বাজারে বেড়েছে জীবন রক্ষাকারী ওষুধের দাম। ২০২২ সালে কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়া শুধু ওষুধ কোম্পানিগুলোর সুপারিশে ২০টি জেনেরিকের ৫৩টি ওষুধের দাম বৃদ্ধি করে ঔষধ প্রশাসন। সে সময় প্যারাসিটামল, হৃদরোগ, ব্যথানাশক ও গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের দাম ৫০ থেকে ১৩৪ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। ওষুধের দাম বৃদ্ধির এই রেশ কাটতে না কাটতেই অতি সম্প্রতি দেশের শীর্ষ ছয় প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদিত ২৩৪টি জীবন রক্ষাকারী ওষুধের দাম ১০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। তার সুবিধা নিচ্ছে অসাধু কিছু ব্যবসায়ী। ফলে ওষুধের মূল্য প্রকৃত মূল্যের তুলনায় অনেক বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। এতে হিমশিম খাচ্ছেন জনগণ। ১৯৮২ সালের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ ১১ (১) ধারা অনুযায়ী স্পষ্ট বলা আছে, সরকার অফিসিয়াল গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে ওষুধের দাম নির্ধারণ করতে পারবে। অথচ এই নিয়মের তোয়াক্কা না করে ২০২২ সালেই ওষুধ প্রশাসনে দাম বাড়ানো হয়েছে দু’বার। এছাড়াও ফার্মেসি ভেদেও দামের মূল্য পার্থক্য রয়েছে। কোনো কোনো ওষুধের দাম ক্ষেত্রবিশেষে দ্বিগুণও রাখা হয়- যা রীতিমতো অন্যায়। ওষুধের দাম বাড়ায় নিম্নআয়ের রোগীরা বিপাকে পড়ছেন। বিশেষ করে যাদের নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হয়- এ ধরনের রোগীর রীতিমতো নাভিশ্বাস ওঠেছে।
এ কথা সত্য, ওষুধ রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ওষুধ রপ্তানি আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। ফলে পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে দেশ। আমেরিকা, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের ১৫১টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে বাংলাদেশ। দেশের ৯৮ শতাংশ ওষুধের চাহিদা মিটিয়ে এসব দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। ওষুধ শিল্পের স্থানীয় বাজারের পরিমাণ ২০০ বিলিয়ন ডলার। দেশে এখন ২৫৭টি নিবন্ধিত ওষুধ কোম্পানি আছে। এর মধ্যে ১৫০টি সক্রিয়ভাবে তাদের কাজ করে যাচ্ছে। এটা দেশের জন্য ইতিবাচক দিক। এই ইতিবাচক সংবাদের মধ্যে দুঃখজনক সংবাদ হচ্ছে, ঢাকা শহরের প্রায় ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। যা রোগীর জীবন ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে বাজারে ২৩ ধরনের ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। এটা দ্বারা এটাই প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত হয় যে, বাজার তদারকির কেউ নেই। আমরা মনে করি, নিয়মিত বাজার তদারকির ব্যবস্থা না থাকলে ওষুধের দাম আরও বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে সাধারণ মানুষ ওষুধ কেনার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, দেশে বেসরকারিভাবে পরিচালিত ২৬৯টি এ্যালোপ্যাথিক ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি প্রায় ২৪ হাজার আইটেমের মেডিসিন উৎপাদন করে থাকে। এর বাইরে সরকারিভাবে উৎপাদিত ১১৭ ধরনের ওষুধ রয়েছে, যার দাম নির্ধারণ করে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। উৎপাদনভিত্তিক ও প্রশিক্ষিত জনশক্তি বাড়ায় এ খাতের যথেষ্ট উন্নতি হচ্ছে। গত কয়েক বছরে এই খাতের উন্নতি বেশ দৃশ্যমান। এভাবে অযৌক্তিকভাবে ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এভাবে লাগামহীনভাবে যদি ওষুধের দাম বাড়তেই থাকে তাহলে সাধারণ রোগী, যারা স্বল্প আয়ের এবং প্রবীণ অবসরে আছেন তাদের অবস্থা কী হতে পারে। আমাদের প্রত্যাশা- সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
