॥ মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান ॥
(পূর্ব প্রকাশের পর)
কুরআনের গবেষক : আহনাফ ইবনে কায়েস। আরব মরুর এক জানবাজ মুজাহিদ। শৌর্য আর সাহসে তিনি ছিলেন এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। আরবি সাহিত্যেও তিনি ছিলেন এক উঁচু মাপের সমঝদার ব্যক্তি। আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র চেহারা মোবারক দেখার সৌভাগ্য তাঁর হয়নি। কিন্তু পেয়েছেন নবী (সা.)-এর হাতে গড়া বহু সাহাবীর একান্ত সান্নিধ্য। একদিন তার সামনে এক ব্যক্তি কুরআনের এই আয়াতটি পড়ালেন: “আমি তোমাদের কাছে এমন একটি কিতাব নাজিল করেছি, যাতে তোমাদের কথা আছে, অথচ তোমরা চিন্তা গবেষণা করো না।” (সূরা আম্বিয়া : ১০) এই আয়াতটি তাঁকে যেন নতুন দিগন্তের দিকে আহবান জানালো। তিনি বুঝতে চেষ্টা করলেন, ‘যাতে শুধু তোমাদের কথাই আছে’ এই কথার অর্থ কী? তিনি চিন্তা করছিলেন আর অভিভূত হচ্ছিলেন। মনে হচ্ছিল কেউ যেন নতুন কিছু শোনাল। তিনি কুরআন নিয়ে বসে গেলেন। একে একে বিভিন্ন দল, গ্র“পের বর্ণনা তিনি পেতে শুরু করলেন। যেমন একদলে পরিচয় পেলেন, “এরা রাতের বেলায় খুব কম ঘুমায়, শেষ রাতে তারা আল্লাহর কাছে নিজের গুনাহ মাফের জন্য মাগফেরাত কামনা করে।” (সূরা যারিয়াত : ১৭-১৮) আবার একদলের পরিচয় পেলেন এভাবে, “তাদের পিঠ রাতের বেলায় বিছানা থেকে আলাদা থাকে, তারা নিজেদের প্রতিপালককে ডাকে ভয় ও প্রত্যাশা নিয়ে, তারা অকাতরে আমার দেয়া রিজিক থেকে খরচ করে।” (সূরা আস সাজদা : ১৬) কিছু দূর এগিয়ে যেতেই আবার পরিচয় পেলেন আরেক দলের। যাদের সম্পর্কে বলা হচ্ছে, “রাতগুলো তারা নিজেদের মালিকের সিজদা ও দাঁড়িয়ে থাকার মধ্য দিয়ে কাটিয়ে দেয়।” (সূরা আল ফুরকান : ৬৪) “যারা ব্যয় করে সচ্ছল এবং অসচ্ছল অবস্থায়, যারা রাগ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল এবং কোমল, আল্লাহ তো কল্যাণকামীদের ভালোবাসেন।” (সূরা আলে ইমরান ১৩৪) এরপর এলো আরেক দলের পরিচয়, “এরা (দুনিয়ার প্রয়োজনের সময়) অন্যদেরকে নিজেদেরই ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়, যদিও তাদের নিজেদের রয়েছে প্রচুর অভাব ও ক্ষুধার তাড়না। যারা নিজেদেরকে কার্পণ্য থেকে দূরে রাখতে পারে, তারা বড়ই সফলকাম।” (সূরা হাশর : ৯) অধ্যয়ন চলছে আর চিন্তার গভীরে ডুবে যাচ্ছেন আহনাফ। এবার পেলেন আরেক দলের পরিচয়, “এরা বড় বড় গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে, যখন এরা রাগান্বিত হয়, তখন (প্রতিপক্ষকে) মাফ করে দেয়, এরা আল্লাহর হুকুম মেনে চলে, এরা সালাত প্রতিষ্ঠা করে, এরা নিজেদের মধ্যকার কাজকর্মগুলোকে পরামর্শের ভিত্তিতে আঞ্জাম দেয়। আমি তাদের যা দান