প্রবাসে নারীর নিরাপত্তা

14

প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক কর্মী বিদেশে যায়। বেশির ভাগ যায় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে, বিশেষত সৌদি আরবে। পরিবারের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটানোর জন্যই তারা বিদেশে যায়। গত শতকের আশির দশক থেকে এ প্রক্রিয়া চলছে। প্রচুর টাকা খরচ করে, নানা বিড়ম্বনা সয়ে মানুষ বিদেশে যাচ্ছে। তাদের কষ্টের বিনিময়ে দেশ পাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স। এত দিন শুধু পুরুষ কর্মীরা যেত। কয়েক বছর ধরে নারী কর্মীরাও যাচ্ছে, মূলত গৃহকর্মী হিসেবে। তাদের বিদেশযাত্রার মাধ্যমে দুটি বিষয়ে অগ্রগতি ঘটবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল এক. কর্মসংস্থানে নারী-পুরুষের ব্যবধান কমবে এবং দুই. নারীর সক্ষমতা অর্জনের সুযোগ বাড়বে। সেসব যে একেবারেই হচ্ছে না, তা নয়। কিন্তু অল্প সময়ের অভিজ্ঞতা জানিয়ে দিচ্ছে, এসবের জন্য নারীদের অনেক মূল্য দিতে হচ্ছে। দেশের নিবর্তনমূলক পরিবেশ থেকে বাইরে গিয়ে আরো বেশি নিবর্তনের মধ্যে পড়ছে তারা। নারীরা কী পরিমাণ অসম্মান ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, তা গণমাধ্যম মারফত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
সৌদি আরব থেকে প্রতি মাসে প্রায় ২০০ নারী গৃহকর্মী দেশে ফিরে আসছে। তাদের সবার অভিজ্ঞতা কমবেশি একই রকম। তারা শারীরিক-মানসিক নির্যাতন, এমনকি যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে দিনের পর দিন। তাদের ভাষ্য, সৌদি পরিবারগুলো আকারে বেশ বড়। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিরতিহীন কাজ করতে হয়েছে তাদের। যাওয়ার আগে তাদের ধারণা ছিল, দেশটি ধন-সম্পদে ভরা। সে ধারণা মিথ্যা নয়; আবার অনেক বিষয়েই তাদের কোনো ধারণা ছিল না। ফিরে আসা নারীদের বক্তব্য যে দেশের কথা তারা এত দিন শুনেছে, সেখানে তাদের ঠিকমতো খাবার দেওয়া হতো না; কাপড়চোপড় দেওয়া হতো না। সৌদি পুরুষদের অমানুষিক যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে তারা। নির্যাতন সইতে না পেরেই তারা দেশে ফিরে এসেছে। নির্যাতনে মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছে অনেকে। এমন নির্যাতনের শিকার হতে হবে সেটি তাদের ধারণার মধ্যেই ছিল না।
দেশে হোক বা বিদেশে, নারীর কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে এ নিয়ে প্রশ্ন নেই। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করতে হবে। বিদেশে যারা যাচ্ছে তাদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্ট দেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে। এটি বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। কিন্তু সৌদি আরবে কী হয় জেনেও তারা মুখ বুজে আছে। নির্যাতিত নারী কর্মীরা স্থানীয় পুলিশ, বাংলাদেশ দূতাবাস ও স্বদেশি পুরুষ কর্মীদের সহায়তায় কর্মস্থল ত্যাগ করছে, পরে দেশে ফিরছে। এ বিষয়ে আগেই ভাবা উচিত ছিল সরকারের; ভাবেনি। এখন তাদের তৎপর হওয়া অতি জরুরি। নারীর উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন দরকার অবশ্যই; তবে তাদের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির বিনিময়ে নয়।