॥ মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান ॥
(পূর্ব প্রকাশের পর)
রসূল (স.) বলেছেন: ‘‘.. আমার নিকট থেকে নিয়ে নাও, আল্লাহ্ ঐ সকল মহিলার জন্য পথ বের করে দিবেন। যুবক-যুবতী যেনা করলে তাদের শাস্তি একশত বেত্রাঘাত ও একবছর নির্বাসন। আর বিবাহিত মহিলা ও পুরুষ যেনা করলে তাদের শাস্তি একশত বেত্রাঘাত ও পাথর দ্বারা রজম।’’
এমনিভাবে আরো অনেক হাদীস রসূল (স.) থেকে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং আমাদের সকলের উচিত যে, এ সকল খারাপ ও অশ্লীল কাজ থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখা এবং অপরকে বিরত থাকা।
প্রচলিত আইনে পতিভাকৃত্তিকে জঘন্য অপরাধ মনে করা হয়ে থাকে। মএ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ দন্ডবিধির ভাষ্যে বলা হয়েছে: ‘‘যে ব্যক্তি ১৮ বছরের কম বয়স্কা কোন ব্যক্তি যে কোন বয়সে বেশ্যাবৃত্তি বা অন্য কোন লোকের সহিত অবৈধ যৌন সম্পর্ক অথবা কোন বে-আইনি ও অসৎ উদ্দেশ্যে নিয়োজিত বা ব্যবহৃত হইবে এই উদ্দেশ্যে কিংবা অনুরূপ ব্যক্তি যে কোন উদ্দেশ্যে নিয়োজিত বা ব্যবহৃত হইবে এইরূপ সম্ভাবনা জানিয়া তাহাকে বিক্রয় করে, ভাড়া দেয় বা প্রকারন্তরে হস্তান্তর করে সেই ব্যক্তি যেকোন বর্ণনার কারাদ-ে যাহার মেয়াদ ১০ বছর পর্যন্ত হইতে পারে দন্ডিত হইবে তদুপরি অর্থদন্ডে দন্ডিত হইবে।’’
যে ব্যক্তি ১৮ বছরের কম বয়স্কা কোন ব্যক্তি যে কোন বয়সে বেশ্যাবৃত্তি বা অন্য কোন লোকের সহিত অবৈধ যৌন সম্পর্ক অথবা কান-বে-আইনি ও অসৎ উদ্দেশ্যে নিয়োজিত বা ব্যবহৃত হইবে এই উদ্দেশ্যে কিংবা অনুরূপ ব্যক্তি যে কোন উদ্দেশ্যে নিয়োজিত বা ব্যবহৃত হইবে এইরূপ সম্ভাবনা জানিয়া তাহাকে ক্রয় করে, ভাড়া দেয় বা প্রকারন্তরে হস্তান্তর করে সেই ব্যক্তি যেকোন বর্ণনার কারাদন্ডে যাহার মেয়াদ ১০ বছর পর্যন্ত হইতে পারে দন্ডিত হইবে তদুপরি অর্থদন্ডে দন্ডিত হইবে।
‘পাচার’ শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে Trafficking, Kidnapping, Smuggling. শব্দটির প্রচলিত অর্থ হচ্ছে, অন্যায় ও অবৈধ উপায়ে কোন জিনিস যথাযথ স্থান থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া।
অবৈধ উপার্জনের অন্য আরেকটি উল্লেখযোগ্য মাধ্যম হচ্ছে মানবপাচার। নারী ও শিশু পাচারের মত জঘন্য অপরাধের প্রবণতা আগেও ছিল, “আল-কুরআনের বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, ইউসুফ আ. কে খ্রিস্টপূর্ব কয়েক বছর পূর্বে একদল ব্যবসায়ী কূপ থেকে তুলে মিসরে পাচার নিয়ে যয় এবং বিক্রি করে দেয়। আল্লাহ্ বলেন: বর্তমানেও আছে। জাহিলী যুগে আরবেও শিশু পাচারের ঘটনা দেখা যায়।
পৃথিবীতে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য বিভিন্ন অপরাধের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের শাস্তির বিধান রয়েছে ইসলামে। অপরাধগুলোকে শাস্তির স্তরভেদে তিন ভাগে ভাগ করা হয়: ১. হুদূদ “হুদুদ সংক্রান্ত অপরাধ: হুদুদ সংক্রান্ত অপরাধ বলতে ঐসব অপরাধকে বুঝায় যার জন্য আল্লাহ তাআলা সুনির্দিষ্ট পরিমাণ শাস্তি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যেমন: ব্যভিচার, মদ্যপান, চৌর্যবৃত্তি, ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ করা, মিথ্যা অপবাদ, ধর্ম ত্যাগ ও বিদ্রোহ/ রাষ্ট্রদ্রোহিতা। সংক্রান্ত অপরাধ ২. কিসাস ও দিয়াত “কিসাস ও দিয়াহ সংক্রান্ত অপরাধ: কিসাস ও দিয়াত সংক্রান্ত অপরাধ বলতে ঐসব অপরাধকে বুঝায় যার জন্য হুবহু অপরাধ প্রতিশোধ গ্রহণ কিংবা নির্ধারিত জরিমানা গ্রহণ করার সুযোগ রয়েছে। মযলুম ব্যক্তি নিজে কিংবা তার উত্তরাধিগণ তা ক্ষমা করে দেবার অধিকার রাখে। যেমন: ইচ্ছাকৃত হত্যা, প্রায় ইচ্ছাকৃত হত্যা, ভুলে হত্যা, ইচ্ছাকৃত শারীরিকভাবে আহত করা, ভুলে শারীরিক ক্ষতি সাধন করা।
সংক্রান্ত অপরাধ এবং ৩. তা’যীর “তা’যীর সংক্রান্ত অপরাধ হচ্ছে ঐসব অপরাধ যার ব্যাপারে শরী’আতে সুনির্দিষ্টভাবে কোন শাস্তির উল্লেখ করে নি, যা নির্ধাণ করার ক্ষমতা সরকারকে প্রদান করা হয়েছে। দেশ ও জনগণের কল্যাণে সরকার জনসাধারণকে সতর্ককরণ করা থেকে শুরু করে শাস্তির ভয়াবহতা অনুযায়ী সবশেষে মৃত্যুদন্ড পর্যন্ত যে কোন শাস্তি প্রদান করতে পারে। এ ধরণের অপরাধের সুনির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা নেই। যেমন- সুদ, ঘুষ, প্রতারণা, গালমন্দ করা ইত্যাদি। সংক্রান্ত অপরাধ।
ইসলামি শরীয়তের দৃষ্টিতে অপরাধ যাই হোক না কেন তা উল্লেখ তিন প্রকারের শাস্তি পদ্ধতির মধ্যে সীমাবদ্ধ। পাচার কিসাস এর শাস্তি আরোপ করার মত অপরাধ নয়, আবার হুদূদ সংক্রান্ত যতটি অপরাধের উল্লেখ করা হয়েছে তারও আওতাভূক্ত নয়। এটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে একটি প্রতারণামূলক কাজ। প্রতারণার মাধ্যমে পাচারকারীরা মানুষকে ক্ষতিকর ও সমাজবিরোধী কাজের সাথে সম্পৃক্ত করছে। তাই এটি তা’যীর সংক্রান্ত অপরাধসমূহের একটি অপরাধ।
এ প্রসঙ্গে মুসলিম পন্ডিতগণ বলেছেন: ‘‘প্রতারণার মাধ্যমে পাচারের শাস্তি বিধানে সরকার তার ধরণ ও ভয়াবহতার ভিত্তিতে মৃত্যুদন্ড, চাবুক মারা, জেলে আটকে রাখা, নির্বাসনে দেয়া, মাল ক্রোক করা, শোকজ নোটিশ, সতর্কীকরণ নোটিশ, সশরীরে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ, বয়কট করা, র্ভৎসনা করা ও উপদেশ দেয়া ইত্যাদির যে কোন শাস্তি নির্ধারণ করতে পারে।’’
তবে যদি পাচারকারী কোন নারীকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে অথবা অপহরণ করে পাচার করে, তবে তার উপর অপহরণের জন্য শরীয়ত নির্ধারিত শাস্তি (হাদ্দুল হিরাবা) প্রযোজ্য হবে। আর যদি কেউ শিশুকে চুরি করে পাচার করে তবে তাকে তা’যীর হিসেবে রাষ্ট্র যে কোন ধরণের শাস্তি দিতে পারে।
২০০০ সালের বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে পাশকৃত নারী ও শিশু অধিকার সম্পর্কিত ৮ আইনের ৫ নং ধারায় পাচারের শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে:
ক) যদি কোন ব্যক্তি কোন বেআইনি বা নীতিগর্হিত উদ্দেশ্যে কোন শিশুকে বিদেশ হইতে আনয়ন করেন বা বিদেশে প্রেরণ বা পাচার করেন অথবা ক্রয় বা বিক্রয় করেন বা উক্তরূপ কোন উদ্দেশ্যে কোন শিশুকে নিজ দখলে, জিম্মায় বা হেফাজতে রাখেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদন্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদন্ডেও দন্ডণীয় হইবেন।
খ) যদি কোন ব্যক্তি নবজাতক শিশুকে হাসপাতালে, শিশু মাতৃসদন, নার্সিং হোম, ক্লিনিক ইত্যাদি বা সংশ্লিষ্ট শিশুর অভিভাবকের হেফাজত হইতে চুরি করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি উপ-ধারা (ক) এ উল্লেখিত দন্ডে দন্ডনীয় হইবেন। (অসমাপ্ত)