এখন ফসল কাটার মৌসুম। মাঠে পাকা ধান কৃষকের আশা-ভরসা। অনেক জায়গায় ফসল কাটা শুরুও হয়েছে। গতবার অকালবন্যা, বাঁধ ভেঙে হাওর-জমি তলিয়ে যাওয়া, অতিবৃষ্টি প্রভৃতি কারণে বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে পড়েছিল কৃষক। অনেকের পক্ষে সে ধকল সারা বছরেও সামলে ওঠা সম্ভব হয়নি। শহরবাসীও সে বিপর্যয় এড়াতে পারেনি। বাড়তি দামে চাল কিনে খেতে হয়েছে তাদের। বরাবরের মতো এবারও পাকা ধানের ক্ষেত কৃষকের মুখ উজ্জ্বল করেছে। কিন্তু অবিরাম বৃষ্টি, কালবৈশাখী ও বজ্রপাতের কারণে মাঠের পাকা ধান নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে হাওরাঞ্চলের কৃষকরা। শ্রমিকের অভাবে পাকা ধান যথাপরিমাণে কাটতে পারছে না তারা। কেউ কেউ বজ্রপাতের আতঙ্কে মাঠে নামতে চাচ্ছে না। যতটুকুও বা কাটা সম্ভব হচ্ছে, অবিরাম বৃষ্টির কারণে তা শুকানো যাচ্ছে না। সমস্যা তো শুধু প্রাকৃতিক নয়, মানুষও বিপত্তির বড় কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ফসল রক্ষা বাঁধ কেটে মাছ ধরার তালে আছে এক শ্রেণির লোক, দুর্বৃত্তই বলতে হয় তাদের।
হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসের বরাতে জানিয়েছেন, আসাম, মেঘালয় ও শিলিগুড়ি এলাকায় ২৯ এপ্রিল থেকে ৩ মে পর্যন্ত ১৫০ থেকে ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হবে। অন্যদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালকের তথ্য হলো, ৪ থেকে ৭ মে পর্যন্ত দেশে ভারি বৃষ্টি হতে পারে। এসব তথ্য আশঙ্কাজনকই বটে। ভারতীয় এলাকাগুলো বাংলাদেশের উজানে এবং উঁচু পাহাড়ি এলাকা। সেখানকার বৃষ্টির পানি বিভিন্ন ঝিরি, খাল ও নদী দিয়ে বাংলাদেশের হাওর এলাকায় ঢুকবে। ফলে হাওরের পাকা ধানের ক্ষেত তলিয়ে যেতে পারে। দেশের ভেতরে বৃষ্টিপাতের কারণে অবস্থার আরো অবনতি হবে। সুনামগঞ্জের হাওরের অর্ধেক জমিতে ধান এখনো আধাপাকা। এরই মধ্যে মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে বিকেল পৌনে ৩টা পর্যন্ত টানা বৃষ্টি হয়েছে। এতে সুরমার পানি পাঁচ সেন্টিমিটার বেড়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে নদ-নদী, খাল-বিল ছাপিয়ে পানি হাওরে ঢুকবে। এতে ধানক্ষেত তলিয়ে যেতে পারে। সুনামগঞ্জের অর্ধেক জমির ফসল এখনো কাটা বাকি। কৃষি বিভাগ যে ৭৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে বলে জানাচ্ছে, তা অতিরঞ্জিত।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে আন্ত মন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা হয়েছে। সেখানেও এ তথ্য উপস্থাপিত হওয়ার কথা। গত বছরের এপ্রিলে আকস্মিক বন্যায় ফসলের বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছিল। সেটি নিশ্চয়ই তাদের বিবেচনায় রয়েছে। দুর্যোগ মোকাবেলার উদ্যোগ নেওয়ার জন্যই বৈঠক। যথাযথ তথ্য না থাকলে, নিবিড় পর্যবেক্ষণ না থাকলে কৌশলে গলদ থেকে যাবে। ঝড়-বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল এবং ফসলের মাঠের প্রকৃত তথ্য পর্যালোচনা করে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশা করি।