সড়ক দুর্ঘটনা রোধে পদক্ষেপ

33

উদ্বেগজনক হারে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে বাংলাদেশে। ঘটছে প্রাণহানি। পথে বসছে অনেক পরিবার। দেশের অনেক প্রতিভাবান মানুষের প্রাণ গেছে সড়ক দুর্ঘটনায়। অনেক পরিবারের আশার আলো যানবাহনের চাকায় পিষ্ট হয়েছে। প্রতিদিনই আসছে মর্মান্তিক সব সড়ক দুর্ঘটনার খবর। দেশে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। নতুন নতুন সড়ক অবকাঠামো নির্মিত হচ্ছে। মহাসড়কে একাধিক লেন হচ্ছে। বিপজ্জনক বাঁক ঠিক করা হচ্ছে। কিন্তু রোধ করা যাচ্ছে না প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা।
প্রতিনিয়ত ২৪ ঘণ্টায় সড়ক দুর্ঘটনায় শিশুসহ ১৫ জন নিহত হয়েছে। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার হিসাব অনুযায়ী দেশে প্রতিদিন দুর্ঘটনায় গড়ে ১১ জনের প্রাণহানি ঘটছে। যাত্রী কল্যাণ সমিতির পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৭ সালের সড়ক দুর্ঘটনা আগের বছরের চেয়ে ২২ শতাংশ বেড়েছে। নিরাপদ সড়ক চাই নামের সংগঠনটির তথ্য অনুযায়ী ২০১৭ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচ হাজার ৬৪৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। অতিরিক্ত গতি, গাড়ি চালানোর লাইসেন্স না থাকা, চালকের দক্ষতার অভাব, সড়ক-মহাসড়ক বেহাল, ফিটনেসবিহীন যানবাহন এসব কারণেই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, সরকারিভাবে নিবন্ধিত ৯ লাখ ২৩ হাজার ৩৩৫টি গাড়ি চালানো হচ্ছে লাইসেন্সবিহীন চালক দিয়ে। বেসরকারি হিসাবে দেশের ১০ লাখ অননুমোদিত যানবাহনের বেশির ভাগের বৈধ চালক নেই। বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে নিয়ন্ত্রণহীন গতির কারণেই ৯০ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে। টিআইবির এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশের ৯৭ শতাংশ চালক ‘ওস্তাদের’ সহকারী হিসেবে কাজ করতে করতে গাড়ি চালানো শিখেছে। তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা নেই। এসব চালকের মধ্যে ১৩ শতাংশ নিরক্ষর, ৪৭ শতাংশের প্রাথমিক শিক্ষা ও ৪০ শতাংশের এর চেয়ে বেশি শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে। পরীক্ষা না দিয়েই লাইসেন্স নেয় ৬১ শতাংশ চালক। আর এরই ফল প্রতিদিনের সড়ক দুর্ঘটনা। রাজীবের মতো তরুণরা হাত হারাচ্ছে। তার পরিবার পথে বসার উপক্রম হচ্ছে। নোয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিহাম আফসানা ৩০ মাস মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে প্রাণে বেঁচে গেলেও হারিয়েছেন দুই চোখ। চিকিৎসার জন্য সর্বস্ব বিক্রি করে তাঁর বাবা এখন হাত পেতেছেন মানুষের কাছে। স্নাতক শ্রেণির ছাত্র একমাত্র ভাইয়ের লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম। দুর্ঘটনার জন্য দায়ী সেই বাসচালকের কী হয়েছে? সড়ক-মহাসড়ক শুধু নয়, তদারকির অভাবে রাজধানীর দুই শতাধিক রুটেও বেপরোয়াভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে যানবাহন। রাজীব, রিহামদের মতো কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ অক্ষম হয়ে পড়ছে। দেখার যেন কেউ নেই।
এভাবে চলতে থাকলে সড়কের বিশৃঙ্খলা আরো বাড়বে। কাজেই এখনই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তৎপর হতে হবে। বৈধ চালক ছাড়া কারো হাতে যানবাহন তুলে দেওয়া যাবে না। ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে। সড়ক-মহাসড়ক থেকে ফিটনেসবিহীন যানবাহন তুলে দেওয়ার পাশাপাশি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে দুর্ঘটনা অনেকটাই কমে আসবে বলে আমরা মনে করি।