মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ১১ লাখ ছাড়িয়েছে। এদের বড় অংশেরই স্থান হয়েছে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলায়। এ দুই উপজেলার সাড়ে পাঁচ লাখ স্থানীয় বাসিন্দা কার্যত অসহায় সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে। তাদের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুঃখ-কষ্ট ও দুর্ভোগ। এখানকার বনাঞ্চল এরই মধ্যে প্রায় নাই হয়ে গেছে। স্থানীয়দের বহু কৃষিজমিও চলে গেছে তাদের দখলে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে দিনমজুর শ্রেণির মানুষ। তাদের কাজ নেই বললেই চলে। মজুরিও অনেক কমে গেছে। ছোটখাটো কলকারখানা, দোকানপাট, হোটেল-রেস্তোরাঁয় আগে স্থানীয় অনেকের কাজ হলেও এখন রোহিঙ্গারা সেসব কাজ নিয়ে নিচ্ছে। কম পয়সায় পাওয়া যায় বলে মালিকরাও তাদেরই নিয়োগ দিচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি স্থানীয়দের বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। চুরি বেড়ে যাওয়ায় গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি পালনও প্রায় বন্ধ হতে চলেছে। এ অবস্থায় অনেকে এলাকা ছেড়ে চলে গেছে, অনেকে যাওয়ার কথা ভাবছে। কারণ তারা জানে না, কবে এ সমস্যার সমাধান হবে কিংবা আদৌ হবে কি না?
সর্বশেষ ২০১৭ সালে সবচেয়ে বেশি রোহিঙ্গা এসেছে বাংলাদেশে, সাত লাখের বেশি। মিয়ানমারে সেনাবাহিনী যখনই নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, তখনই তারা দলে দলে বাংলাদেশে চলে আসে এবং উঠে মূলত টেকনাফ ও উখিয়ায়। এর আগে ১৯৭৯ ও ১৯৯১ সালে রোহিঙ্গারা বড় সংখ্যায় বাংলাদেশে এসেছিল। পরবর্তীকালে তাদের একটি অংশ মিয়ানমারে ফিরে গেলেও অনেকেই থেকে যায় বাংলাদেশে। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পালিয়ে আসা দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। ফলে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের প্রকৃত সংখ্যা কত, তা নির্ণয় করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেকে কক্সবাজার থেকে দেশের অন্যান্য এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। এই রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে মিয়ানমার বরাবরই টালবাহানার আশ্রয় নিয়েছে এবং এখনো তা করছে। বিশ্বসম্প্রদায়ও এ ব্যাপারে মিয়ানমারের ওপর কার্যকর চাপ সৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়েছে। এরই মধ্যে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে বাংলাদেশের কাছে। এই স্বীকৃতি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোহিঙ্গাদের অবাধে চলাফেরা, কর্মসংস্থানসহ বেশ কিছু অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশে তাদের স্থায়ীভাবে থেকে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। বস্তুত মিয়ানমারও তাই চাইছে। তারা চাইছে, বিতাড়িত রোহিঙ্গারা যাতে আর কখনো মিয়ানমারে ফিরতে না পারে।
বাংলাদেশ একটি ছোট্ট ভূখণ্ড। লোকসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। অর্থনীতিরও অত্যন্ত নাজুক অবস্থা। এ অবস্থায় বাংলাদেশের পক্ষে এত বড় ঝুঁকি নেওয়া কি কোনোভাবেই সম্ভব? সরকারকে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রত্যাবাসনের আগে পর্যন্ত টেকনাফ ও উখিয়া থেকে কিছু রোহিঙ্গাকে দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে। স্থানীয়দের দুর্ভোগ কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে।