শুধু নির্বাচনের প্রচার নয়, ভোটদান পদ্ধতিতেও আধুনিকতার ছোঁয়া লাগতে যাচ্ছে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম নামের ডিভাইস ব্যবহার হবে সিটি করপোরেশন বা শহর এলাকার ছয়টি সংসদীয় আসনের সব কয়টি কেন্দ্রে। যে ছয়টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে, সেগুলো দ্বৈবচয়ন ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হবে। যদিও সশস্ত্র বাহিনীর সহায়তায় ৪৮টি সংসদীয় আসনের সব কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণের সক্ষমতা রয়েছে ইসির।
ইভিএমের ব্যবহার নিয়ে শুরু থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনের একটি অংশের বড় ধরনের বিরোধিতা ছিল। বিশেষ করে ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচনে বড় ধরনের কারচুপি করা যাবে, এ ধরনের কথা তারা বেশি ছড়িয়েছিল। আবার নির্বাচনের আগে সংসদে ইভিএম ব্যবহারের আইন পাসের সুযোগ না থাকায় কিছুটা অনিশ্চয়তাও দেখা দিয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রিসভার বৈঠকে ইভিএম ব্যবহারের সুযোগ রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আইনের খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদনের পর ইভিএম ব্যবহারের বাধা দূর হয়। আইনটি তাই অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়। ইসির ৪০তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আনুমানিক ৯০০ কেন্দ্রে যন্ত্রে ভোটগ্রহণ করা হবে। যন্ত্রে ভোটগ্রহণের বিষয়ে ভোটারদের মধ্যে একধরনের ভুল ধারণা ছড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। নেতিবাচক কিছু প্রচারণাও করা হয়েছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে দায়িত্ব নিয়ে ভুল-বোঝাবুঝির অবসান করতে হবে। ইভিএম বা যন্ত্রে ভোট দিলে তাতে যে কোনো ক্ষতি নেই, বরং নির্ভুলভাবে ভোট দেওয়া যায়, এ বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকেই সবার সামনে তুলে ধরতে হবে।
নির্বাচন কমিশন নিজেদের উদ্যোগে নতুন করে ইভিএম নিয়ে ভোটারদের সামনে হাজির হতে পারে। বিশেষ করে যেসব আসনে ভোটগ্রহণ ইভিএমে হবে, সেসব আসনের ভোটারদের কাছে সরকারি ছুুটির দিনগুলোতে ইভিএম প্রদর্শন করা যেতে পারে। তাতে ইভিএম সম্পর্কে মানুষের মনে কোনো ভুল ধারণা থাকলে তা দূর হবে। আধুনিক যুগে ইভিএম যে প্রাসঙ্গিক, তা তুলে ধরে সব সংশয় দূর করতে হবে।
এবারের নির্বাচন হতে যাচ্ছে সব দলের অংশগ্রহণে। এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করে তোলার দায়িত্ব অনেকাংশেই নির্বাচন কমিশনের ওপর বর্তায়। নির্বাচনে সব দলই জয়লাভ করতে চায়। ফলে নিজেদের মতো করে নির্বাচনী স্ট্র্যাটেজি নির্দিষ্ট করে দলগুলো। প্রচার কৌশল যেকোনো দলকে ভোটারদের কাছে জনপ্রিয় করতে পারে। তবে নির্বাচন কমিশনকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। এমন কোনো কাজ করা যাবে না, যে কাজে নৈতিকতার প্রশ্ন উঠতে পারে। নৈতিকতার মানদণ্ডে নির্বাচন কমিশনের সবাইকে উত্তীর্ণ হতে হবে। কমিশনারদের কোনো কর্মকাণ্ডে যেন এমনটি প্রকাশ না পায় যে তাঁরা বিশেষ কোনো রাজনৈতিক দলের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন। আমরা আশা করব, ইভিএম নিয়ে সংশয় দূর করবে ইসি। পাশাপাশি স্বচ্ছতা বজায় রাখতে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব ব্যবস্থা নেবে।