দেশের পুঁজিবাজারে ২০১০ সালের ধসে যে ক্ষতি হয়েছিল তা কাটিয়ে ওঠা এখনো সম্ভব হয়নি। উত্তরণের চেষ্টা চলছে। আশাব্যঞ্জক অবস্থায় পৌঁছার লক্ষ্যে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেসব পদক্ষেপের কিছু ফল মিলছেও। তবে বাজার খুব স্থিতিশীল, এ কথা বলা যায় না। ২০১৮ নির্বাচনের বছর হওয়ায় বিনিয়োগে সতর্কতা ছিল। নির্বাচন ঘিরে অস্থিরতার শঙ্কা ছিল। অনেক বিনিয়োগকারী মূলধন তুলে নিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন। ফলে পুঁজিবাজারের জন্য বছরটি তেমন ভালো ছিল না। সূচকে নিম্নগতি ছিল, লেনদেনও কম হয়েছে। তবে নির্বাচনের পর স্বস্তি ফিরতে দেখা যাচ্ছে। নতুন বছরে ভালো একটি পুঁজিবাজারের আশা করেছিলেন বিনিয়োগকারীরা। তাঁদের জন্য সুখবর : নতুন বছরের প্রথম দিনে বাজারে লক্ষণীয় মাত্রায় ঊর্ধ্বগতি দেখা দিয়েছে। মূল্যসূচক বেড়েছে। ৯০ শতাংশ ব্যাংকের শেয়ারের দাম বেড়েছে।
মঙ্গলবার ডিএসইর প্রধান সূচক দিনের গড় হিসাবে প্রায় ৮০ পয়েন্ট বেড়েছে। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিনিয়োগভীতি কাজ করছিল। ফলে নির্বাচনকালে বাজারে ব্যাপক পতন হয়েছে। বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর তলানিতে গিয়ে পৌঁছেছিল। ৩০ ডিসেম্বর বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা ছাড়াই নির্বাচন হয়েছে। ক্ষমতাসীন দল আবার জয়ী হওয়ায় ধারাবাহিকতার শর্তও বজায় থাকল। বিনিয়োগকারীরা নতুন বছরে রাজনৈতিক সংঘাতের শঙ্কা খুব একটা দেখছেন না। রাজনৈতিক পরিবেশ অস্থির না হলে পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। সেটাই দেখা গেল নতুন বছরের প্রথম দিনে।
মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হয়েছে ৫৩০ কোটি ১৭ লাখ টাকা। সূচক বেড়েছে ৭৯ পয়েন্ট। এর আগে বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছিল ৫৩৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, সূচক বেড়েছিল ৩৬ পয়েন্ট। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে ২৭টির শেয়ারের দাম বেড়েছে। দুটির শেয়ারের দাম কমেছে, অপরিবর্তিত ছিল একটির দাম।
পুঁজিবাজারে সুস্থিতি আনতে গেলে সংস্কারমুখী কাজগুলো আরো নিষ্ঠার সঙ্গে এগিয়ে নিতে হবে। চীনের দুটি প্রতিষ্ঠান কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে আসার সুফলও নতুন বছরে মিলবে বলে আশা করছেন পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্টরা। চীনা কনসোর্টিয়াম আসার ফলে ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন এসেছে। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হলে আন্তর্জাতিক রূপ পাবে শেয়ারবাজার। অস্থিরতা-শঙ্কা না থাকলে বিনিয়োগে এমনিতেই আস্থা বাড়বে। অতএব পুঁজিবাজারে স্থিরতা আনা এবং সুব্যবস্থাপনা-সুশাসন নিশ্চিত করাই হবে নতুন সরকারের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ।