বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে প্রবেশের যোগ্যতা অর্জন করেছে। এই যোগ্যতা রক্ষা করতে হলে এবং ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যেতে হলে দেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। আর বিনিয়োগের কাক্সিক্ষত গতি নিশ্চিত করার জন্য সবার আগে প্রয়োজন বিনিয়োগ সহায়ক ব্যাংকিং খাত। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের ব্যাংকিং খাত এখনো সে অবস্থান থেকে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। ব্যাংকগুলো, বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে ঋণের নামে চলছে লুটপাট। ব্যাংকের লোকজনের যোগসাজশে ভুয়া কাগজে ভুয়া ঠিকানায় ঋণ চলে যাচ্ছে, যেগুলো পরে আর আদায় করা যায় না। শুধুই বাড়ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর এই লোকসান পূরণ করা হয় সরকারি কোষাগার থেকে অর্থ দিয়ে। সম্প্রতি বেসরকারি ব্যাংকগুলোতেও এই প্রবণতা বেড়েছে। এসব লোকসান মোকাবেলায় ব্যাংকগুলো প্রদত্ত ঋণের সুদের হার বাড়িয়ে দিচ্ছে। আর সেটি দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ নষ্ট করছে। উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে উদ্যোক্তারা বিপদগ্রস্ত হচ্ছেন। প্রকৃত উদ্যোক্তারা ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রেও নানা রকম হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ব্যাংকিং খাতের এমন নৈরাজ্য দূর করা না গেলে দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি কোনোক্রমেই উন্নত হবে না। সে সত্যটিই তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ব্যাংক মালিকদের প্রতি ঋণের সুদের হার এক অঙ্কে বা ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন।
ব্যাংকঋণের অতিরিক্ত সুদের হার নিয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে বরাবরই আপত্তি জানানো হয়েছে। এ নিয়ে ব্যাংক মালিকদের সঙ্গে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে অনেক আলোচনাও হয়েছে। সর্বশেষ গত ১ এপ্রিল ব্যাংক মালিকদের সঙ্গে আলোচনার সূত্র ধরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানান, মালিকরা তাঁকে কথা দিয়েছেন যে এক মাসের মধ্যেই ঋণের সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনা হবে। এ জন্য বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে বেশ কিছু সুবিধাও দেওয়া হয়েছে। আগে সরকারি আমানতের ২৫ শতাংশ রাখা হতো বেসরকারি ব্যাংকে। এখন থেকে বেসরকারি ব্যাংকে সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ রাখা হবে। পাশাপাশি নগদ সংরক্ষণ অনুপাত বা সিআরআর ৬.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫.৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতেও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকগুলো ফেরত পাবে। এতে তাদের তারল্য সংকট অনেকটাই কমে যাবে। তার পরও ব্যাংকগুলো এখন পর্যন্ত ঋণের সুদের হার কমায়নি। কবে কমানো হবে, সে ঘোষণাও দেয়নি। ফলে ব্যাংক ব্যবসার সততা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।
আমরা চাই, দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি এগিয়ে নেওয়ার জন্য সব দিক থেকেই অনুকূল পরিবেশ তৈরি হোক এবং ঋণের সুদের হার দ্রুত কমিয়ে আনা হোক। পাশাপাশি ব্যাংকিং খাতের নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনা দূর করতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে উঠেছে। সর্বোপরি ব্যাংকিং তৎপরতার ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি আরো জোরদার করতে হবে।