কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনপ্রতিনিধিরা যে দলেরই হোন, জনগণ যাকে নির্বাচিত করেছে তার সম্মান রাখবে সরকার। তাকে কাজ করার সুযোগ দিতে সব ধরণের সহায়তা করবে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেছেন, সম্প্রতি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনগুলোতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা বিজয়ী হওয়ায় এটাই প্রমাণিত- দেশে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রয়েছে এবং গণতন্ত্র শক্ত ভিতের ওপর প্রতিষ্ঠিত। গণতন্ত্র সুদৃঢ় বলেই জনগণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে নিজ পছন্দের প্রার্থী, সরকারী এবং বিরোধীদলীয় সদস্যকে অবাধে ভোট দিতে পেরেছে। প্রত্যেক এলাকার মানুষ অবাধে তাদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। গণতন্ত্র মানে জনগণের ভোটের অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার। সেই অধিকারের প্রতি আমরা সম্পূর্ণ নিবেদিত। আমরা চাই জনগণের অধিকার জনগণের হাতেই থাকবে। আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব- স্লোগানটা আমারই ছিল।
বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর তেজগাঁও কার্যালয়ে রাজশাহী এবং সিলেটের নবনির্বাচিত মেয়র এবং কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার কঠোর অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, অনিয়ম-দুর্নীতি করলে তিনি যে দলেরই হন কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। সরকার কোন ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি এবং জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাস এবং অসামাজিক কর্মকা- বরদাশত করবে না। এক্ষেত্রে কেউই রেহাই পাবেন না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের বিজয়ী হওয়ায় এটাই প্রমাণিতÑদেশে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রয়েছে এবং গণতন্ত্র শক্ত ভিতের ওপর প্রতিষ্ঠিত। জনগণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নিজস্ব পছন্দের প্রার্থী, সরকারী এবং বিরোধীদলীয় সদস্যকে অবাধে ভোট দিতে পেরেছে। প্রত্যেক এলাকার মানুষ অবাধে তাদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আর সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় ছিল বলেই এই উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তার সরকারের লড়াই-সংগ্রামের কথা তুলে ধরে বলেন, আজ জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তারা তাদের ইচ্ছেমতো প্রার্থীকে নির্বাচিত করার সুযোগ পাচ্ছে। একটি দেশের উন্নয়নে দেশে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারা বজায় থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, গত ১০ বছর দেশে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় ছিল বলেই বাংলাদেশ প্রতিটি ক্ষেত্রে বিস্ময়কর উন্নতি সাধিত হয়েছে।
দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশে দিন বদলের অঙ্গীকার নিয়েই তার সরকার ২০০৯ সালে সরকার গঠন করে। আজ আপনারা সেই দিন বদল নিজেরাই দেখতে পাচ্ছেন, জনগণ ক্ষুধা থেকে মুক্তি পেয়েছে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ এবং এই উন্নয়নের ধারাকে টেকসই রূপ দিতে তার সরকার ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ নামে আগামী এক শ’ বছরের পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে।
সিলেটে একটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তার সরকারের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার কখনই কোন রাজনৈতিক ভিত্তিতে স্থানীয় সরকারের বাজেট বরাদ্দ করে না। অতীতে তার সরকার রাজশাহী এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশনের জন্য ব্যাপক বরাদ্দ প্রদান করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কে কোন্ দলের মেয়র সেটা চিন্তা না করে জনগণের কল্যাণের কথাটাই সরকার আগে চিন্তা করে। ভোট জনগণের সাংবিধানিক অধিকার আর এই সাংবিধানিক অধিকারের যথাযথ প্রয়োগের ওপরই গণতন্ত্র নির্ভরশীল। আর আমরা জনগণের এই অধিকারকে সমুন্নত রাখতে বদ্ধপরিকর এবং যেকোন মূল্যেই তাদের এই অধিকার রক্ষা করা হবে।
নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা জনগণের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের শুধু নিজেদের সম্পদ গড়ে তোলায় মনোনিবেশ হলেই চলবে না। জনগণ কিভাবে সম্পদশালী হতে পারে সেদিকেও লক্ষ্য রেখে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, যারাই ক্ষমতায় আসুক দেশের উন্নয়ন যেন থেমে না যায়। বাংলাদেশ যেন পিছিয়ে না যায়। জনগণ অনেক আশা-আকাক্সক্ষা নিয়ে আপনাদের ভোট দিয়েছে, তাদের আশা পূরণে জনপ্রতিনিধিদের কাজ করতে হবে।
নির্বাচত মেয়র ও কাউন্সিলরদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা যে দলই করেন না কেন, আপনাদের এটাই সবসময় মাথায় রাখতে হবে, জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করতে হবে। দলীয় পরিচয়ে নয়, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা পাবেন। এ সময় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের কথা তুলে ধরে বাংলাদেশকে ’২১ সালের মধ্যে মধ্য আয় ও ’৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ গড়ার লক্ষ্যের কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া ২১০০ সাল পযন্ত ডেল্টা পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দেশকে উন্নত করতে চাই এবং দেশের মানুষের শান্তি, উন্নয়ন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই। আগামী ডিসেম্বরে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নতুন সরকার গঠন করবে। নবনির্বাচিত মেয়র এবং কাউন্সিলরদের সরকারের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সকল রকমের সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন,আমরা বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই, এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজশাহীর মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর শপথ বাক্য পাঠ করান এবং এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন কাউন্সিলরদের শপথ বাক্য পাঠ করান। স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব জাফর আহমেদ খান শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, রাজশাহী এবং সিলেটের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, ৪০ কাউন্সিলর, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এবং ৩৬ কাউন্সিলর এ বছর ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নির্বাচিত হন।