করেছি, তা থেকে তারা অকাতরে ব্যয় করে।” (সূরা আশ শুরা : ৩৭-৩৮) হযরত আহনাফ ছিলেন একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষ। নিজের সম্পর্কে তাঁর ধারণা ছিল স্বচ্ছ। আর কুরআনে পাওয়া মুমিনদের পরিচয়ের সাথে তিনি নিজেকে মেলাতে পারলেন না। বরং বলেই ফেললেন: হায় আল্লাহ! আমি তো এই কুরআনের কোথাও ‘আমাকে’ খুঁজে পেলাম না। আমার কথা কোথায়? আমার চরিত্র তো কোথাও নেই? অথচ এ কুরআনে তো তুমি সবার কথাই বলেছো। কিন্তু থামলেন না তিনি। বরং এগিয়ে চললেন নতুন উদ্যমে। এবার পেলেন আরও কতক মানুষের পরিচয়, যাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে- যখন তাদের বলা হয়, আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই, তখন তারা গর্ব ও অহংকার করে বলে, আমরা কি একটি পাগল ও কবির জন্য আমাদের মাবুদদের পরিত্যাগ করবো?” (সূরা সাফফাত : ৩৫-৩৬) তিনি এগিয়ে চললেন, পেলেন আরেক দলের পরিচয়, “যখন এদের সামনে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়, তখন এদের অন্তর অত্যন্ত নাখোশ হয়ে পড়ে, অথচ যখন এদের সামনে আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্যদের কথা বলা হয়, তখন অন্তর খুশিতে ভরে যায়।” (সূরা যুমার : ৪৫) আরেক দলের পরিচয়ও এলো তাঁর সামনে, “তোমাদের কিসে জাহান্নামের এই আগুনে নিক্ষেপ করলো? তারা বলবে- আমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করতাম না, আমরা গরিব মিসকিনদের খাবার দিতাম না, কথা বানানো যাদের কাজ আমরা তাদের সাথে মিশে সে কাজে লেগে যেতাম। আমরা শেষ বিচারের দিনটিকে অস্বীকার করতাম, এভাবে একদিন মৃত্যু আমাদের সামনে এসে গেল। (সূরা মুদ্দাসসির : ৪২-৪৭)হযরত আহনাফ এভাবে কুরআনে আঁকা এক একে অনেক দলের লোকদের চেহারার সাথে নিজেকে মেলাতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু মিলল না। শেষের গ্রুপের সাথেও মিলল না। শেষ গ্রুপের ব্যাপারে তো তিনি বলেই ফেললেন, আয় আল্লাহ! এ ধরনের লোকদের ওপর তো আমি খুবই অসন্তুষ্ট। আমি এদের ব্যাপারে তোমার আশ্রয় চাই। এ ধরনের লোকদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। তিনি যেমন নিজের ঈমানের ব্যাপারে আস্থাশীল ছিলেন, তেমনি গুনাহের ব্যাপারেও ছিলেন তিনি সমান সজাগ। কুরআনের পাতায় তাই তিনি এমন একটি চেহারা খুঁজে ফিরছিলেন, যাকে তিনি একান্ত নিজের বলে মনে করতে পারেন। তিনি মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলার ক্ষমা ও দয়ার ব্যাপারেও ছিলেন গভীর বিশ্বাসী। তাই তিনি কুরআনের পাতায় খুঁজে ফিরছিলেন এমন এক চেহারার, যেখানে তিনি পাবেন ভালো-মন্দ মেশানো মানুষের প্রতিচ্ছবি। তিনি গভীর মনোযোগের সাথে আবার গবেষণায় লেগে গেলেন।