কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রথম ধাপে ৮৭টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ১০ মার্চ প্রথম ধাপের এই ৮৭টি উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। শনিবার ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এরা সবাই নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
এর আগে শুক্রবার বিকেলে গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের এক যৌথসভায় প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া উপজেলাগুলোর আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত করে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এই যৌথসভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে আবার সিদ্ধান্ত বদল করেছে আওয়ামী লীগ। এখন এই পদে দল থেকে প্রার্থী দেয়া হবে না, যারা মনোনয়ন ফরম কিনেছেন তাদের ফেরত দেয়া হবে অর্থ। সিদ্ধান্ত বদল করে আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সাধারণ ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কাউকে মনোনয়ন দেয়া হবে না, দলের যে কেউ প্রার্থী হতে পারবেন।
দেশের ৪৯২টি উপজেলার মধ্যে অন্তত ৪৮০টিতে এবার ভোট হচ্ছে। প্রথম ধাপে পঞ্চগড়, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, জয়পুরহাট, রাজশাহী, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ জেলার উপজেলা পরিষদগুলোতে নির্বাচন হবে। প্রথম ধাপে মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময় ১১ ফেব্রুয়ারি, মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১২ ফেব্রুয়ারি, প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৬ ফেব্রুয়ারি। মার্চ মাসেই পরবর্তী চারটি ধাপের ভোটগ্রহণ হবে। দ্বিতীয় ধাপে ১৮ মার্চ, তৃতীয় ধাপে ২৪ মার্চ, চতুর্থ ধাপে ৩১ মার্চ হবে ভোট। পঞ্চম ও শেষ ধাপের ভোট হবে ১৮ জুন।
প্রথম ধাপে আ’লীগের মনোনয়ন পেলেন যারা : প্রথম ধাপে ৮৭ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকায় যারা রয়েছেন তারা হলেন- পঞ্চগড় সদর উপজেলায় আমিরুল ইসলাম, তেঁতুলিয়ায় কাজী মাহামুদুর রহমান, দেবীগঞ্জে হাসনাৎ জামান চৌধুরী (জর্জ), বোদায় ফারুক আলম, আটোয়ারি চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম। নীলফামারী সদর উপজেলায় শাহিদ মাহমুদ, ডোমারে তোফায়েল আহমেদ, ডিমলায় তবিবুল ইসলাম (মুক্তিযোদ্ধা), সৈয়দপুরে মোখছেদুল মোমিন, কিশোরগঞ্জে জাকির হোসেন বাবুল এবং জলঢাকায় চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পেয়েছেন আনছার আলী (মিন্টু)।
এছাড়া লালমনিরহাট সদরে নজরুল হক পাটোয়ারী ভোলা, পাটগ্রামে রুহুল আমিন বাবুল, হাতীবান্ধায় লিয়াকত হোসেন, আদিতমারীতে রফিকুল আলম, কালীগঞ্জে মাহবুবুজ্জামান আহমেদ, কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরীতে মোস্তফা জামান, উলিপুরে গোলাম হোসেন মন্টু, চিলমারীতে শওকত আলী সরকার, রৌমারীতে মজিবুর রহমান, ভুরুঙ্গামারীতে নুরুন্নবী চৌধুরী, রাজারহাটে আবু নুর মোঃ আক্তারুজ্জামান, ফুলবাড়ীতে আতাউর রহমান, রাজিবপুরে শফিউল আলম, এবং কুড়িগ্রাম সদরে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন আমান উদ্দিন আহমেদ।
জয়পুরহাট জেলার সদরে এস এম সোলায়মান আলী, পাঁচবিবিতে মনিরুল শহিদ মন্ডল, আক্কেলপুরে আব্দুস সালাম আকন্দ, কালাইয়ে মিনফুজুর রহমান, ক্ষেতলালে মোস্তাকিম মন্ডল, রাজশাহী জেলার পবায় মুনসুর রহমান, তানোরে লুৎফর হায়দার রশীদ, পুঠিয়া জি এম হিরা বাচ্চু, দুর্গাপুরে নজরুল ইসলাম, বাঘায় লায়েব উদ্দীন, গোদাগাড়ীতে জাহাঙ্গীর আলম, চারঘাটে ফকরুল ইসলাম, মোহনপুরে আব্দুস সালাম, বাগমারায় অনিল কুমার সরকার, নাটোর জেলার সদরে শরিফুল ইসলাম রমজান, গুরুদাসপুরে জাহিদুল ইসলাম, বাগাতিপাড়ায় সেকেন্দার রহমান, সিংড়ায় শফিকুল ইসলাম, বড়াইগ্রামে সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী ও লালপুরে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন ইসাহাক আলী।
