ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে পুড়ে শেষ রাজধানীর বঙ্গবাজার। মঙ্গলবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে অগ্নিকাÐের সূচনা। দুই মিনিটের মধ্যে সেখানে পৌঁছে যায় ফায়ার সার্ভিস। ডাকা হয় ঢাকার সব দমকল ইউনিট। আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সঙ্গে যোগ দেয় সেনাবাহিনীর একটি সম্মিলিত সাহায্যকারী দল। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বিমানবাহিনীর একটি সাহায্যকারী দল এবং একটি হেলিকপ্টার আগুন নেভাতে কাজ করছে। উত্তেজিত জনতার একটি অংশ ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তরে হামলা করেছে বলেও খবরে প্রকাশ হয়। কিছু মানুষ সদর দপ্তরে ঢুকে গাড়ি ভাঙচুর করেছে, হেডকোয়ার্টারে নতুন যে ভবন হয়েছে, সেটি ভাঙচুর করেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন বঙ্গবাজার চারটি ইউনিটে বিভক্ত। মোট দোকানের সংখ্যা দুই হাজার ৩৭০টি। টিন ও কাঠ দিয়ে নির্মিত বঙ্গবাজার ১৯৯৫ সালে একবার ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যায়। পরে নতুন করে গড়ে তোলা হয় ওই মার্কেট। ২০১৮ সালের ২৪ জুলাই সেখানে আগুন লেগে মার্কেটের গুলিস্তান ইউনিটের কয়েকটি দোকান পুড়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক জানিয়েছেন, ২০১৯ সালে বঙ্গমার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ বলে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে নোটিশ টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তার পরও ব্যবসায়ীরা ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন। অন্য কোনো সংস্থা বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি।
আমাদের স্মৃতি থেকে অগ্নিকাÐ ও বিস্ফোরণের ঘটনাগুলো একেবারেই মুছে ফেলা যাচ্ছে না। এক মাস আগে গত ৪ মার্চ সীতাকুÐে সীমা অক্সিজেন কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে সাতজন নিহত এবং ২৫ জন আহত হন। গত বছর ৪ জুন রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুÐের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাÐের ঘটনায় ৫০ জনের প্রাণহানি ঘটে। আহত হন দুই শতাধিক মানুষ। গত ৫ মার্চ সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় মিরপুর রোডে তিনতলা একটি ভবন বিস্ফোরণে আংশিক ধসে পড়ে। গত ৭ মার্চ মঙ্গলবার রাজধানীর সিদ্দিকবাজারের নর্থ সাউথ রোডের একটি সাততলা ভবনে বিস্ফোরণ ঘটে। এর আগে ২০১০ সালে নিমতলী কেমিক্যাল ওয়্যারহাউসের অগ্নিকাÐ, ২০১২ সালে তাজরীন ফ্যাশনসের অগ্নিকাÐ, ২০১৯ সালে চুড়িহাট্টা কেমিক্যাল ডিপোর অগ্নিকাÐ, ২০২০ সালে নারায়ণগঞ্জ মসজিদে গ্যাস লিকেজ বিস্ফোরণ, ২০২১ সালে নারায়ণগঞ্জ খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ফ্যাক্টরির অগ্নিকাÐের ঘটনা ঘটেছে।
বঙ্গবাজার মূলত পোশাকের বাজার। ঈদ সামনে রেখে সব দোকানেই অনেক নতুন পণ্য তোলা হয়েছিল। বঙ্গবাজারের আগুন দ্রæতই আশপাশের ভবনগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে।
রাজধানী ঢাকার একেবারে কেন্দ্রে এত বড় একটি ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর বিষয়টিকে খাটো করে দেখার কোনো কারণ নেই। ব্যবসায়ীদের যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ হওয়ার নয়। অনেকেই পথে বসে গেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, এ ধরনের আগুনের ঘটনা কী করে ঘটল? হতে পারে মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ। কাঠ ও টিনের তৈরি। গাদাগাদি করে কাপড় রাখা। কিন্তু আগুনে পুরো মার্কেট পুড়ে যাবে? এটি অন্তর্ঘাতমূলক ঘটনা নয় তো, এমন প্রশ্ন কি উড়িয়ে দেওয়া যাবে? কাজেই উৎস সন্ধান জরুরি।