এম এম ইলিয়াছ আলী, শান্তিগঞ্জ
পিছিয়ে পড়া সুনামগঞ্জবাসীকে এগিয়ে নিতে বর্তমান সরকারের বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প সুনামগঞ্জ বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজ নিমার্ণ কাজ চলমান, সেই সাথে অস্থায়ী ক্যাম্পসে পাঠদান অব্যাহত ছিল। দীর্ঘ ২ বছর অস্থায়ী ক্যাম্পাসে পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ।
আজ রবিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে নিজস্ব ক্যাম্পাসে পাঠদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন, সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রী আলহাজ্ব এম এ মান্নান এমপি।
সুনামগঞ্জ বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ ২ বছর ধরে শান্তিগঞ্জ উপজেলার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে সুনামগঞ্জ বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। এর আগে ২০১৬ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রী (তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী) এম এ মান্নান এমপি হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জে একটি মেডিকেল কলেজ ও একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুরোধ জানালে একনেক সভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে একমত পোষণ করেন। ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বরে একনেকের চেয়ারপার্সন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, সুনামগঞ্জ- নামে প্রায় ১১শ’ ৭ কোটি ৮৭ হাজার টাকার প্রকল্পটি অনুমোদন দেন। পরবর্তীতে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কাঠইর মৌজায় ‘বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, সুনামগঞ্জ’-এর জন্য সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক ঘেঁষে মদনপুর-দিরাই সড়কের উভয় পাশেই মদনপুর পয়েন্ট এলাকায় ২০২০ সালের মার্চ মাসে ৩৫ একর জমির অধিগ্রহণ করা হয়। পরে শুরু হয় মেডিকেল কলেজের স্থাপনা নির্মাণকাজ। যা পুরোদমে চলমান রয়েছে।
নির্মাণাধীন ‘বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, সুনামগঞ্জ’-এর জন্য মোট ২৯টি ভবন নির্মাণ করা হবে। এর ভেতরে থাকবে খেলার মাঠ ও পুকুর। এর আওতায় একটি হাসপাতাল ভবন, একটি একাডেমিক ভবন, একটি করে ছাত্র ও ছাত্রীনিবাস, একটি করে পুরুষ ও মহিলা ইন্টার্ন চিকিৎসক ডরমেটরি, অবিবাহিত পুরুষ ও মহিলা চিকিৎসকদের জন্য একটি করে আবাসিক ভবন, স্টাফ নার্স ডরমেটরি, জরুরি সেবায় নিয়োজিত পুরুষ ও নারী কর্মচারীদের জন্য একটি করে ভবন, একটি নার্সিং কলেজ ভবন, একটি নার্সিং শিক্ষার্থী নিবাস, একটি মর্গ, ব্যায়ামাগার, মসজিদ, বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন, কাপড় ধোয়ার জন্য লন্ড্রি, অধ্যক্ষ ও পরিচালকের বাসভবন, বিভিন্ন আয়তনের ৬টি আবাসিক ভবন, পাবলিক টয়লেট, মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ভবন, স্যুয়ারেজ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ভবন, হাসপাতাল ভবন।
আরো জানান জায়, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ৫০জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির পর মেডিকেল কলেজটির পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে তিনটি ব্যাচে মোট ১৩৫জন শিক্ষার্থী দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান আছে। অস্থায়ী ক্যাম্পাসে ১ম ব্যাচের ৫০ জন শিক্ষার্থী ২০২১ সালের ২২ মে থেকে ভর্তি শুরু এবং এই বছরের ১ আগস্ট থেকে করোনা মহামারীর কারণে শিক্ষার্থীদের অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করেন কর্তৃপক্ষ। এর পরে এই বছরই সেপ্টম্বর মাসে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে আনুষ্ঠানিক ভাবে পাঠদান শুরু করেন। বর্তমানে মেডিকেল কলেজটিতে ১০টি বিভাগ ও ২০ জন শিক্ষক রয়েছেন।
