পর্দা নামলো তৃতীয় সিলেট চলচ্চিত্র উৎসবের

13

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ এর আয়োজনে মঙ্গলবার শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী তৃতীয় সিলেট চলচ্চিত্র উৎসবের পর্দা নেমেছে শুক্রবার। স্বাধীন ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণ কে উৎসাহ দেয়ার লক্ষ্যে গত দুবছর যাবত এ উৎসব আয়োজিত হয়। প্রথম দুদিন চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও কর্মশালা এবং তৃতীয় দিন সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। শেষে আরও একদিন বাড়িয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উৎসবস্থলে পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র (বাংলাদেশী) বিভাগে পুরস্কার জিতেছে ফারহা জাবিন পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘ড্রিড’, সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র (আন্তর্জাতিক) বিভাগে পুরষ্কার জিতেছে ভারতীয় নির্মাতা শ্রীরাম এসজি পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘খিলুয়ানা’। শ্রীরাম এসজি একইসাথে সেরা স্ক্রিপ্ট রাইটারের পুরষ্কার পেয়েছেন খিলুয়ানা চলচ্চিত্রের জন্য। এছাড়া সেরা প্রামাণ্য চলচ্চিত্রের পুরস্কার জিতেছে ভারতীয় নির্মাতা বিজয় চৌধুরী পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘ক্ষত’। শিশু চলচ্চিত্র নির্মাতা বিভাগে সেরা হয়েছে ফয়সাল আহমেদ পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘নীল’। ‘ইতিবৃত্ত কিংবা বাস্তবতার পুনরারম্ভ’ চলচ্চিত্রের জন্য সেরা চিত্রগ্রাহকের পুরস্কার জিতেছেন সুমন সরকার। ‘কথক মায়া’ চলচ্চিত্রের জন্য সেরা সম্পাদকের পুরস্কার জিতেছেন দেবাশীষ দাস। শুভ্রা গোস্বামী পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘ভালবাসা’ তে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতেছেন মৌসুমী হামিদ এবং শরত পারাইল পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘ফিলিংস’ এ অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার জিতেছেন চন্দন সিং রাজপুত।
বিজয়ী ও তাদের প্রতিনিধিদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মতিয়ার রহমান হাওলাদার। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক নাজিম উদ্দিন আহমেদ, চলচ্চিত্র সংসদের উপদেষ্টা শহীদুল্লাহ কায়সার, সরকার মোঃ ইব্রাহিম খলিল ও তৌফিকুর রহমান।
প্রধান অতিথি বিজয়ীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, সিলেট চলচ্চিত্র উৎসব স্বাধীনধারার তরুণ নির্মাতাদের জন্য একটা নতুন দুয়ার খুলেছে। এই উৎসব ইতিমধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। আগামীতে নতুন প্রজন্মের নির্মাতাদের স্বীকৃতি দিতে এই উৎসব ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও রাজধানীর বাইরে এমন আন্তর্জাতিক উৎসব চলচ্চিত্রের দর্শকশ্রেণী তৈরি করতে পারবে।
সমাপনী অনুষ্ঠান শেষে বিজয়ী চলচ্চিত্রগুলো প্রদর্শিত হয়।
মঙ্গলবার বেলা ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশাখী চত্বরে বেলুন উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ সায়েম উদ্দিন আহমেদ।
উৎসবের উদ্বোধনীর পর সকাল ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের কনফারেন্স কক্ষে ‘চলচ্চিত্রে গল্প বলা’ নিয়ে আয়োজিত কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন নির্মাতা আশরাফ শিশির, অর্ণব মিদ্যা, স্বরুপ আনন্দ ও সাংবাদিক সন্দ্বীপ রায় চৌধুরী।
বিকেল ৩ টায় উদ্বোধনী চলচ্চিত্র হিসেবে প্রদর্শিত হয় অর্ণব মিদ্য পরিচালিত ভারতীয় চলচ্চিত্র অন্দরকাহিনী। বিকেলে বেশ দর্শক সমাগম ঘটে উৎসবে। আগত দর্শকরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে জানান, সিলেটে এমন চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজনের ফলে আমরা ভাল চলচ্চিত্রগুলো দেখতে পাচ্ছি। আগত এক দর্শক জেবুননেছা রিনা জানান, আমি দুদিনে উৎসবে সবগুলো চলচ্চিত্র উপভোগ করবো।
আয়োজক সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ থেকে জানানো হয়, প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টা পর্যন্ত চলচ্চিত্র প্রদর্শনী চলে। এবার একই সঙ্গে দুটি ভেন্যুতে ( বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়াম ও কৃষি অনুষদের ৩য় তলায় কনফারেন্স রুম) চলে প্রদর্শনী।
এছাড়া শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশন ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের আয়োজনে উৎসব প্রাঙ্গনে শিশুদের জন্য আলোকচিত্র প্রদর্শনী ‘বায়োস্কোপ ৩’ অনুষ্ঠিত হয়। অনেক অভিভাবক আলোকচিত্র দেখাতে তাদের শিশুদের নিয়ে এসেছেন।
উল্লেখ্য, এবারের আসরে বিশ্বের ১১১ টি দেশ থেকে সল্প ও পূর্ণদৈর্ঘ্য ৩০৩৬ টি চলচ্চিত্র জমা পড়ে। যার মধ্যে থেকে বাছাইকৃত ৯৬ টি স্বল্পদৈর্ঘ্য ও চারটি পূর্ণদৈর্ঘ্য মিলেয়ে মোট ১০০ টি চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে। জুরি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশী চলচ্চিত্র নির্মাতা আশরাফ শিশির, অভিনেতা মনোজ কুমার, নির্মাতা মুক্তাদির ইবনে সালাম ও ভারতীয় চলচ্চিত্র সমালোচক সিদ্ধার্থ মাইতি। উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছে বিপনীবিতান মাহা। বিজ্ঞপ্তি