এছাড়া সিরাজগঞ্জ জেলার সদরে মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন, চৌহালীতে ফারুক হোসেন, কাজীপুরে খলিলুর রহমান সিরাজী, রায়গঞ্জে ইমরুল হোসেন তাং, উল্লাপাড়ায় শফিকুল ইসলাম, শাহজাদপুরে আজাদ রহমান, বেলকুচিতে আলী আকন্দ, তাড়াশে সঞ্জিত কুমার কর্মকার, ময়মনসিংহ জেলা সদরে মোহাম্মদ আবুল হোসেন, বকশীগঞ্জে এ কে এম সাইফুল ইসলাম, দেওয়ানগঞ্জে আবুল কালাম আজাদ, মেলান্দহে কামরুজ্জামান, মাদারগঞ্জে ওবায়দুর রহমান বেলাল, সরিষাবাড়ীতে গিয়াস উদ্দিন পাঠান ও ইসলামপুরে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন এস এম জামাল আব্দুন নাছের।
অন্যদিকে নেত্রকোনা জেলা সদরে তফসির উদ্দিন খান, খালিয়াজুরীতে গোলাম কিবরিয়ার জব্বার, দুর্গাপুরে মোহাম্মদ এমদাদুল হক খান, মোহনগঞ্জে শহীদ ইকবাল, বারহাট্টায় গোলাম রসুল তালুকদার, কলমাকান্দায় আব্দুল খালেক, মদনে হাবিবুর রহমান, পূর্বধলায় জাহিদুল ইসলাম সুজন, কেন্দুয়ায় নুরুল ইসলাম, হবিগঞ্জ জেলা সদরে মশিউর রহমান শামীম, নবীগঞ্জে আলমগীর চৌধুরী, লাখাইয়ে মুশফিউল আলম আজাদ, বাহুবলে আব্দুল হাই, মাধবপুরে আতিকুর রহমান, চুনারুঘাটে আব্দুল কাদির লস্কর, আজমিরীগঞ্জে মর্ত্তুজা হাসান, বানিয়াচংয়ে আবুল কাশেম চৌধুরী এবং সবশেষ জেলা সুনামগঞ্জ সদরে খায়রুল হুদা, জামালগঞ্জে ইউসুফ আল আজাদ, শাল্লায় চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, বিশ্বম্ভরপুরে রফিকুল ইসলাম তালুকদার, ধর্মপাশায় শামীম আহমেদ মুরাদ, ছাতকে ফজলুর রহমান, দোয়ারাবাজারে আব্দুর রহিম, দিরাইয়ে প্রদীপ রায়, তাহিরপুরে করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবলু ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন আবুল কালাম।
ভাইস চেয়ারম্যানদের টাকা ফেরত দেবে আ’লীগ : আগামী মার্চে শুরু হতে যাওয়া উপজেলা নির্বাচনে তফসিল ঘোষণার আগে আওয়ামী লীগ জানিয়েছিল, দুটি ভাইস চেয়ারম্যান পদেও দল থেকে প্রার্থী দেয়া হবে না, এগুলো উন্মুক্ত থাকবে। এরপর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সাধারণ ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদের জন্যও প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হবে বলে জানানো হয়। সেজন্য চেয়ারম্যানের মতো দুই ভাইস চেয়ারম্যানের মনোনয়ন ফরমও বিক্রি করা হয়।
কিন্তু শনিবার প্রথম পর্বের ৮৭টি উপজেলায় দলীয় প্রার্থী ঘোষণার সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, ভাইস চেয়ারম্যান পদটি উন্মুক্তই থাকছে। অর্থাৎ এই পদ দুটিতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কাউকে মনোনয়ন দেয়া হবে না, দলের যে কেউ প্রার্থী হতে পারবেন। বিএনপি স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে না আসলেও সবখানেই যাতে নির্বাচনটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়, সেই কারণেই এই সিদ্ধান্তের পরিবর্তন হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে।
এদিকে গত সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ভাইস চেয়ারম্যান পদেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা হয়। চারদিনে বিক্রি হয় ৩ হাজার ৮৮৫টি ফরম। সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কারণে যেসব সাধারণ ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন, তাদের অর্থ ফেরত দেবে আওয়ামী লীগ।
এখন সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের পর পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমা নেয়ার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত একাধিক নেতা জানান, যেহেতু সিদ্ধান্ত বদল হয়েছে। ফলে কেন্দ্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে সবার টাকা ফেরত দেয়া হবে। প্রত্যেক প্রার্থীর নিজ নিজ বাড়িতে টাকা পৌঁছে দেয়া হবে।