তিনি পেলেন এমন একদল মানুষের বর্ণনা, যাঁদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, “হ্যাঁ! এমন ধরনের কিছু লোকও আছে, যারা নিজেদের গুনাহ স্বীকার করে। এরা ভালো-মন্দ মিশিয়ে কাজ-কর্ম করে, কিছু ভালো কিছু মন্দ। আশা করা যায়, মহান আল্লাহ এদের ক্ষমা করে দেবেন। অবশ্যই আল্লাহতায়ালা বড়ই দয়ালু-ক্ষমাশীল।” (সূরা আত তওবা ১০২) হযরত আহনাফ ইবনে কায়েস এ আয়াতের সাথে নিজের অবস্থাকে ভালোভাবে বুঝতে চাইলেন, মেলাতে চাইলেন তাঁর জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ের সাথে। যখন হুবহু মিল খুঁজে পেলেন, বললেন, হ্যাঁ! এতক্ষণ পর আমি আমাকে উদ্ধার করেছি। আমি আমার গুনাহের কথা অকপটে স্বীকার করি, আমি যা কিছু ভালো কাজ করি তাও আমি অস্বীকার করি না। এটা যে মহান আল্লাহর একান্ত মেহেরবানি তা-ও আমি জানি। আমি মহান আল্লাহর দয়া ও রহমত থেকে নিরাশ নই। কেননা এই কুরআনেরই আরেক স্থানে বলা হচ্ছে : “আল্লাহর দয়া ও রহমত থেকে তারাই নিরাশ হয়, যারা গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট।” (সূরা আল হিজর : ৫৬) হযরত আহনাফ কুরআনের মর্ম অন্তরের অন্ত:স্থল থেকে বুঝার পর নীরবে বলে উঠলেন, হে মালিক- তুমি মহান, তোমার কুরআন মহান, সত্যিই তোমার এই কুরআনে দুনিয়ার জ্ঞানী-গুণী, পাপী-তাপী, ছোট-বড়, ধনী-নির্ধন সবার কথাই আছে। তোমার কুরআন সত্যিই অনুপম, সুন্দর। পাক-ভারতীয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন শায়েখ সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী (রহ.) তার এক রচনায় হযরত আহনাফ ইবনে কায়েসের এ ঐতিহাসিক গল্পটি বর্ণনা করেছেন। আসুন, আমরাও প্রত্যেকে খুঁজে ফিরি কুরআনে বর্ণিত দল-উপদলের সাথে আমাদের চরিত্রের। বুঝে নিই আমাদের প্রত্যেককে স্ব স্ব চরিত্র, কুরআনের সাথে হুবহু মেলানোর তৌফিক দান করুন আমিন।
খুব সহজেই কুরআনের অর্থ হৃদয়ঙ্গম করা সম্ভব : পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বারবার বলেছেন (আল-কামার ৫৪: ১৭, ২২, ৩২, ৪০) “আমি কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি বোঝার জন্য। অতএব, কোনো চিন্তাশীল আছে কি?” (অনুবাদ : মুহিউদ্দীন খান) কুরআনের এই আয়াতটি পড়ার পর আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে যাদের মাতৃভাষা আরবি নয় তাদের জন্য কুরআন বুঝা কেমন করে সহজ হতে পারে? তার মানে আল্লাহর এই বাণীতে এমন কোনো ইঙ্গিত লুকিয়ে রয়েছে যা আমরা বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছি। ভারতের ভূ-পদার্থবিদ এবং বিশিষ্ট কুরআন বিশেষজ্ঞ ড. আব্দুল আজিজ আব্দুর রহীম দীর্ঘ ২০ বছর গবেষণা করে কুরআন শিক্ষার যে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রণয়ন