অনেক বিজ্ঞানীই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হলে তা হবে পানি নিয়ে সৃষ্ট বিরোধের কারণে। বিশ্বব্যাপী সুপেয় পানির অভাব ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনসহ পৃথিবীর অনেক বড় শহরেই সুপেয় পানির অভাব চরমে উঠেছিল। আগামী বছরগুলোতে কোথাও কোথাও তা মানবিক দুর্যোগে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা। এমন এক পরিস্থিতিতে ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্ব পানি সম্মেলন। সম্মেলন উপলক্ষে ১৫টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানসহ বিভিন্ন দেশের নানা স্তরের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ জড়ো হয়েছেন সেখানে। আর তাঁদের পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে গিয়ে পুরো শহরের পানি সরবরাহে রেশনিং শুরু করা হয়েছে। অথচ ব্রাজিল সুপেয় পানির জন্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ একটি দেশ। তাই সুপেয় পানির যে ভয়াবহ সংকট এগিয়ে আসছে, তা নিয়ে সারা দুনিয়ায়ই নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে।
নদী-নালার দেশ বাংলাদেশেও পানির সমস্যা কিছু কম নয়। শুষ্ক মৌসুমে ঢাকাসহ কয়েকটি বড় শহরে পানির অভাব তীব্র হয়। কোথাও কোথাও তৃষ্ণার্ত মানুষকে ঘটি-বাটি নিয়ে মিছিলে নামতেও দেখা যায়। বরেন্দ্র অঞ্চলসহ অনেক স্থানে পানির অভাবে ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হয়। অনেক জায়গায় গভীর নলকূপেও পানি ওঠে না। নদী-নালা-বিল বেশির ভাগই ভরাট হয়ে গেছে। শুষ্ক মৌসুমে সেগুলো শুকিয়ে কাঠ হয়ে থাকে। জমিতে সেচ দেওয়ার কোনো উপায় থাকে না। এই সংকট ক্রমেই তীব্র হচ্ছে এবং আরো তীব্র হবে। কারণ এখন পর্যন্ত আমরা বিভিন্ন কাজে প্রায় পুরোপুরি ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীল। ভূগর্ভ থেকে অতিরিক্ত পানি উত্তোলনের ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমেই নিচে নেমে যাচ্ছে। নদী-নালা-খাল-বিলে সারা বছর পানি না থাকায় ভূগর্ভে পানির প্রবেশও কম হচ্ছে। ফলে কোথাও কোথাও পানির স্তর প্রতিবছর দুই থেকে পাঁচ মিটার পর্যন্ত নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে গভীর নলকূপেও পানি উঠছে না। অন্যদিকে আমাদের প্রায় সব নদীর উৎস অন্যান্য দেশে হওয়ায় নদীগুলোতে পানির অভাব হচ্ছে। উজানে থাকা দেশগুলোতে বাঁধ দিয়ে নদীর পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত করা হয়। ফলে শুষ্ক মৌসুমে আমাদের নদীগুলো দ্রুত শুকিয়ে যায়। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, বাংলাদেশে সুপেয় পানির অভাব শিগগিরই চরমে পৌঁছবে। কিন্তু আমরা কি সেই পরিস্থিতি নিয়ে খুব একটা ভাবনা-চিন্তা করছি? পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুতির অভাবই এই প্রশ্নের উত্তর দেয়।
ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ঠিক রাখার জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। দখল, দূষণ ও ভরাটের হাত থেকে নদী ও জলাশয় রক্ষা করতে হবে। ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে ভূপৃষ্ঠের পানির ব্যবহার বাড়াতে হবে। বর্ষার বা বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। আধুনিক কৌশল ব্যবহার করে ভূগর্ভস্থ পানিভরণ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে হবে।