পুঁজিবাজারে দরপতন অব্যাহত। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য করণীয় নির্ধারণ করতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জরুরি বৈঠক করেছেন; কিন্তু ফলোদয় হয়নি। দরপতন থামেনি, বরং আরো বেড়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন এক বছর আগে যেখানে ছিল, সেখানেই ফিরে গেছে। গত বুধবার লেনদেন হয়েছে মাত্র ৩০০ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দরপতন হয়েছে, লেনদেন কমেছে। কেন এ রকম হচ্ছে? সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, শীর্ষস্থানীয় বিনিয়োগকারীরা পরিকল্পিতভাবে লেনদেনে নিষ্ক্রিয় থাকছে, যার ফলে দরপতন ঘটছে। পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভূমিকা নিয়েও তারা সন্দিহান, বিক্ষুব্ধ। তারা আস্থাহীনতায় ভুগছে।
ডিএসইর হিসাব পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত বুধবার পর্যন্ত সাত দিনে পুঁজিবাজারের মূলধন ব্যাপক হারে কমেছে। গত ১ এপ্রিল ডিএসইতে বাজার মূলধন ছিল চার লাখ ১৩ হাজার ২৬০ কোটি সাত লাখ টাকা; বুধবার তিন লাখ ৯২ হাজার ৮৯৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকায় দাঁড়ায়। অর্থাৎ সাত দিনে মূলধন কমে ২০ হাজার ৩৮০ কোটি ২৪ লাখ টাকা। সেদিন ডিএসইতে লেনদেন হয় ২৭৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। সূচক কমে ৫৭ পয়েন্ট। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩৬৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা আর সূচক কমেছিল ৫৩ পয়েন্ট। অন্যদিকে সিএসইতে লেনদেন হয় ১২ কোটি ১০ লাখ টাকা। সূচক কমে ৯৯ পয়েন্ট। আগের দিন লেনদেন ছিল ১৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা, সূচক কমেছিল ৯৯ পয়েন্ট।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ডিএসইর শীর্ষস্থানীয় ব্রোকাররা দরপতন ঠেকানোর উপায় ঠিক করার লক্ষ্যে জরুরি বৈঠকে বসেছিল গত মঙ্গলবার। বৈঠকে তারল্যসংকট, নঞর্থক আইপিও (ব্যাড আইপিও), লভ্যাংশ ও বিনিয়োগকারীর আস্থাহীনতাপ্রসূত বিক্রয় (প্যানিক সেল) বাড়ার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। সেদিন বিকেলেই পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কশিমন (বিএসইসি) সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করে। কিন্তু দফায় দফায় বৈঠক করা হলেও অবস্থার উন্নতি হয়নি, বরং পতন আরো ত্বরান্বিত হয়েছে। অব্যাহত পতনের ফলে ব্রোকাররা, বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বিক্ষুব্ধ। তারা বলছে, বিএসইসি দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট নয়। তারা দায়িত্বে অবহেলা করছে; সরকারপ্রধানের সঙ্গেও প্রতারণা করছে। ফলে দেশের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০১০ সালের মতো আরেকটি বড় ধস দেখা দেবে।
পুঁজিবাজারের স্বাস্থ্যের ওপর রাষ্ট্রের অর্থনীতি অনেকাংশে নির্ভরশীল। পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থায় ধস নামলে অর্থনীতিতে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এর রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াও নেতিবাচক। বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সরকারের তৎপর হওয়া জরুরি বলে আমরা মনে করি।