জৈন্তাপুর থেকে সংবাদদাতা :
জৈন্তাপুর উপজেলার আসামপাড়া আদর্শগ্রাম পাথর কোয়ারীতে বালু পাথর উত্তোলন করাকে কেন্দ্র করে শ্রমিকদের সাথে বিজিবির সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ৪ শ্রমিক আহত হয়, প্রতিবাদে সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক প্রায় ৩ ঘন্টা অবরোধ করে রাখে উত্তেজিত শ্রমিকরা। আজ মঙ্গলবার বৃহত্তর জৈন্তা পাথর শ্রমিকের ডাকে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়- জৈন্তাপুর উপজেলার একমাত্র পাথর কোয়ারী শ্রীপুর আদর্শগ্রাম। পাথর কোয়ারীতে বিভিন্ন গ্র“পের কয়েক হাজার শ্রমিক কর্মরত আছে। তার মধ্যে ৫ নভেম্বর সোমবার দুপুর ১টায় প্রতিদিনের ন্যায় ট্রাকে পাথর লোড করেত যায় বৃহত্তর জৈন্তা পাথর শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের আদর্শগ্রাম ইউনিটের শ্রমিকরা। পূর্ব কোন বাধাঁ ছাড়া ৪৮ বিজিবি‘র শ্রীপুর ক্যাম্পের জোয়ানরা সাধারন শ্রমিকের উপর হামলা চালায়। এতে বিজিবির জোয়ানদের লাঠির আঘাতে আহত হয় বেশ কয়েকজন শ্রমিক। এ সময় গুরুতর আহত হয় উপজেলার ডুলটির পাড় গ্রামের মুমিনুল হক এর ছেলে আব্দুল হান্নান (৩০), আদর্শগ্রামের সৈয়দ মিয়ার ছেলে সাইফুল আলম (২৮), গুচ্ছগ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে মোঃ বিলাল(২৯) ও আদর্শগ্রামের আব্দুর রব এর ছেলে মনজু মিয়া(২৯)। বর্তমানে আহতরা জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে, অন্যদের নাম জানা যায়নি। হামলায় প্রায় ৫০টি বেলাচা ভাংচুর করে শ্রীপুর বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা। শ্রমিকের উপর বিজিবির হামলার খবর দ্রুত উপজেলায় ছড়িয়ে পড়লে আসামপাড়া আর্দশগ্রাম এলাকায় জড়ো হয় বৃহত্তর জৈন্তা পাথর শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন রেজি নং-চট্ট-১৯০৯ এর বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরা। বিজিবির হামলার প্রতিবাদে দুপুর ২টায় আদর্শগ্রাম এলাকায় সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক অবরোধ করে হামলার ন্যায় বিচার দাবী শ্রীপুর ক্যাম্পের সদস্যদের অপসারন এবং আহতদের সুচিকিৎসার দাবী জানায়।
তারা আরও বলেন- আমরা শান্তি প্রিয় পাথর শ্রমিক দীর্ঘ দিন হতে পাথর লোড-আনলোড পেশায় কাজ করে যাচ্ছি। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সাথে কখনো এই সংগঠনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। শ্রীপুর ক্যাম্পের সদস্যরা রাতে অর্থের বিনিময় বিজিবি সীমান্ত এলাকা হতে পাথর আহরনের সুযোগ করে দেয়। আমরা আমাদের ভূখন্ডে পাথর লোড করতে গেলে বিজিবি হামলা চালায়। আমরা সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক অবরোধ করি। অবরোধের ফলে রাস্তার উভয় পাশে যাত্রীবাহী, মালবাহী সহ পর্যটকবাহী কয়েক হাজার গাড়ী আটকা পড়ে।
এদিকে অবরোধের ঘটনার সংবাদ পেয়ে জৈন্তাপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জের নির্দেশে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ প্রেরণ করা হয়। ঘটনার খরব পেলে বৃহত্তর জৈন্তা পাথর শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুর রব, ট্রাক চালক শ্রমিক ইউনিয়নের জৈন্তাপুর আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মোঃ নুরু মিয়া, সহ বিভিন্ন ইউনিটের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক এবং এলাকার গন্যমান্যরা ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করেন।
জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে জৈন্তাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এখলাছুর রহমান ঘটনাস্থলে যান এবং আন্দোলনকারী শ্রমিকনেতাদের নিয়ে আলোচনায় বসে ঘটনার সুষ্ট সমাধানের আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা সড়ক হতে অবরোধ তুলেনেয় এবং যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এ বিষয়ে শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মঞ্জুর এলাহী সম্রাট ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুর রব জানান- আমাদের সংগঠনের সদস্যরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, এছাড়া আমার সংগঠনের সদস্যরা গর্ত হতে কিংবা সীমান্ত হতে বালু পাথর উত্তোলন করে না। তারা শুধুমাত্র ট্রাকে পাথর বোঝাইয়ের কাজ করে। বিজিবির এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাই এবং শ্রীপুর ক্যাম্পের সকল সদস্যদের প্রত্যাহার দাবী করেন একই সাথে আহতদের সুচিকিৎসা এবং তাদের বেলাচার ক্ষতি পূরণ দাবী করেন। অন্যতায় তারা কঠোর কর্মসূচী দেবেন। এজন্য আমরা সংগঠনের জরুরী বৈঠক আহবান করেছি।
জৈন্তাপুর ইউপি চেয়ারম্যান এখলাছুর রহমান বিজিবি কর্তৃক হামলার ও বেলচা ভাংচুরের ঘটনার বিষয় স্বীকার করে তিনি জানান- আমি নির্বাহী স্যারের আদেশ পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌছে আন্দোলনকারীদের সাথে আলোচনা করে সুষ্ঠু বিচার পাওয়ার আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা সড়ক হতে তাদের অবরোধ তুলে নেয়। তিনি আরও বলেন শান্তিপ্রিয় এলাকায় অতিতে এ ধারনের কোন ঘটনা ঘটেনি আশা করি তাদের ঊর্ধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আমরা সুষ্ঠু বিচার পাব।
এ বিষয়ে ৪৮ বিজিবির শ্রীপুর ক্যাম্পে মোবাইল ফোলে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও ফোন রিসিভ হয়নি।