রাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যবস্থায় পরিচয় ও অবস্থানের নিরিখে নাগরিকদের জন্য কোটার ব্যবস্থা রাখা হয়। এর উদ্দেশ্য ধর্ম-বর্ণ-জাতি-গোত্র-লিঙ্গ নির্বিশেষে সবার জন্য ন্যূনতম রাষ্ট্রীয় সুযোগ নিশ্চিত করা। আধুনিক রাষ্ট্রীয় কাঠামো যেখানে রয়েছে সেখানে কোটা কোথাও নাম ভিন্ন হতে পারে—ব্যবস্থা রয়েছে। অগ্রসর বা সংখ্যাগুরু কোনো পক্ষের জন্য কিঞ্চিৎ বঞ্চনামূলক হলেও সমাজের ও রাষ্ট্রের পিছিয়ে পড়া অংশের জন্য এ ব্যবস্থা কল্যাণজনক। এ কথাও মনে রাখা উচিত, কোটা পদ্ধতির অপপ্রয়োগও হয়ে থাকে। বাংলাদেশে এর বহু নজির রয়েছে, রয়েছে অন্য দেশেও। তাই সময়ে সময়ে সংস্কার করে ব্যবস্থাটিকে সচল রাখা উচিত। কেননা সংস্কারহীনতা অচলায়তন সৃষ্টি করে। এতে নাগরিকের যত না লাভ তার চেয়ে অনেক বেশি লাভ স্বার্থান্বেষী মহলের।
স্বার্থান্বেষী মহলের লাভের কারবারের অনেক দৃষ্টান্ত এ দেশে রয়েছে। সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটার অপব্যবহার তারা করেছে। সামরিক শাসনামলে এবং বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে মুক্তিযোদ্ধা কোটার সুবিধা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা পাননি, এ নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। ভুয়া সনদ ব্যবহার করে প্রচুর অমুক্তিযোদ্ধাও এ সুবিধা নিয়েছেন বা তাঁদের দেওয়া হয়েছে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা বা তাঁদের উত্তরাধিকারীরা এখনো যে খুব সুবিধা পাচ্ছেন তা নয়। আওয়ামী লীগ সরকার তাঁদের মর্যাদা রক্ষা ও ভাতাপ্রাপ্তির ব্যবস্থা করেছে। এটি নিঃসন্দেহে ভালো কাজ। তবে এখনো এ কোটার সুবিধা অনৈতিকভাবে কেউ নিচ্ছেন না তা নয়। বেশ বড় পদের আমলারা পদোন্নতির জন্য, সরকারের কৃপা পাওয়ার জন্য ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ ব্যবহার করেছেন এ কথা গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছে। অন্যান্য কোটার অপব্যবহারের চেষ্টাও করা হয়।
এই পরিপ্রেক্ষিতে এবং কর্মসংস্থানের তাগিদে সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলন শুরু হয়। এ নিয়ে অপ্রীতিকর অনেক ঘটনা ঘটেছে এবং ঘটছে। আন্দোলনকারীদের বক্তব্যে-স্লোগানে মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিষয়টি বেশি উচ্চারিত হওয়ায় সমাজ ও রাষ্ট্রের অনেকের কাছে ভিন্ন বার্তা পৌঁছেছে। প্রধানমন্ত্রী কোটা সংস্কারের ঘোষণা বেশ আগেই দিয়েছেন; ছাত্রদের আশ্বস্ত করেছেন কিন্তু আমলাতন্ত্র তাঁকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে সময়মতো পদক্ষেপ না নিয়ে। অবশেষে একটি কমিটি হয়েছে। তারা সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুক, সেটাই চাই।