পেঁয়াজের বাজার দর নিয়ন্ত্রণ হোক

107

সাম্প্রতিক দুই-আড়াই দশকে শাকসবজি ও আনাজপাতির বাণিজ্যিক উৎপাদন বেড়েছে। বেশির ভাগের চাষ আগেও হতো; মূলত নিজস্ব প্রয়োজন মেটাতে এসব চাষ করত কৃষকরা। অতিরিক্তটুকু বিক্রি করে দেওয়া হতো। আবার কিছু এলাকায় কিছু ফসল শুধু বাণিজ্যিক লক্ষ্যে উৎপাদিত হয়—কোথাও মরিচ, কোথাও আলু, কোথাও পেঁয়াজ, কোথাও টমেটো, শসা, গাজর প্রভৃতি। এসবের চাষে প্রযুক্তিগত সহায়তা ও আনুষঙ্গিক পরামর্শ দিয়ে থাকেন সরকারি কৃষিবিদরা। উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে কৃষকদের আয়-রোজগার ভালোই হয়, যদিও কাম্য মূল্য কালেভদ্রে মেলে। কারণ মধ্যবর্তী বিপণনকারীদের দর নির্ধারণে সরকারি দপ্তরের ভূমিকা নীতিমালা অনুযায়ী হয় না। আমদানিকারকরা আরেক সমস্যা; দেশীয় উৎপাদন সন্তোষজনক হওয়া সত্ত্বেও তারা সংশ্লিষ্ট পণ্য আমদানি করে। ফলে কৃষকরা বঞ্চিত হয়। বিপণনে এবং মূল্য নির্ধারণে ও নিয়ন্ত্রণে সরকারি ভূমিকা খুব কার্যকর নয় বলেই এমন হয়। বিশেষ অবস্থায় বিশেষ দায়িত্ব পালনের কাজটিও ঠিকমতো করা হয় না। তখন কৃষকরা বিপাকে পড়ে।
মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষক ‘সুখসাগর’ নামের পেঁয়াজ উৎপাদন করে ভালোই আয়-রোজগার করে। অনেকের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। এ রকম একটি গ্রাম শিবপুর। প্রতিদিন ২৫-৩০টি ট্রাকে পেঁয়াজ বোঝাই করে ব্যবসায়ীরা নিয়ে যান দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। নানা ধরনের কর্মসংস্থানও হয় এই পেঁয়াজ চাষকে কেন্দ্র করে। কিন্তু এবার মহাবিপাকে পড়েছে পেঁয়াজ চাষিরা। প্রতি কেজি পেঁয়াজ উৎপাদনে তাদের খরচ হয়েছে প্রায় সাত টাকা। কিন্তু বিক্রি করতে হচ্ছে চার থেকে সাড়ে চার টাকা কেজি দরে; গড়ে লোকসান তিন টাকা। না বেচেও উপায় নেই। কারণ ভালো দামের আশায় জমিতে পেঁয়াজ রেখে দিলে তা ফেটে যায়। ফাটা পেঁয়াজ বিক্রি হয় না। ভরা মৌসুমেও ভালো দাম না পাওয়ার আরেক কারণ ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি। এসব কারণে শিবপুর গ্রামের পেঁয়াজ চাষিরা ক্ষতির মুখে পড়েছে। গত বছর যে পেঁয়াজ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে, এবার তা বিক্রি করতে হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা মণ দরে। বিঘাপ্রতি ক্ষতি ২০ হাজার থেকে ২২ হাজার টাকা।
বাজারদরে মৌসুমভেদে এদিক-ওদিক হতেই পারে। তবে তা যেন উৎপাদন খরচের নিচে নেমে না যায়, সেটি দেখার দায়িত্ব বাজারদর নির্ধারণ ও বাজার পরিবীক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তাদের। মধ্যস্বত্বভোগীদের কর্মকাণ্ডেও নজর রাখা দরকার। আমদানিকারকরাও দরপতনে বড় ভূমিকা রাখে। উৎপাদকরা যাতে ন্যায্য মূল্য পায়, তাদের যাতে ক্ষতি না হয়, সে লক্ষ্যে বাজারদর নির্ধারণ ও মানা হচ্ছে কি না দেখার জন্য বাজার পরিবীক্ষণ করা হলে উৎপাদকরা ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে।