সারা দেশে, বিশেষ করে ঢাকায় অগ্নিকা- মোকাবেলায় সরকার ধারাবাহিকভাবে কাজ করে গেলেও সম্প্রতি বনানী ট্র্যাজেডিসহ বেশ ক’টি ভবনে ও মার্কেটে আগুন লাগার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। এতে জনমনে স্বস্তি ও আস্থা ফিরবে বলে আশা করা যায়। চলতি মাসেই রাজধানীর পুরান ঢাকার কেমিক্যাল মার্কেটের পার্শ্ববর্তী আরমানিটোলা এলাকায় একটি ফায়ার স্টেশন স্থাপন করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে ঢাকায় এগারোটি আধুনিক ফায়ার স্টেশন স্থাপন করা হবে। এছাড়াও সারাদেশে উপজেলা পর্যায়ে স্থাপন করা হচ্ছে ৫৬৫ ফায়ার স্টেশন। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, এরই মধ্যে ৪০৬ উপজেলার ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে এবং বাকি ১৫৯টি স্টেশন নির্মাণের কাজও চলমান। ফায়ার স্টেশনগুলোতে অত্যাধুনিক অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রসহ ফায়ার সার্ভিসের দক্ষ জনশক্তি বাড়ানোর লক্ষ্যে ট্রেনিং দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সক্ষমতা আরও বাড়ানোর মহাপরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স দুর্যোগ-দুর্বিপাকে সামর্থ্যরে সবটুকু দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এমনকি অনেক সময় বাহিনীর সদস্যরা নিজেদের নিরাপত্তার দিকেও পূর্ণ দৃষ্টি দেন না। অগ্নিকবলিত মানুষকে বাঁচানোই থাকে তাদের প্রধান লক্ষ্য। গত এক দশকে অনেকটাই বদলেছে দমকল বাহিনী। যুক্ত হয়েছে সুউচ্চ ক্রেন, ল্যাডার, ফায়ার বল, কুশন, কেমিক্যাল টিমসহ নানা আধুনিক সরঞ্জাম। এটা ঠিক যে, উন্নত বিশ্বের প্রায় সব ধরনের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস। তবে সংখ্যায় কম, সেটিও অনস্বীকার্য। যেমন ঢাকায় অন্তত ১০টি ল্যাডার প্রয়োজন হলেও আছে ৫টি। পানি সঙ্কট দূর করতে শহরের বিভিন্ন জায়গায় ইতোমধ্যে ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। পাশাপাশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণকে। স্বেচ্ছাসেবক, বহুতল ভবন ব্যবহারকারী ও জনসাধারণের মাঝে বছরে প্রায় দেড় লাখ মানুষকে আগুন নিয়ন্ত্রণ প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ফায়ার সার্ভিস।
কোন কারণে আগুন লাগতে পারে- এমনটা ভেবে নিয়েই আধুনিক ভবনে অগ্নিপ্রতিরোধ বা অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা গ্রহণ করাটাই নিয়ম। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট এবং ধূমপানের কারণে সিগারেটের না নেভানো আগুন থেকে আগুন লাগা এবং তা ছড়িয়ে পড়ার ঘটনাই বেশি ঘটতে দেখা যায়। ফলে আগুন লেগে গেলে সে আগুন নেভানোর সক্ষমতা থাকা আবশ্যক। ফায়ার সার্ভিসের জরিপ প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে ঢাকা মহানগরীর ৯৮ ভাগ হাসপাতাল ও ক্লিনিকই রয়েছে অগ্নিঝুঁকিতে। যে কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য পূর্ব প্রস্তুতির কোন বিকল্প নেই। এতে ফায়ার সার্ভিসের কাজ কিছুটা সহজ হয়ে আসে।
যে কোন বহুতল ভবনে আগুন নেভানোর জন্য উঁচু মই বা ফায়ার ল্যাডারসহ ফায়ার সার্ভিসের আধুনিক যন্ত্রপাতি যেমন জরুরী তেমনি প্রতিটি ভবনের নিজস্ব হাইড্রেন্ট বা জলাধার, ফায়ার এক্সিট বা জরুরী নির্গমন পথ এবং তাৎক্ষণিক ব্যবহারের জন্য প্রতিটি ভবনের নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রতিটি বহুতল ভবন, কল-কারখানায়, নগর-শহর-বন্দরের নাগরিকদের অগ্নিদুর্ঘটনা মোকাবিলার প্রশিক্ষণের আওতায় আনা জরুরী। একই সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের তত্ত্বাবধানে দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ তরুণ প্রজন্মকে স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী গড়ে তুলতে হবে।