বাংলাদেশ উন্নয়নের গতিধারায় সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বলয়ের বিভিন্ন সূচকে অর্ধাংশ নারীও সমানতালে ভূমিকা রেখে চলেছে। বিশেষ করে সরকারী, বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, কর্পোরেট পেশা থেকে শুরু করে কৃষি, নির্মাণ প্রকল্প, পোশাক শিল্প কারখানায় নারীর সচেতন কর্মযোগ সামগ্রিক সমৃদ্ধির নিয়ামক। শারীরিকভাবে অপেক্ষাকৃত দুর্বল এবং সামাজিক রক্ষণশীলতার জালে আবদ্ধ নারীদের হরেক রকম বিপত্তি আর বিভ্রান্তির শিকার হতে হয় কর্ম জীবনের উপস্থিত পরিস্থিতিকে সামলাতে গিয়ে। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে আসে পেশাগত জীবনে সিংহভাগ নারীই অবহেলা, অপমান আর অবিচারের আবর্তে পড়ে। সামাজিক বিধি নিষেধের কঠোর বেড়াজাল আজ অবধি বহু নারীর চলার পথ নিরাপদ, নির্বিঘœ আর মুক্ত করতে পারেনি। সংসার সামলিয়ে নারীকে তার পেশাগত জীবনের দায়-দায়িত্ব সম্পন্ন করতে হয়। স্বামী-স্ত্রী দু’জনই চাকরিজীবী। কিন্তু সন্তান পালন থেকে আরম্ভ করে তার শিক্ষা কার্যক্রম ছাড়াও সব ধরনের ঝক্কি ঝামেলা এসে পড়ে মায়ের কাঁধে। পারিবারিক সমস্ত কর্তব্য নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে যখন কোন নারী তার অফিসের গন্তব্যের দিকে রওনা হয় তখন তাকে নতুন আর এক বিড়ম্বনার মুখোমুখি হতে হয় সড়ক পরিবহনে। গণপরিবহনে নারীদের দুরবস্থার চিত্র এখন নিত্য সহনীয় অবস্থায় গিয়ে পৌঁছেছে। চালক থেকে আরম্ভ করে হেলপারের অসৌজন্যমূলক আচরণে নারী যাত্রী যে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে, তা নতুন করে বলার আর কিছুই নেই। তার ওপর যদি পুরুষ সহযাত্রীর রোষানলে পড়ে তাহলে তো ষোলোকলা পূর্ণ হয়।
অপেক্ষাকৃত উন্নতমানের সম্মানজনক পেশায় নিযুক্ত নারীদের কর্মস্থল অনেকটা শোভন এবং শালীন। কিন্তু নির্মাণ শ্রমিক থেকে শুরু করে পোশাক শিল্পে নিয়োজিত নারী পেশাজীবীদের জীবন যে কত দুর্বিষহ এবং সমস্যায় আবর্তিত তা বলে শেষ করা যায় না। পুরুষ সহকর্মীর কটূক্তি, অশালীন ব্যবহার তার চেয়েও বেশি প্রাপ্ত সুবিধা থেকে বঞ্চনার শিকার হওয়া-সব মিলিয়ে এক অসহনীয় অবস্থায় পড়ে নারী শ্রমিকরা। মজুরির বেলায়ও হয় চরম বৈষম্য। তার ওপর আছে শিল্প কারখানার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, যার সরাসরি প্রভাবে আক্রান্ত হয় নারীরাই বেশি। সেনিটেশন সমস্যা এসব গতরখাটা প্রতিষ্ঠানের নিত্য নৈমিত্তিক দুঃসহ যন্ত্রণা। নারীদের জন্য উপযোগী এবং স্বাস্থ্যসম্মত কোন ওয়াশরুমও থাকে না, যেখানে তারা প্রয়োজনীয় সঙ্কট নিরসন করতে পারে। নিম্ন কর্মজীবী নারী শ্রমিকরা তাদের বক্তব্যে কারখানার সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট করার দায়ভাগ চাপায় পুরুষ সহকর্মীদের ওপর। তাদের উত্ত্যক্ত করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন উসকানিমূলক বক্তব্য এমনকি অনেক সময় শারীরিকিভাবেও নিগৃহীত হতে হয় পুরুষ সহকর্মী কাছ থেকে। কর্মক্ষেত্রে নারীরা যদি নিশ্চিন্তে, নির্বিঘেœ তাদের ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয় তাহলে উন্নয়নের নিরবচ্ছিন্ন গতিধারায় তার প্রভাব দৃশ্যমান হতে সময় লাগবে না। অবাধ ও মুক্ত পরিবেশে নারীরা তাদের পেশাগত জীবনকে যেন সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যথাযথ নজর দিতে হবে। কর্মস্থলের পরিবেশ-পরিস্থিতি স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন হওয়া একান্ত আবশ্যক।