সেলিম হাসান কাওছার গোলাপগঞ্জ থেকে :
গোলাপগঞ্জে পুলিশ পরিচয় দিয়ে এক ব্যবসায়ীকে অভিনব কায়দায় প্রতারণা করেছে এক প্রতারক। রবিবার (২৫ নভেম্বর) দুপুর পনে ১টায় গোলাপগঞ্জ পৌর চৌমুহনীর শুনুর মিয়া নামক একটি মাংসের দোকানে ওই ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও ঘটনাস্থলে গিয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, ওই প্রতারক প্রথমে মাংসের দোকানের পাশে এক সবজির দোকানে গিয়ে তরি তরকারি ধর কষাকষির পর প্রায় ১২ হাজার টাকার বিভিন্ন ধরণের সবজি ওজন করার জন্য বলে। এরপর সে শুনুর মিয়া নামক মাংসের দোকানে গিয়ে মাংস ব্যবসায়ী আপন মিয়া (৪৫) এর সাথে মাংসের ধর কষাকষির পর ৯০ কেজি মাংস কিনার চুক্তি করে। এ সময় ওই প্রতারক মাংস ব্যবসায়ী আপন মিয়ার কাছে জানতে চায় ভাল মানের রেষ্টুরেন্ট কোনটি। তিনি জানান, রান্না ঘর। এ সময় ওই প্রতারক মাংস ব্যবসায়ী আপনকে নিয়ে রান্না ঘর রেষ্টুরেন্টে যায়। সেখানে গিয়ে প্রায় ৪ হাজার টাকার বিরিয়ানী অর্ডার করে। বিরিয়ানী অর্ডার করার পর কার সাথে ওই প্রতারক মোবাইলে কথা বলে। মোবাইলে আলাপ করার সময় সে বলছিল আমি এটিএম কার্ড ফেলে আসছি তুমি তাড়াতাড়ি চলে আসো। আমি সব ধরণের বাজার রেডি করে ফেলেছি। আমার কাছে যা টাকা ছিল বিয়ের বাজারের জন্য খরচ করে ফেলেছি। এ সময় অপর প্রান্ত থেকে লোকটি মোবাইলে বলছিল আব্বু আমি কয়েক মিনিটের মধ্যে চলে আসবো তুমি কাবার করে নাও। এ সময় ওই প্রতারক বলছিল কিছু টাকার জন্য আটকে গেলাম। উপস্থিত কিছু টাকা পেলে মিষ্টির বাজার সেরে ফেলতাম। পরে মাংস ব্যবসায়ী আপন জানতে চায় আপনার কত টাকার প্রয়োজন। সে জানায় ২৫ হাজার টাকা হলে মিষ্টির বাজারটা সেরে ফেলতাম। পরে আপন নিজের কাছে থাকা ৫ হাজার ও অন্যের কাছ থেকে আরো ২০ হাজার টাকা এনে দেয় মিষ্টির বাজার করার জন্য প্রতারককে। এ সময় ওই প্রতারক মিষ্টি কিনার জন্য চৌমুহনীর রাজমহলে নিয়ে যান আপন মিয়া। রাজমহলে ১৪ হাজার ৮শত টাকার মিষ্টি ও দই প্যাক করতে বলে। এ সময় ওই প্রতারক কয়েক ক্যারেট পানি কিনতে চাইলে আপন মিয়া বলেন, আমি আপনাকে কম টাকায় আলী স্টোর থেকে পানি কিনে দেবো। আপনি শুধু মিষ্টি এখান থেকে লন। এক পর্যায়ে ওই প্রতারক মাংস ব্যবসায়ী আপন মিয়াকে ৩টি খালি বস্তা আনতে বলেন। তিনিও তাড়াহুড়ো করে খালি বস্তা আনতে যান। এই সুযোগে সে মোবাইল কানে লাগিয়ে রাজমহল ত্যাগ করে। পরে আপন মিয়া বস্তা নিয়ে এলে তাকে আর পাননি। ওই লোকটি চলে গেছে শুনে নিরব নিস্তব্ধ হয়ে পড়েন আপন। পরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাকে আর পাওয়া যায়নি। ওই প্রতারক ভুয়া পুলিশ অফিসার কাস্টমার অন্য মাংসের দোকানে চলে যেতে পারে এজন্য প্রথমেই আপন তার মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করেছিলেন। পরে তাকে কোথাও না পেয়ে আপন প্রতারকের ০১৬৪০১০৮৮৯৫ নাম্বারে ফোন দেন। প্রথমে রিং হলেও পরে নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। ওই প্রতারক বিভিন্ন দোকানে রেডি করা কারো কোন মালামাল নেয়নি। ওই রাজমহলের প্রধান ম্যানেজার মুজাহিদের সাথে আলাপ করা হলে তিনি বলেন, ওই লোকটি মিষ্টি ও দই অর্ডার করে ১৪ হাজার ৮শত টাকার। আমার লোকজন সবকিছু রেডিও করে। আমার লোকজন তাকে বসতে বললে সে বসেনি। তাকে মিষ্টি দিলে সে মিষ্টিও খায়নি। পরে জানতে পারি মাংসের দোকানের আপন মিয়ার ২৫ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়েছে। আমাদের সিসি ক্যামেরায় সে ধরা পড়ে। তবে তাকে কেউ চিনতে পারেনি। সে সিলেটি ও ননসিলেটি ভাষায় কথা বলছিল। সোমবার আপন মিয়ার মাংসের দোকান সকাল থেকেই বন্ধ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় ওই প্রতারকের মোবাইল নাম্বার দিয়ে গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় একটি অভিযোগ করেছেন মাংস ব্যবসায়ী আপনের ছোট ভাই সুমন মিয়া। ওই লোকটিকে চিনতে পারলে গোলাপগঞ্জ থানা পুলিশকে জানানোর জন্য অনুরোধ করছে মাংস ব্যবসায়ী আপন মিয়া। এ ব্যাপারে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ওসি একেএম ফজলুল হক শিবলীর সাথে আলাপ করা হলে তিনি অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমারা বিষয়টি দেখতেছি।