করেছেন তার মাধ্যমে যে কোনো সাধারণ মুসলিমের পক্ষে খুব সহজেই কুরআনের অর্থ হৃদয়ঙ্গম করা সম্ভব। ভারতের হায়দ্রাবাদ শহরে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘আন্ডারস্ট্যান্ড কুরআন একাডেমি’। কুরআনের মোট শব্দ সংখ্যা হলো প্রায় ৭৮,০০০। ড. আব্দুল আজিজ গবেষণা করে দেখেছেন, আমরা নিয়ত থেকে শুরু করে নামাজের মধ্যে যেসব দোয়া-দরুদ, সূরা ফাতিহাসহ কুরআনের শেষ পারার ছোট ছোট সূরা এবং কুরআনের সুপরিচিত আয়াত হামেশা তেলাওয়াত করি, তাতে যতগুলো শব্দ রয়েছে সেগুলো কুরআনে ৫৫,০০০ বার এসেছে, যা কুরআনের মোট শব্দ সংখ্যার ৭০ শতাংশ। কুরআনের মোট মৌলিক শব্দের সংখ্যা হচ্ছে প্রায় ১৮৫০। ড. আব্দুল আজিজের হিসাব মতে মাত্র ২৫০টি মৌলিক শব্দ শিখতে পারলেই কুরআনের ৭০ শতাংশ শব্দ জানা হয়ে যায়। সবচেয়ে আনন্দের কথা হলো, নামাজের প্রয়োজনীয় দোয়া ও সূরা পড়তে গিয়ে আমরা প্রায় ৫০টি বাক্য তেলাওয়াত করি, যার মধ্যে রয়েছে আনুমানিক ১৫০ থেকে ২০০টি শব্দ। কেবল এই বাক্যগুলো বোঝার চেষ্টা করলেই বাড়তি কোনো পরিশ্রম ছাড়া আরবি ভাষার কাঠামো সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া যাবে। ড. আব্দুল আজিজ হিসাব কষে দেখিয়েছেন, মনোযোগ ও আন্তরিকতার সাথে তার পদ্ধতি অনুসরণ করলে মাত্র ২০০ ঘণ্টার মধ্যে পুরো কুরআনের অর্থ আয়ত্তে আনা যায়। কেউ যদি সপ্তাহে কুরআন শিক্ষার জন্য মাত্র ৪ ঘণ্টা করে সময় বের করতে পারেন তাহলে এক বছরের মধ্যে এই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। কুরআন তেলাওয়াত করলে আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি নাজিল হয় (মুসলিম শরিফ ১১৬৭)। রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমাদের প্রতি আমি দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি, তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত এ দু’টি জিনিস আঁঁকড়ে ধরে রাখবে। এ দু’টি জিনিস হলো, আল্লাহর কিতাব (কুরআন) এবং আমার সুন্নাহ। (আবু দাউদ ৪৫৩৩)আল কুরআন অনুধাবন করলে জাতি যেসব সুবিধা লাভ করতে পারে মুসলিম হিসেবে সমাজের অধিকাংশ মানুষ যদি আল কুরআন অনুধাবন করতো তবে তাদের মধ্যে এমন কতিপয় গুণাবলি অর্জিত হতো, যাতে তারা সৎ মানুষে পরিণত হতে পারতো। সুতরাং কুরআন অনুধাবন করা মানুষের সংখ্যা যত বাড়বে সমাজ তত সুখী ও সমৃদ্ধ হবে। কুরআন অনুধাবনের মাধ্যমে সামাজিক যেসব উন্নয়ন সম্ভব তার কতিপয় দিক হলো : ১. মৌলিক সৎ গুণাবলি সম্পন্ন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে;২. মৌলিক দোষ-ত্র“টি সম্পন্ন মানুষের সংখ্যা কমে আসবে; ৩. মদ, জুয়া, খুন, রাহাজানি, ছিনতাই ও ধর্ষণের মত ভয়াবহ অন্যায় সমাজ থেকে হ্রাস পাবে; ৪. সমাজে সৎ ও ভালো ব্যবসায়ীর সংখ্যা বাড়বে, ফলে ভোক্তাগণ বিভিন্ন ধরনের ভেজাল, ওজনে কম দেয়া, মুনাফাখোরি, চোরাকারবারি, প্রতারণা ইত্যাদি থেকে অনেকাংশে মুক্তি পাবে;৫. সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জেঁকে বসা দুর্নীতি ও ঘুষ থেকে মানুষ পরিত্রাণ পাবে। অফিস-আদালতে যে হয়রানি হচ্ছে সাধারণ মানুষ তা থেকে অনেকাংশে পরিত্রাণ পাবে;৬. অসৎ টেন্ডারবাজির কারণে মানুষ আজ সরকারি যেসব সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তা অনেকাংশে হ্রাস পাবে এবং জনগণ উপকৃত হবে; ৭. রাজনীতির নামে আমাদের দেশে যেসব অনাচার এবং জনগণের অর্থ লুণ্ঠনের মহোৎসব চলে আসছে তা হ্রাস পাবে, ফলে জনগণ লাভবান হবে;৮. সমাজ থেকে ভেজাল ও প্রতারণা কমলে মানুষের খাদ্যের মান উন্নত হবে, দেশের মানুষ সুস্বাস্থ্যবান ও কর্মক্ষম হবে, গড় আয়ু বৃদ্ধি পাবে। ৯. দুর্নীতি কমলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন আরো বেগবান হবে; ১০. মানুষের মধ্যে সামাজিক শান্তি ফিরে এলে তাদের হতাশা হ্রাস পাবে, ফলে তা মানুষকে আরো বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে, সমাজ থেকে আত্মহত্যার পরিমাণ হ্রাস পাবে;১১. শুধু মুসলিমরাই নয়, যদি কোন অমুসলমানও কুরআনের পার্থিব শৃঙ্খলা সম্পর্কিত নির্দেশনা মেনে চলে তবে তারাও এর কল্যাণ ও শান্তি ভোগ করবে।
কুরআন অনুধাবনে আমাদের করণীয় : আমরা সমাজের একজন মুসলিম নাগরিক হিসেবে, যার যার অবস্থান থেকে বাংলা ভাষায় কুরআন অনুধাবনের ক্ষেত্রে কী করতে পারি সে বিষয়ে কতিপয় সুপারিশমালা পেশ করা হলো। ১. দেশের শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিটি ধারায় (সাধারণ, ইংরেজি মাধ্যম, কারিগরি ও মাদরাসা) প্রথম শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত কমপক্ষে ১০০ নম্বরের আল-কুরআন শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা এবং তাতে কুরআন পড়তে শেখা ও বুঝতে শেখার মত প্রয়োজনীয় বিষয়াদি অন্তর্ভুক্ত করা;২.সরকারিভাবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে প্রত্যেক জুমার মসজিদে বড়দের জন্য কুরআন পড়া ও অনুধাবনের জন্য স্বল্পমেয়াদি প্রোগ্রাম চালু করা; ৩. বাংলাদেশের হিফজ মাদরাসাসমূহে কুরআন মুখস্থের পাশাপাশি ন্যূনতম কুরআন বুঝার মত কতিপয় কুরআনিক শব্দার্থ ও মৌলিক প্রয়োজনীয় আয়াতগুলোর অর্থ শেখানোর ব্যবস্থা চালু করা; ৪. দেশের কওমি মাদরাসাগুলোতে এবতেদায়ি প্রথম শ্রেণি থেকে ন্যূনতম শরহে বেকায়া শ্রেণি পর্যন্ত ১০০ নম্বরের বাংলাভাষা চালু করা। ভালো বাংলা বুঝতে পারলে তা কুরআন অনুধাবনে সহায়তা করবে; ৫. কুরআন অনুধাবনের মাধ্যমে ইহ ও পারলৌকিক কল্যাণের বিভিন্ন দিক দেশের প্রচার মিডিয়ায় ইতিবাচকভাবে প্রচার করা; ৬. কুরআন পড়ি ও কুরআন বুঝি শ্লোগানে দেশকে মুখরিত করা; ৭. পরিবারের একজন সদস্যও যদি এমন থাকেন যিনি কুরআন পড়তে ও বাংলা অর্থ পড়ে বুঝতে পারেন তিনি প্রতিদিন অন্যদের নিয়ে আধা ঘণ্টার এমন একটি বৈঠক করা যেখানে ২/৩টি আয়াত পড়ে তার বাংলা অর্থ সকলকে বুঝিয়ে দেয়া যায়; ৮. সহজ ভাষায় সংক্ষিপ্ত আকারে তাফসির লেখা ও প্রকাশ করার চেষ্টা করা, মানুষের পকেটে বহনযোগ্য স্ব-স্ব তাফসির মুদ্রণ ও প্রচারের ব্যবস্থা করা; ৯. মসজিদের ইমাম সাহেবদের কুরআনকেন্দ্রিক ধারাবাহিক আলোচনার আয়োজন করা, জুম্মার খুতবার মাধ্যমে কুরআনের ব্যাখ্যা যথাযথভাবে তুলে ধরা; ১০. প্রত্যেকটি জুম্মার মসজিদে একটি করে তাক রাখা এবং তাতে কুরআনের অনুবাদ ও ব্যাখ্যা সংবলিত পর্যাপ্ত তাফসির রাখার ব্যবস্থা করা; ১১. কুরআনের ব্যাপারে যারা আন্তরিক তাদেরকে কুরআনের যথাযথ অনুশীলনের মাধ্যমে নিজেদেরকে অন্যের জন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করা যাতে অন্যরা কুরআনের প্রতি আকৃষ্ট হয়।
আল কুরআন প্রজ্ঞাময় ও হিকমাহপূর্ণ : কুরআন হলো জ্ঞানের সর্বোচ্চ স্তরের উপলব্ধি যার জন্য রাসূল (সা.)কে পাঠানো হয়েছে এবং এর ব্যবহারিক দিকের দয়া, রাহমাহ ও সৌন্দর্য আমরা রাসূল (সা.) এর যুগ থেকে সোনালি যুগের ইতিহাসে দেখতে পাই। সুবহানাল্লাহ!! আল্লাহর এতো এতো দয়া (সূরা আর রাহমান ১-২) যে তিনি একে প্রজ্ঞাময় কুরআন (সূরা ইয়াসিন ২) করে দিয়ে আমাদের চিন্তার, গবেষণার (সূরা মুহাম্মাদ) এবং এর থেকে সর্বোচ্চ উপকারের বাণী নাজিল করেছেন।আর এ কুরআনের সর্বোচ্চ হিকমাহর উপকারিতা পাওয়ার জন্য আল্লাহ পথও দেখিয়ে দিয়েছেন চিন্তার লেভেলের বিভিন্ন মাধ্যমে। সেগুলো-১. তাজাক্কুর-চিন্তা-ভাবনা করা। ২. আকল খাটানো- সহজাত (ফিতরাত) সত্য-মিথ্যার পার্থক্য উপলব্ধি। ৩. ফিকর করা- চিন্তাকে আরো গভীরে নিয়ে যাওয়া। ৪. তাদাব্বুর করা- সর্বোচ্চ লেভেলের চিন্তা-গবেষণা করা যা প্রজ্ঞার কাছে নিয়ে যাবে। এভাবে সমস্ত কুরআন জুড়েই শত শত আয়াতের শেষেই পাবেন আল্লাহ বিভিন্ন চিন্তাসূচক শব্দের মাধ্যমে আমাদের চিন্তাধারাকে শাণিত করে উপলব্ধির জন্য আহবান জানাচ্ছেন। লক্ষ্য করলেই দেখতে পাবেন তা’কিলুন, তাজাক্কারুন, তাফাক্কারুন শব্দগুলো প্রায় প্রত্যেক বড় বড় সূরাতেই আছে।“তারা কি কুরআন নিয়ে গবেষণা করে না নাকি তাদের অন্তর তালাবদ্ধ?” (সূরা মুহাম্মাদ : ৩৩) হযরত উমর (রা.)-এর সূরা বাকারাহ শেষ করতে ৩ বছর লাগার কারণ কী? চিন্তা, ফিকির, গভীরতর চিন্তা ও গবেষণা এবং প্রাজ্ঞতার উপলব্ধির মাধ্যমে আমল। তাঁরা কুরআন বুঝতে এসেছিলেন আল্লাহর (অসমাপ্ত)