কাজিরবাজার ডেস্ক :
জাতীয় সংসদে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলে সই করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। সোমবার তিনি এই বিলে সই করেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন।
রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর কোন বিল আইন হিসেবে গণ্য হয়। এখন এটি গেজেট আকারে প্রকাশ করবে সরকার।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল পাস হয়। প্রস্তাবিত এই আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই সম্পাদক পরিষদ ও সাংবাদিক ইউনিয়নগুলো এর বিশেষ কয়েকটি ধারা নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে আসছে।
গত ২৯ জানুয়ারি এই আইনটির খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর থেকেই তুমুল বিতর্ক হয়। বিশেষ করে অনুমতি ছাড়া নথি বা তথ্য কমি করলে গুপ্তচর হিসেবে বিচার করা হবে-এমন একটি বিধান থাকায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব হবে বলে সমালোচনা উঠে। আর এই ধারাসহ বেশ কিছু ধারা বাদ দিতে গণমাধ্যমকর্মীরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দেন দরবার করে। আর সরকারও তাদের মতামতের আলোকে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেয়।
গণমাধ্যমকর্মীদের পাশাপাশি বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনাররাও বিভিন্ন সংশোধনীর প্রস্তাব করে সরকারের কাছে। আর গত ৯ এপ্রিল তা সংসদে উত্থাপন করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার।
খসড়া আইনটি সংসদে তোলার পর তা পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দিতে সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। সংসদীয় কমিটিকে প্রথমে চার সপ্তাহ দেওয়া হলেও পরে দুই দফায় তিন মাস সময় বাড়িয়ে নেয় তারা। তবে শেষ দফায় এক মাস সময় নিলেও একদিনের মধ্যে দিন পরেই বৈঠক করে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে সংসদীয় কমিটি।
প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার আগে দুই দফায় সম্পাদক পরিষদ, টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন অ্যাটকো, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সঙ্গে বৈঠক করে সংসদীয় কমিটি; তবে তাতেও উদ্বেগ প্রশমিত হয়নি।
সংসদীয় কমিটিতে সম্পাদক পরিষদ খসড়া আইনের নয়টি ধারা নিয়ে আপত্তি ও উদ্বেগ প্রকাশ করে। সম্পাদকেরা বলেছেন, প্রস্তাবিত এই আইন বাকস্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলে দেবে।
এমন পরিস্থিতিতে গত ২৯ সেপ্টেম্বর সম্পাদক পরিষদ মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করে। এরপর তথ্যমন্ত্রীর অনুরোধে পরিষদ সেই কর্মসূচি স্থগিত করে। পরে সচিবালয়ে তথ্যমন্ত্রী ছাড়াও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীর সঙ্গে সম্পাদক পরিষদের বৈঠক হয়। সেখানে তিন মন্ত্রী সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগ নিরসনে উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দেন।
গত মঙ্গলবার সংসদে পাস হওয়া বিলটিতে সই করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। পরে এ-সংক্রান্ত নথিটি সংসদ সচিবালয় থেকে রাষ্ট্রপতির দপ্তরে পাঠানো হয়। এরপর আজ বিলে সই করেন রাষ্ট্রপতি।