আবদুল হামিদ আবার রাষ্ট্রপতি

30

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালনের জন্য বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন মোঃ আবদুল হামিদ। মনোনয়নপত্র পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাঁকে নির্বাচিত ঘোষণা করেন। নির্বাচিত ঘোষণার পরই বিকেলে এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। দ্বিতীয় মেয়াদে দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তিনি। দেশে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি দ্বিতীয় দফায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলেন। আগামী ২৩ এপ্রিল দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালনের জন্য তিনি শপথ গ্রহণ করতে পারেন বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাংবাদিকদের বলেন।
রাষ্ট্রপতি আইন ১৯৯১-এর ৭ ধারা অনুযায়ী অন্য কোন প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় মোঃ আবদুল হামিদকে পুনঃনির্বাচিত ঘোষণা করা হয় বলে জানান সিইসি। রাষ্ট্রপতি পদে মোঃ আবদুল হামিদকে নির্বাচত ঘোষণার পরেই এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। সন্ধ্যায় সিইসিসহ নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতও করেন।
সংবাদ সম্মেলনে সিইসি জানান, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মোঃ আবদুল হামিদের পক্ষেই তিনটি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছিল। প্রথম মনোনয়নপত্রের প্রস্তাবক ছিলেন সংসদ সদস্য ওবায়দুল কাদের এবং সমর্থক সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ। প্রথম মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাইয়ের পর টিকে যাওয়ায় পরের মনোনয়পত্রগুলো পরীক্ষা করার প্রয়োজন হয় না। বাকি মনোনয়নপত্রগুলো এমনিতেই বাতিল হয়ে যায়। এখানে প্রথমটিই টিকে গিয়েছে।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জমা দেয়া দ্বিতীয় মনোনয়নপত্রের প্রস্তাবক ছিলেন সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন, সমর্থক ছিলেন সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ। তৃতীয় মনোনয়নপত্রের প্রস্তাবক ছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং সমর্থক সংসদ সদস্য আতিউর রহমান আতিক।
এদিকে নির্বাচন কমিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বুধবার গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচনে দাখিল করা মনোনয়নপত্র পরীক্ষা করা হয় মনোনয়নপত্র পরীক্ষার পর রাষ্ট্রপতি পদে মোঃ আবদুল হামিদের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়। রাষ্ট্রপতি পদে মোঃ আবদুল হামিদ একমাত্র বৈধ প্রার্থী হওয়ায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের নির্বাচনী কর্তা প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা রাষ্ট্রপতি আইন ১৯৯১-এর ৭ ধারা মোতাবেক মোঃ আবদুল হামিদকে দেশের রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন।
গত ২৫ জানুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। এ পদে নির্বাচনের জন্য ৫ ফেব্র“য়ারি সোমবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা শেষ দিন ছিল। ওইদিন বর্তমান রাষ্ট্রপতি পক্ষে একটি মাত্র মনোনয়নপত্র জমা পড়ে। ইসির তফসিল অনুযায়ী বুধবার মনোনয়নপত্র পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।
মোঃ আবদুল হামিদ ২০১৩ সালের ২২ এপ্রিল প্রথমবারের মতো দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ওই বছরের ১৪ মার্চ তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন থাকার সময় তিনি প্রথম রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব পালন করেন। এরপর জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর ২০ মার্চ থেকে তিনি ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ওই বছর ২৩ এপ্রিল তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। সংবিধান অনুযায়ী একজন দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। আবদুল হামিদই প্রথম ব্যক্তি যিনি বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রে ফেরার পর দুই মেয়াদে নির্বাচিত হলেন।
বর্তমান রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব পালন অবস্থায় আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য তাকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়নের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়। গত ৩১ জানুয়ারি গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভায় আবদুল হামিদকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়নের দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরে ১ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার রাতে বঙ্গভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদকে দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে দলের মনোনয়ন প্রদানের সিদ্ধান্তের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেন।
এরপর গত ২ জানুয়ারি শুক্রবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন জাতীয় সংসদের চীপ হুইপ আ স ম ফিরোজ। ৫ ফেব্রুয়ারি আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে এসে রাষ্ট্রপতির পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আগামী ১৮ ফেব্র“য়ারি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারিত ছিল, থাকলেও রাষ্ট্রপতি পদে একজনের মনোনয়নপত্র জমা হওয়ায় ভোটের আয়োজন করতে হয়নি। জাতীয় সংসদের সদস্যরা ভোট দিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করেন। কিন্তু ’৯১ সালের পর থেকে এ পদের নির্বাচনে কখনও ভোটের আয়োজন করতে হয়নি।
সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, মেয়াদ অবসানের কারণে রাষ্ট্রপতি পদ শূন্য হওয়ার ক্ষেত্রে মেয়াদপূর্তির তারিখের আগের নব্বই থেকে ষাট দিনের মধ্যবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হয়। ফলে আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা ছিল। তার আগেই বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলেন মোঃ আবদুল হামিদ।
স্বাধীনতার পর থেকে ১৯ মেয়াদে এ পর্যন্ত ১৬ জন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই হিসেবে মোঃ আবদুল হামিদ এই পদে সপ্তদশ ব্যক্তি এবং দ্বিতীয় মেয়াদে ২১তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। দেশের আইনে এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বে থাকতে পারেন। ফলে এবার নির্বাচিত হলে এটাই হবে আবদুল হামিদের শেষ মেয়াদ। তৃতীয় মেয়াদে কাউকে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের সুযোগ নেই তার।
১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রপতি পদে একবার ভোট হয়েছিল। এরপর থেকে আওয়ামী লীগের আমলে সাহাবুদ্দিন আহমেদ, বিএনপি পরের আমলে প্রথমে বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং পরে ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ রাষ্ট্রপতি হন। আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় এলে জিল্লুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করেন। ২০১৩ সালে তিনি ইন্তেকাল করলে মোঃ আবদুল হামিদ কিছুদিন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ছিলেন। পরে মোঃ আবদুল হামিদ নির্বাচিত হন। তাদের সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। আইন অনুয়ায়ী রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ পাঁচ বছর হলেও বিএনপি সরকারের দ্বিতীয় আমলে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ সাত বছর রাষ্ট্রপতি ছিলেন। এর মধ্যে পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হওয়ার পরের দুই বছর তিনি রাষ্ট্রপতি ছিলেন জরুরী অবস্থা জারির সুবাদে।