কাজিরবাজার ডেস্ক :
মফস্বলে এবং গ্রাম এলাকার হাসপাতালে চিকিৎসকরা দায়িত্ব পালন না করায় আবারও বিরক্তি প্রকাশ করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, ‘সরকার প্রতিষ্ঠান বানিয়ে দেবে আর চিকিৎসক সংকটে মানুষ সেবা পাবে না তা হতে দেয়া হবে না।’
সোমবার বিকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি এ কথা বলেন।
এ নিয়ে পরপর দুই দিন চিকিৎসকদের ওপর বিরক্তি জানালেন প্রধানমন্ত্রী। আগের দিন এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘পদ আমরা সৃষ্টি করে দিয়েছি। কিন্তু সেখানে আমরা ডাক্তার পাই না। নিয়োগও আমরা দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু কেন এই অবহেলা মানুষের প্রতি। এটা নিশ্চিয়ই জনগণ আকাক্সক্ষা করে না। সেটা আমি আপনাদের ভেবে দেখার জন্য অনুরোধ করব।’
চিকিৎসকদের কর্মস্থলে অনুপস্থিতির এই প্রবণতা নতুন নয়। এমনও উদাহরণ আছে, প্রত্যন্ত এলাকায় কেবল মাসে একবার গিয়ে পুরো মাসের উপস্থিতির সই করে আসেন চিকিৎসকরা আর আসার আগে বেতন নিয়ে আসেন।
চিকিৎসকদের এই অনিয়ম নিয়ে নিয়মিত সংবাদ প্রকাশ করে গণমাধ্যমগুলো। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী নানা সময় হাসপাতালে না গেলে চাকরি ছেড়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন চিকিৎসকদের প্রতি। বলেছেন, তারা নতুন নিয়োগ দিয়ে দেবেন। কিন্তু হাসপাতালে যারা যান না, তারা চাকরিও ছাড়তে রাজি নন।
প্রধানমন্ত্রী তার দীর্ঘ বক্তব্য স্বাস্থ্যখাতে তার সরকারের নেয়া নানা উদ্যোগ তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে তার সরকারের করা কমিউনিটি ক্লিনিক বিএনপির বন্ধ করে দেয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন। জানান, ২০০৯ সালে দ্বিতীয় দফা সরকারে ফেরার পর আবার এই ক্লিনিকগুলো চালু হয়েছে। সেখান থেকে ৩৫ প্রকার ওষুধ বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ডাক্তার-নার্স সবই নিয়োগ দিচ্ছি। তারপরও দুঃখজনক যে, আমাদের উপজেলায় ডাক্তার থাকে না।’
‘এমন এমন জায়গা রয়েছে, হয়তো দেখা যাচ্ছে অপারেশন থিয়েটার পরে আছে কিন্তু অপারেশন করার মতো ডাক্তার-নার্স নেই। আমরা শুধু প্রতিষ্ঠান করে যাব আর সেগুলো অবহেলিত থাকবে এটা কিন্তু হতে পারে না।’
মানুষের চাহিদা মতো মেডিকেল কলেজ, সরকারি-বেসরকারিভাবে বিভিন্ন ইনস্টিটিউট করে দেয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘মানুষের সেবা দেওয়া প্রত্যেকর দায়িত্ব। আমি আশা করি, সেবাটা মানুষ পাবে।’
অনুষ্ঠানে দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন পরিকল্পনাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। পদ্মা সেতু চালু হলে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত যে রেললাইন আছে, সেটি প্রথমে বরিশাল এবং পরে পায়রা সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত সেটি সম্প্রসারিত বলেও ঘোষণা দেন তিনি।
এই রেল লাইন করতে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলেও জানানো হয় অনুষ্ঠানে।
পাবনার রূপপুরের পর বরিশালেও ২৪০০ মেগাওয়াটের পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানান শেখ হাসিনা। জানান, এ জন্য বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলে কয়েকটি দ্বীপাঞ্চলে জরিপও চালানো হয়েছে।
বরিশালে একশটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা, পাইপলাইনের গ্যাস সরবরাহের উদ্যোগ নেয়ারও ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসের অনুষ্ঠাস্থলে বিশেষ অতিথি ছিলেন- স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য তালুকদার মো. ইউনুস, বরিশাল-৫ আসনের সংসদ সদস্য জেবুন্নেসা আফরোজ, সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ, চিকিৎসকদের সংগঠন বিএমএ সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, মহাসচিব মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী প্রমুখ।