মাদ্রাসার উন্নয়নে অবকাঠামো

59

অর্থবছরের শেষার্ধে এসে ৩০০ জন এমপিকে তাঁদের নিজ নিজ এলাকার মাদরাসার অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন থেকে পাস হয়ে গেলে সংরক্ষিত নারী আসন বাদে সংসদ সদস্যরা তাঁদের এলাকার ভোটারদের মন জয় করার জন্য সাড়ে ২২ কোটি টাকা পাবেন। এই টাকায় একজন এমপি তাঁর এলাকার ছয়টি মাদরাসা উন্নয়ন করবেন। মাদরাসা যে এলাকায়ই হোক বা সেসব মাদরাসার শিক্ষার্থী সংখ্যা যা-ই হোক না কেন, এসব মাদরাসা ভবন ছয়তলা করা হবে। সংশ্লিষ্টরা এরই মধ্যে এই প্রকল্পে নানা অসংগতি খুঁজে পেয়েছেন। মাদরাসা উন্নয়নের জন্য টাকা বরাদ্দ চাওয়া হলেও প্রকল্প প্রস্তাবে সব মাদরাসার নাম নেই। আবার কোন মাদরাসায় কতজন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করেছে, সব মাদরাসার ছয়তলা ভবন প্রয়োজন আছে কি না সে বিষয়টিও ভেবে দেখা হয়নি বলে ধারণা করা হচ্ছে। আবার মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি জরুরি হচ্ছে এর কারিকুলাম। কারিকুলাম সময়োপযোগী না করে অবকাঠামো উন্নয়ন মাদরাসা শিক্ষার জন্য কী সাফল্য বয়ে আনবে, তা বলা মুশকিল। অন্যদিকে প্রস্তাবিত এই প্রকল্পের যে ব্যয় ধরা হয়েছে, তা অনেক বেশি বলে মনে করা হচ্ছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়তলা ভবন নির্মাণে যে ব্যয় হয়েছে, মাদরাসার ভবন নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি। এ ছাড়া এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিদেশ সফর এবং জিপ ও মোটরসাইকেল কেনার কথাও বলা হয়েছে। ভবন নির্মাণের সঙ্গে বিদেশ সফরের কী সম্পর্ক তা যেমন বোধগম্য নয়, তেমনি জিপ ও মোটরসাইকেল কী কাজে লাগবে, তা বুঝে ওঠা মুশকিল।
ধারণা করা হচ্ছে, মাদরাসা উন্নয়নের নামে এলাকার ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা হিসেবেই সংসদ সদস্যদের এই বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। মাদরাসা উন্নয়নের কাজের পাশাপাশি লুটপাটেরও একটি নতুন পথ খুলে দেওয়া হবে প্রকল্প প্রস্তাব পাস হয়ে গেলে। যেকোনো অবকাঠামো উন্নয়ন অবশ্যই জরুরি। কিন্তু তার আবশ্যকতা থাকা দরকার। যেখানে শিক্ষা কারিকুলামই আধুনিক নয়, সেখানে অবকাঠামো কী কাজে লাগবে তা আমাদের বোধগম্য নয়। এ ছাড়া দেশের অনেক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো নতুন করে তৈরি করা দরকার। কাজেই উন্নয়ন যেন সার্বিকভাবে এলাকার মানুষের কাজে আসে সেদিকেই দৃষ্টি দিতে হবে। কারো পকেট ভারী করার জন্য উন্নয়ন প্রকল্পের প্রয়োজন নেই।