আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মোফাস্সিরে কোরআন আল্লামা জুনায়েদ আল হাবীব বলেছেন, ৯৫ ভাগ মুসলমানের দেশ আমাদের এ বাংলাদেশ। এ দেশ নিয়ে চিন্তা করার অধিকার সবার রয়েছে। কিন্তু আমরা আলেমরা যদি দেশ নিয়ে চিন্তা করি তাহলে বলা হয় আমরা স্বাধীনতা বিরোধী, আমরা নাকি শুধু মসজিদ-মাদ্রাসা নিয়ে বসে আছি। আমরা যদি কথা বলি আমাদের বলা হয় আমরা নাকি যাকাত, ফিতরা আর কোরবানীর চামড়া কালেকশনে ব্যস্ত রয়েছি। আমরা যদি স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলি আমাদের বলা হয় আমরা শুধু মানুষের বাড়ী গিয়ে দাওয়াত খেতে ব্যস্ত। আমি বলি আমরা শুধু মসজিদ, মাদ্রাসা আর দাওয়াত খাইনা। আমরা আলেমরাই এদেশের স্বাধীনতর পক্ষের শক্তি। আজ যদি দেশের স্বাধীনতার উপর আক্রমণ আসে তাহলে দেখা যাবে যাদের পিএস-এর গাড়ীতে টাকার বস্তা পাওয়া যায় তাদের কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তারা লাফ দিয়ে বর্ডার পাড়ি দিয়ে তাদের দাদার কোলে বসে পড়বে। কিন্তু আমরা দেশবাসী বা আলেমরা কোথায় যাবে তা নিয়ে তাদের মাথা ব্যথা নেই। সাধারণ জনগণ বা আলেমরা যদি বর্ডার পাড়ি দিতে চাই তাহলে ফেলানির মত গুলি করে ঝুলিয়ে রাখা হবে।
গতকাল বুধবার দুপুরে গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের শিলঘাট লম্বাগাঁও জামে মসজিদের উদ্যোগে তাফসীর মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরো বলেন পবিত্র হজ্ব, তাবলীগ ও বিশ্ব মানবতার মুক্তিদূত হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-কে নিয়ে মুরতাদ লতিফ সিদ্দিকীর কটুক্তির প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি আরো বলেন ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি। এ পাঁচ ভিত্তির একটি কেউ অস্বীকার করলে সে মুরতাদ কাফের। এতে কোন সন্দেহ নেই। আর ঐ মুরতাদকে যদি কেউ মুরতাদ বলে স্বীকার না করে তাহলে সেও মুরতাদ।
বিশ্ব মুসলমানদের দ্বিতীয় জমায়েত বিশ্ব ইজতেমার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন আমাদের দেশের কোন আলেম, ওলামা, জাতীয় মসজিদের খতিব বা মন্ত্রী এমপির সুপারিশে এদেশে বিশ্ব ইজতেমার জমায়েত অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। সুদূর দিল্লিতে বসে দিল্লির নেজাম উদ্দিন বুজুর্গানে দ্বীনের পরামর্শ নিয়ে বাংলাদেশে বিশ্ব ইজতেমার স্থান নির্ধারণ করেছেন। বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্র থাকা সত্বেও বাংলাদেশে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠানের একমাত্র কারন বাংলাদেশ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের দেশ। এদেশে বিশ্ব ইজতে অনুষ্ঠিত হলে যে সুফল আসবে অন্য কোথাও তা হবে না। এটা বাংলাদেশের মুসলমান ও দেশের স্বাধীনতার একটি ঐতিহ্য। কিন্তু লতিফ সিদ্দিকী বলে সে তাবলীগ জামাতের বিরোধী। বাংলাদেশের রাষ্ট্র প্রধান থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীও তাবলীগ করে। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী বা বিরোধী দলীয় নেত্রী তাবলীগে গেলে আগের দিন থেকে পেপার পত্রিকায় ফোলাও করে তুলে ধরা হয়ে থাকে। এতে থেকে বুঝা যায় সবাই তাবলীগ করে আর ঐ সরকারের মন্ত্রী হয়ে লতিফ সিদ্দিকী তাবলীগের বিরোধীতা করে। তাবলীগ বিরোধী লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যে আজ তাবলীগ জমাতের পক্ষের শক্তি মাঠে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। কিন্তু যারা রবিউল আউয়াল এলে শ্লোগান দিতে রাস্তায় নেমে পড়ে লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যে তারা খুব খুশি। আমরা আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি বা যে কোন দল করতে পারি। কিন্তু আমাদের পরিচয় একটি, আমরা মুসলমান। ইসলামের উপর আঘাত আসলে আমাদের সকলকে দ্বীন রক্ষার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
৫ মে শাপলা চত্বরে নৃশংস হত্যার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ইসলাম জিন্দা হৌতাহে শাপলা চত্বর কি বা’দ। ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শাপলা চত্বরের সংগ্রামের পর। শাপলা চত্বরে ঝরে যাওয়া মুসলামনদের রক্ত পৃথিবীর ইসলামের ইতিহাসের দ্বিতীয় কারবালা। যা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
শিলঘাট দারুল আরক্বাম মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা আব্দুল মতিন নাদিয়ার সভাপতিত্বে ও লম্বাগাঁও জামে মসজিদের ইমাম মুফতী মাওলানা আতিকুর রহমানের পরিচালনায় অন্যান্যের মধ্যে তাফসীর পেশ করেন মাওলানা বশির আহমদ বি-বাড়িয়া, মাওলানা দেলওয়ার হোসাইন তাহিরপুরী, মাওলানা আজিজুর রহমান সিরাজ।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকাদক্ষিণ মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা এনামুল হক, মাওলানা খালেদ আহমদ, খাদিজাতুল কুবরা মহিলা মাদ্রাসার মুহতামিম ক্বারী মাওলানা মুখতার আহমদ, সুনামপুর মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আব্দুল করিম কাসিমী, মাওলানা ফয়ছল আহমদ, শিলঘাট হাফিজিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম হাফিজ রশিদ আহমদ, ছাত্রনেতা মাওলানা সাইফুর রহমান, হেফাজতে ইসলাম নেতা আফসর আহমদ চৌধুরী প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি