পবিত্র রমজান মাস শুরু হতে এখনো প্রায় দুই সপ্তাহ বাকি। এরই মধ্যে বাজারে শুরু হয়ে গেছে নানা রকম কারসাজি। রমজানে দাম বেড়েছে এমনটা যাতে কেউ বলতে না পারে সে জন্য আগেই দাম বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে মাছের দাম কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। সবজির দামও বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। প্রায় সব সবজির দামই প্রতি কেজি ৬০ টাকার ওপরে। গরুর মাংসের দাম দিন দশেক আগেই বাড়িয়ে প্রতি কেজি ৫৫০ টাকা করা হয়েছে। মসলার দামও ঊর্ধ্বমুখী। অথচ বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রায় কোনো উদ্যোগই চোখে পড়ে না।
প্রতিবছরই রমজান মাসের আগে আগে নানা ধরনের আশ্বাস দেওয়া হয়। মজুদ পর্যাপ্ত আছে, দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই, ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে দাম বাড়াতে চাইলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে ইত্যাদি। বাস্তবে প্রতিবছরই রমজানে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের নাভিশ্বাস ওঠে। এবারও তার ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে না। বাজারে প্রায় প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দামই বাড়ছে। প্রতিবছর সিটি করপোরেশন থেকে গরুর মাংসসহ কিছু খাদ্যপণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত দাম কার্যকর করার ব্যাপারে সিটি করপোরেশনগুলোর কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না। টিসিবি এরই মধ্যে ডাল, চিনি ও তেল—এই তিনটি পণ্য নিয়ে মাঠে নেমেছে, তবে তা এতটাই সীমিত যে বাজারে তার কোনো প্রভাবই পড়ছে না।
বাজারে পণ্যের দাম বাড়া নিয়ে ব্যবসায়ীরা নানা রকম কাহিনি শোনায়, বাস্তবের সঙ্গে যার কোনো মিলই নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে যেসব পণ্যের দাম কমছে সেসব পণ্যের দামও এ সময় বাড়তে দেখা যায়। বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, রমজানের অতিরিক্ত চাহিদাকে পুঁজি করে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীর অতিরিক্ত মুনাফার লোভই রমজানে মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের কোনো নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা নেই বললেই চলে। টিসিবির মাধ্যমে বাজারে হস্তক্ষেপ আরো বাড়ানো, নিয়মিত বাজার মনিটরিং এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হলে বাজার কিছুটা স্থিতিশীল থাকত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। শুধু মূল্যবৃদ্ধিই নয়, বাজারে যেসব খাদ্যদ্রব্য পাওয়া যাচ্ছে, তার মান নিয়েও রয়েছে অনেক সংশয়। ক্রেতাদের অভিযোগ, বেশির ভাগই নিম্নমানের এবং ভেজালযুক্ত। এসব কিনে তাঁরা প্রতারিত হচ্ছেন। জনস্বাস্থ্যেও তার বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে, ভোক্তা তথা নাগরিকদের অধিকার রক্ষা করা। ক্রেতারা যাতে প্রতারিত না হন তা নিশ্চিত করা। সরকারের শীর্ষস্থানীয়দের আশ্বাস আমরা অবশ্যই পেতে চাই, একই সঙ্গে তার বাস্তবায়নও দেখতে চাই। আমাদের বাজারের চরিত্র তাদের অজানা নয়, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা আশা করি, রমজান উপলক্ষে অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি যেকোনো মূল্যে রোধ করা হবে।