ব্যাংক ঋণের সুদ

26

আধুনিক বিশ্বে বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যাংকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের মূলধনের ঘাটতি মিটিয়ে ব্যাংক দেশের শিল্প ও বাণিজ্যে গতি সঞ্চার করে। উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাওয়া বাংলাদেশে ব্যাংকের এই ভূমিকা আরো গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু নানা বাস্তবসম্মত কারণে বাংলাদেশে ব্যাংকগুলো সঠিকভাবে সেই ভূমিকা পালন করতে পারছে না। এখানে ব্যাংকঋণের সুদের হার অত্যন্ত বেশি। উদ্যোক্তারা এত উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে বিপদে পড়েন। বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারেন না। তাই অনেক দিন ধরেই তাঁরা ঋণের সুদ এক অঙ্কে নামিয়ে আনার দাবি করে আসছিলেন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী ঋণের সুদ এক অঙ্কে নামিয়ে আনার নির্দেশনা দিয়েছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত রবিবার জানিয়েছেন, এক মাসের মধ্যেই ঋণের সুদ এক অঙ্কে বা ১০ শতাংশের নিচে নেমে আসবে। তার আগে তিনি বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবির সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং বেসরকারি ব্যাংকগুলোর স্বার্থ রক্ষায় কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেছেন।
সাধারণত ব্যাংকগুলো মানুষের ক্ষুদ্র সঞ্চয় থেকে আমানত সংগ্রহ করে এবং একটি নির্দিষ্ট হারে তাদের সুদ দেয়। ফলে মানুষের মধ্যে সঞ্চয়ের প্রবণতা বাড়ে। সংগৃহীত এই অর্থ কিছুটা বেশি সুদে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের সরবরাহ করা হয়। সুদের এই পার্থক্যই ব্যাংকের লাভ এবং তা দিয়েই ব্যাংকগুলো পরিচালিত হয়। কিন্তু অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে এই পার্থক্য অনেক বেশি হওয়ায় উদ্যোক্তাদের এত দুশ্চিন্তা। এতে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যায় এবং উদ্যোক্তাদের পক্ষে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা মুশকিল হয়ে পড়ে। বিনিয়োগের গতিও শ্লথ হয়ে যায়। অথচ দেশ এগিয়ে নিতে হলে বিনিয়োগের গতি বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। সংগত কারণেই প্রধানমন্ত্রীকে এখানে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংককে নানামুখী উদ্যোগ নিতে হয়েছে। আশা করি, শিগগিরই এই উদ্যোগের সফল বাস্তবায়ন আমরা দেখতে পাব এবং ঋণের সুদহার এক অঙ্কে চলে আসবে। বাংলাদেশে ঋণের সুদহার বৃদ্ধির একটি বড় কারণ হচ্ছে খেলাপি ঋণ বা কুঋণ। এতে ব্যাংকগুলো, বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয় এবং সেই ক্ষতি পূরণ করতে গিয়ে তারা বাধ্য হয় ঋণের সুদ বাড়িয়ে দিতে। আবার ব্যাংকগুলোর অত্যধিক পরিচালন ব্যয়ও ঋণের সুদ বাড়ানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। ঋণের সুদ কমিয়ে রাখার স্বার্থে ভবিষ্যতে এই বিষয়গুলোতে নজর দিতে হবে। ব্যাংকগুলো অনেক সময় তারল্য সংকট নিয়েও হিমশিম খায়। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকে রাখা ব্যাংকগুলোর সিআরআর (নগদ সংরক্ষণ অনুপাত) ১ শতাংশ কমিয়ে সাড়ে ৫ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিষয়টি আরো বিবেচনার দাবি রাখে।
আমরা চাই, অন্যান্য দেশের মতোই বাংলাদেশেও ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করুক। সে ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো যাতে তাদের ব্যবসা সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারে, আমানতকারীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং উদ্যোক্তারা যাতে অল্প সুদে ঋণ পায় সব দিকের মধ্যে একটি সুসমন্বয় তৈরি করতে হবে।