছেন। হাসপাতালের ডাক্তাররা ডিউটি ফাঁকি দিয়ে শহরে আয়েশে বসে চেম্বার করে টাকা আয় করছেন, আর করোনা পজেটিভ চিকিৎসক দিয়ে রোগীর চিকিৎসা দিচ্ছেন এটা মেনে নেয়া যায় না। বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করেন তিনি।
ওসমানীনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি উমরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া বলেন, ওসমানীনগরের উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর চিকিৎসকদের নিয়ে বালাগঞ্জ হাসপাতালে ডিউটি করানোর কারণে উপস্বাস্থ্য কন্দ্রের চিকিৎসকরা তাদের নিজ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়মিত সময় দিতে পারেন না। এতে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র এলাকাগুলোর রোগীরা স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। উপজেলা সমন্বয় সভায় একথাগুলো আমি একাধিকবার তুলে ধরেছি। সিভিল সার্জনের এই মন্তব্য অনভিপ্রেত। আর করোনা পজেটিভ ডাঃ দিয়ে রোগীর চিকিৎসা দেয়া আত্মঘাতি ও সরকারকে বেকায়দায় ফেলার শামিল।