নির্বাচন সুসংহত হোক

70

নির্বাচনকেন্দ্রিক সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা বিচ্ছিন্নভাবে ঘটেই চলেছে। কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সৃষ্ট উত্তেজনাকর পরিস্থিতি অনেক ক্ষেত্রেই সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনার পাশাপাশি গত মঙ্গলবার চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রচারাভিযানে পেট্রলবোমা হামলা করা হয়েছে। এ ঘটনায় তিনজন দগ্ধসহ আটজন আহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ঢাকার কেরানীগঞ্জে বিএনপির প্রার্থী গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের ওপর হামলা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকেও হামলা-ভাঙচুরের খবর এসেছে গণমাধ্যমে। গত ২৪ ডিসেম্বর সেনাবাহিনী মোতায়েনের আগের দিন পর্যন্ত দেশে নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ২৮৭টি। মাত্র ১০ জেলার ১২টি আসনে কয়েকবার করে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এর নেপথ্যে রয়েছে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক অবস্থান এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও কর্মীদের মধ্যে সহনশীলতার অভাব। কোথাও কোথাও প্রশাসনের শৈথিল্যের কারণেও সহিংসতার ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে মনে করা হয়েছে। ওদিকে রাজধানীর দুটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে নগদ আট কোটি টাকা ও ১০ কোটি টাকার চেক জব্দ করেছে র‌্যাব। গ্রেফতার করা হয়েছে তিনজনকে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রভাবিত করার জন্য এ টাকা ছড়ানো হতো বলে র‌্যাব জানিয়েছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা, যেকোনোভাবে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা চলছে। আর সে কারণেই ঘুরেফিরে নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় সহিংসতার ঘটনা ঘটছে বা ঘটানো হচ্ছে। গত ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত কমবেশি সহিংসতা ঘটেছে ১০২ আসনে। ১৯৭টি আসন শান্তিপূর্ণ। ৯ জেলার কোনো আসনেই কোনো রকম সংঘাতের ঘটনা ঘটেনি। বিএনপি বা অন্যান্য দলের ওপর যেমন হামলা হয়েছে, তেমনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ওপরও হামলা হয়েছে।
ঘুরেফিরে নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় হামলার ঘটনা থেকে ধারণা করা যেতে পারে, রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা থাকলে এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়ানো সম্ভব হতো। একই সঙ্গে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর ও সতর্ক থাকলে সংঘাতের অনেক ঘটনাই এড়ানো সম্ভব হতো। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সহিষ্ণুতার অভাব রয়েছে। আর সে কারণেই উত্তেজনা ছড়ায়। পরমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে পরাজয় মেনে নেওয়ার মনোভাব তৈরি করা গেলে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাই ঘটত না। সুযোগসন্ধানী একটি গোষ্ঠী এর সুযোগ নেয়। এবারের নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন বানচাল করা না গেলেও প্রশ্নবিদ্ধ করার একটি অপচেষ্টা চলছে বলে অভিজ্ঞ মহলের আশঙ্কা। সংঘাত-সংঘর্ষ ও কালো টাকা উদ্ধারের ঘটনা তারই প্রমাণ বলে মনে করা হচ্ছে। কোনোভাবেই তা হতে দেওয়া যাবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে এখন থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। একটি স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সুসংহত হোক বাংলাদেশের গণতন্ত্র।