আজ রবিবার সকাল ১০টায় সুনামগঞ্জ বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজের সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কাঠইর এলাকায় নির্মিত একাডিমেক ভবনে স্থায়ী ক্যাম্পাসে একাডেমিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন, পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি।
শান্তিগঞ্জ উপজেলার সদ্য বিদায়ী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জসিম উদ্দিন শরিফী জানান, সুনামগঞ্জ বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ তার নিজস্ব ভবনে যাচ্ছে এটা খুই আনন্দের খবর। এলাকার কৃতি সন্তান উন্নয়নের রূপকার মাননীয় পরিকল্পানা মন্ত্রী এম এ মান্নান এমপির প্রচেষ্ঠায় আজ জেলাবাসীর স্বপ্নের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হয়েছে। আমি আশা করি খুব দ্রæতই এবার আমাদের উপজেলা ৫০শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিও তাদের ইনডুর সেবা চালু হবে। আমি থাকতে অনেক চেষ্টা করেছি। আমাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির সকল কার্যক্রম দ্রæত সময়ের মধ্যে চালুকরার জন্য। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজটির অস্থায়ী ক্যাম্পাস আমাদের কমপ্লেক্সে থাকায় সেটি সম্ভব হয়নি।
সুনামগঞ্জ বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মনোজিৎ মজুমদার জানান, দীর্ঘ ২ বছর আমরা শান্তিগঞ্জ উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে অস্থায়ী ভাবে আমাদের কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলাম। আজ আমাদের নিজস্ব ক্যাম্পাসে আসতে পারছি। এটা অন্যান্ত আনন্দের বিষয়। সুনামগঞ্জবাসীর জন্য এটি একটি মডেল উন্নয়ন। খুব দ্রæত সময়ে সরকারের প্রচেষ্ঠায় ও মাননীয় পরিকল্পানা মন্ত্রীর তৎপরতায় আমরা আজ আমাদের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমাদের নতুন একাডেমিক ভবনে আমাদের কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। আমি সুনামগঞ্জ জেলাবাসী ও বর্তমান সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
সুনামগঞ্জ বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজের প্রকল্প পরিচালাক ডা. শামস উদ্দিন আহমেদ বলেন, এই প্রকল্পটির মোট ৬৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে মেডিকেল কলেজের একাডেমিক ভবনের কাজ প্রায় ৯৬ ভাগ শেষ হয়েছে। প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৫ সাল পর্যন্ত রয়েছে। আশা ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে পুরো প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করতে পারবো। ২৫ সালের প্রথম দিকেই মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করতে পারবো।
পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি জানান, সুনামগঞ্জবাসীর জন্য অত্যান্ত আনন্দের বিষয় হচ্ছে সুনামগঞ্জ বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ আজ থেকে তাদের নিজস্ব ক্যাম্পাসে কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হাওরঞ্চলের মানুষের জন্য যা করেছে তা ইতিহাস হয়ে থাকবে। সুনামগঞ্জবাসী এই সরকারকে কোন দিনও ভুলে গেলে চলবে না। আমাদের মনে রাখতে হবে, সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে। সুনামগঞ্জ এখন আর অবহেলিত নয়। এখন উন্নয়নের রোল মডেল। সুনামগঞ্জে একটি মেডিকেল কলেজ, একটি বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আমার স্বপ্ন ছিলো। আমার সরকার তা বাস্তবায়ন করেছে। কাজেই এই সরকারকে মনে রাখতে হবে। বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে মনে রাখতে হবে। যার জন্য আজ আমরা গর্বে সাথে বলতে পারি আমাদের এখন সব হয়েছে। কি হচ্ছে না এই জেলায়? আগামীতে আরো উন্নয়ন হবে। জ্বালাও পুড়াও করে মানুষকে কষ্ট দিয়ে বিএনপি কি বুঝাতে চায়? মানুষের ক্ষতি করে যারা ক্ষমতার স্বপ্ন দেখে তাদেরকে এই দেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে।