বাংলাদেশে নিরাপদ সড়কের দাবিতে যত আন্দোলন হয়েছে, যত আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে, যত সুপারিশ এসেছে সম্ভবত আর কোনো বিষয়ে তা হয়নি। শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আন্দোলনের মুখে ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ পাস হয় ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর। ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর থেকে আইনটি কার্যকর করা হয়। সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ পাস হওয়ার প্রায় চার বছর পর গত ২৭ ডিসেম্বর ‘সড়ক পরিবহন বিধিমালা ২০২২’ কার্যকর করা হয়েছে। সড়ক পরিবহন আইনে বলা আছে, কোনো মোটরযানের কারণে দুর্ঘটনায় কেউ আঘাতপ্রাপ্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে কিংবা মারা গেলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা তার পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ বা চিকিৎসা খরচ দিতে হবে। কিন্তু এত দিন বিধিমালা না হওয়ায় সেটা কার্যকর হয়নি। এখন বিধিমালা জারি হওয়ায় দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা সেটা দাবি করতে পারবে। ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য আর্থিক সহায়তা তহবিল নামে একটি তহবিল গঠন করা হবে। এই তহবিল পরিচালনা করতে প্রতিটি মোটরযানের বিপরীতে মালিকদের কাছ থেকে বার্ষিক বা এককালীন চাঁদা আদায় করা হবে। মোটরযান মালিক বা প্রতিষ্ঠান তহবিলে এই চাঁদা দিতে বাধ্য।
এদিকে সড়ক পরিবহন বিধিমালা-২০২২ জারি হওয়ার পর গত ২৮ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের ৭৫টি পরিষেবার ফি বেড়েছে। এতে ব্যক্তিমালিকানাধীন গাড়ির পাশাপাশি খরচ বাড়ছে গণপরিবহনের। এ নিয়ে বাস মালিকরা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া না জানালেও আপত্তি তুলেছে ট্রাক মালিক সমিতি। এমন পরিস্থিতিতে আজ রবিবার দুপুরে বিআরটিএর কার্যালয়ে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতিসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ। ধারণা করা হচ্ছে, বৈঠক থেকে বর্ধিত ফি কমানোর প্রস্তাব উঠবে। একটি সূত্রের খবরে বলা হয়েছে, ফি যেহেতু বিধিমালার ওপর নির্ভর করে বেড়েছে, তাই চাইলেই ফি কমানো সম্ভব হবে না। কমাতে হলে নতুন জারি হওয়া বিধিমালা সংশোধন করতে হবে। ফি কমানো না হলে বাস মালিকরা ভাড়া বাড়ানোর দাবি তুলবেন। প্রয়োজনে চাপ সৃষ্টি করা হবে বলেও খবরে প্রকাশ।
বাংলাদেশে যানবাহন মালিক-শ্রমিকদের কাছে সাধারণ মানুষ অনেকটাই জিম্মি। যাতায়াতের জন্য গণপরিবহনই প্রধান ভরসা। যেহেতু সরকারি বা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পরিবহন সংস্থা বিআরটিসিকে একেবারেই অকার্যকর করে ফেলা হয়েছে, সেই সুযোগ নিয়ে গণপরিবহন মালিকরা সহজেই যাত্রীদের জিম্মি করেন। কোনো নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে থাকার ব্যাপারে তাঁদের আপত্তি। রাজধানীতে ই-টিকিট চালুর পরও গণপরিবহনে কোনো শৃঙ্খলা ফেরেনি। নির্দিষ্ট স্টপেজে কোনো বাস দাঁড়ায় না। যত্রতত্র যাত্রী ওঠানো ও নামানো হয়।
সড়ক পরিবহন আইন ও এর বিধিমালা করা হয়েছে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য। সেটি আগে নিশ্চিত করুন। আমরা আশা করব গণপরিবহন মালিকরা বিষয়টি বিবেচনা করবেন।