শুধু শহর নয়, সারা দেশেই নিরাপদ পানীয় জলের সংকট ক্রমে তীব্র হচ্ছে। আর বড় শহরগুলোতে এই সংকট কখনো কখনো মানবিক দুর্যোগের রূপ নিচ্ছে। প্রতিবাদে মানুষ রাস্তায় নেমে আসছে; কিন্তু সংকটের কোনো স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সুপেয় পানির সংকট মোকাবেলায় এখনই পরিকল্পিত উদ্যোগ না নিলে শিগগিরই তা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে এবং সমাধান প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে।
দেশের নদীব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্দশাগ্রস্ত। বেশির ভাগ নদীতেই বর্ষার কয়েক মাস ছাড়া পানি থাকে না। বেশির ভাগ জলাশয় ভরাট হয়ে গেছে। বাকিগুলোও ভরাট হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। ফলে বর্ষার পানি দেশব্যাপী প্লাবন ঘটিয়ে দ্রুত সাগরে গিয়ে মিশছে, ভূগর্ভে প্রবেশের সুযোগ কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে বোরো ধান আবাদের কারণে জমিতে ব্যাপক সেচের প্রয়োজন হয়। এর প্রায় পুরোটাই এখন ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের মাধ্যমে করা হচ্ছে। ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে। অনেক স্থানে এখন গভীর নলকূপেও পানি ওঠে না। এতে মরুকরণ প্রক্রিয়াও ত্বরান্বিত হচ্ছে। বিশেষ করে, উত্তরাঞ্চলে মরুকরণের লক্ষণ ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। আবার দেশের দক্ষিণাঞ্চলেও সুপেয় পানির সংকট ক্রমে তীব্র হচ্ছে। বছরের বেশির ভাগ সময় নদীগুলোতে প্রবাহ না থাকায় এবং ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নোনা পানির অনুপ্রবেশ ক্রমেই বাড়ছে। এর আগে প্রকাশিত বিভিন্ন তথ্যানুযায়ী ভূগর্ভস্থ স্তরে নোনা পানির অনুপ্রবেশ দেশের মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত চলে আসছে। উপকূলীয় নদীগুলো দিয়েও নোনা পানি ক্রমে অনেক ভেতরে চলে আসছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাও ক্রমে বাড়ছে। সে কারণে উপকূলের বহু পুকুর, জলাশয় সামান্য বেশি জোয়ারেই ডুবে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে নোনা পানি জমিয়ে চিংড়ি চাষের উৎপাত তো আছেই। ফলে বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকায় খাবার পানির সংকট এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
বড় শহরগুলোর আশপাশের নদীগুলো এতটাই দূষিত যে মানুষ এসব নদীর পানি ব্যবহারের কথা ভাবতেই পারে না। নদীগুলোও আবর্জনার ভাগাড় হয়ে আছে। জলাশয়ের অবস্থাও অত্যন্ত করুণ। পানির এমন সংকটে মানুষ বাধ্য হয়ে বাণিজ্যিক পানির ওপর ক্রমে বেশি করে নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। সেখানেও রয়েছে বিপত্তি। পানি সরবরাহ লাভজনক হয়ে ওঠায় অনেক ভুয়া প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, যারা বিশুদ্ধ না করেই ওয়াসার পানি বা জলাশয়ের পানি বোতলে ভরে সরবরাহ করছে। না জেনে এসব পানি পান করে বহু মানুষ রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছে।
জনস্বাস্থ্য রক্ষায় যথাযথ গুরুত্ব না দিলে কোনো উন্নয়ন প্রচেষ্টাই অর্থবহ হবে না। সরকারকে সারা দেশে সুপেয় পানির উৎস রক্ষায় এবং সরবরাহ করা পানির মান রক্ষায় আরো উদ্যোগী হতে হবে।