আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা

63

আয় যেমনই হোক, অনেকেই নানা উদ্দেশ্যে ব্যাংকে সাধ্যের নিরিখে টাকা জমা রাখে। সঞ্চয়ের এ অর্থের ব্যবহার বিবিধ। অনেকেই বিশেষ প্রয়োজনের সময় কাজে লাগানোর জন্য টাকা জমা রাখে। আবার এমন অনেকেই রয়েছে যারা ব্যাংকে অর্থ জমা রেখে তার লভ্যাংশ দিয়ে সংসার পরিচালনা করে। আমানতের সুদের হার বা লভ্যাংশের হার যদি যৌক্তিক ও আকর্ষণীয় হয় তাহলে সাধারণ মানুষের বিশেষ উপকার হয়। টাকা জমা রাখতে উৎসাহও বোধ করে তারা। কিন্তু ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারির পর টানা পাঁচ বছর ব্যাংক খাতে আমানতের সুদহার কমেছে। বিপরীতে সঞ্চয়নির্ভর পরিবারগুলোর হতাশা বেড়েছে। এবার তাদের হতাশা অনেকটাই কাটবে। কারণ আমানতের ওপর সুদের হার বাড়ানো হচ্ছে। কিছু বেসরকারি ব্যাংক এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই মধ্যে কোনো কোনো ব্যাংক এ সুদের হার ২ থেকে ৩ শতাংশ বাড়িয়েছে। কোনো ব্যাংক মাসিক পেনশনার স্কিম (ডিপিএস) ও স্থায়ী আমানত (এফডিআর) দুটির সুদই বাড়িয়েছে বা বাড়াতে যাচ্ছে, কোনো ব্যাংক একটির ওপর সুদ বাড়িয়েছে বা বাড়াতে যাচ্ছে। গ্রাহকদের সঞ্চয়ে উৎসাহী করার জন্য এ মাসের শুরুতে আমানতের ওপর সুদ বাড়ানোর এ উদ্যোগ নেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ মুদ্রানীতি ঘোষণার পরই বেসরকারি ব্যাংকগুলো এ উদ্যোগ নিতে শুরু করে। ওই নীতিতে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলোকে ঋণ দেওয়ার পরও ১৬.৫ শতাংশ অর্থ হাতে রাখতে হবে। আগে ১৫ শতাংশ হাতে রাখার শর্ত ছিল। বাড়তি দেড় শতাংশের কোটা পূরণের জন্যই সঞ্চয়ে গ্রাহকদের উৎসাহী করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্যাংক খাতে আমানতের গড় সুদহার ছিল ৮.৬৮ শতাংশ। এর পর তা কমতে থাকে, গত নভেম্বরে সর্বনিম্ন ৪.৯০ শতাংশে নেমে আসে। নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণার পর অনেক ব্যাংক এ বিষয়ে তাদের নীতি পাল্টানোর সিদ্ধান্ত নেয়। গত ২ ফেব্রুয়ারি আমানতের সুদহার বাড়িয়েছে মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া ও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ। পরে সাউথবাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক, এবি ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, সীমান্ত ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ও ঢাকা ব্যাংক আমানতের সুদহার বাড়িয়েছে। তবে সরকারি খাতের সোনালী, রূপালী, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক এবং অনেক বেসরকারি ব্যাংকের আমানতের সুদহার অপরিবর্তিত রয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের আলোচনা থেকে বোঝা যায়, আমানতের সুদহার বাড়লে ব্যাংক খাতে কিছু চাপ সৃষ্টি হতে পারে; ঋণের প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তবে এ চাপ খুবই সাময়িক হবে। এত দিন সুদের হার বাজারের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ছিল না; আমানতকারীর সুবিধার দিকটি বিবেচনা করা হয়নি। আমানতের সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্তে সঞ্চয়কারীরা উৎসাহিত হবে। তাদের হতাশা কাটবে বলে আশা করা যায়।