মাদকমুক্ত শিক্ষাঙ্গন

21

সর্বনাশা মাদকের ভয়াবহ থাবায় আক্রান্ত সারা দেশ। মাদক কারবারিদের লক্ষ্য অপেক্ষাকৃত তরুণ ও যুবারা। দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মাদকের বিস্তার ঘটেছে। গোয়েন্দারা সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে অনুসন্ধান চালিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানে মাদক কারবারে জড়িত শিক্ষার্থীদের তালিকাও করেছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযান চালাতে চেয়েও পারেনি কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনীহার কারণে। ৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয় ও আটটি কলেজে ৪২৭ মাদক কারবারির তালিকা করেছে গোয়েন্দারা। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রভাবশালী ছাত্রসংগঠনের নেতা ও পুলিশের প্রত্যক্ষ মদদে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদকের বেচাকেনা চলে। গোয়েন্দাদের তালিকাভুক্ত অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে যাওয়ার পরও ক্যাম্পাসভিত্তিক মাদক বাণিজ্যে জড়িত। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক মাদক কারবারিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশসহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, চানখাঁর পুল, পলাশী, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে মাদক বিক্রি করে থাকে। মাদক বিক্রির কাজে টোকাইদেরও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। প্রভাবশালী ছাত্রসংগঠনের নেতাদের নাম ভাঙানোর কারণে কেউ কিছু বলতে সাহস করে না। এই সুযোগে অভিযান না চালিয়ে পুলিশও নিয়মিত মাসোয়ারা আদায় করে বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মাদক সহজলভ্য হয়ে পড়েছে। হাত বাড়ালেই মিলছে নানা মাদকদ্রব্য।
বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে জ্ঞানচর্চার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। এখানে উচ্চতর গবেষণা হবে। হবে জ্ঞান সাধনা। সভ্যতার মানদণ্ডে বিশ্বমানের মানুষ এখান থেকে বেরিয়ে আসবে। উন্নত রুচির পরিচয় দিয়ে তারাই জাতির হাল ধরবে। কিন্তু দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি মাদকের আসর বসে, শিক্ষার্থীরাই যদি মাদকের কারবারি হয়ে যায়, তাহলে তো ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হতেই হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট কিংবা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ নয় দেশের সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানদের পাঠান বুকভরা আশা নিয়ে। সেই সন্তান যদি শিক্ষার পরিবর্তে মাদকাসক্ত হয়ে ফিরে আসে, তাহলে সেই পরিবারে বিপর্যয় নেমে আসাটাই তো স্বাভাবিক। দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মেধাবীরাই ভর্তির সুযোগ পায়। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মাদকে আসক্ত হয়ে পড়লে তার দায় কে নেবে? সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কি কোনো দায় নেই? মাদকাসক্তরা নিজেদের যেমন ধ্বংস করছে, তেমনি পরিবারকেও ঠেলে দিচ্ছে ধ্বংসের দিকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে মাদকসেবী ও কারবারিদের দ্বারা। মাদক সেবনই শুধু নয়, নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ছে তারা।
এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকেই ভূমিকা রাখতে হবে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর যেমন অভিযান চালাতে পারে, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেও গোয়েন্দাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনো ছাত্রসংগঠন বা ছাত্রনেতার কারণে পুরো প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ নষ্ট হতে পারে না। কয়েকজনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সব শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে না। আমরা আশা করি, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ মাদক দূর করতে ভূমিকা রাখবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যৌথ উদ্যোগে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় মাদকমুক্ত হবে।