কাঁচা পাট রফতানি

23

কাঁচা পাটের রপ্তানি আবার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সরকারের উদ্দেশ্য অভ্যন্তরীণ চাহিদা, মূলত বিভিন্ন পণ্যের জন্য মোড়ক তৈরির প্রয়োজন মেটাতে সরবরাহ পর্যাপ্ত মাত্রায় রাখা। কাঁচা পাটের রপ্তানি আগেও নিষিদ্ধ হয়েছে। কোনোবারই রপ্তানিকারকদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি, এবারও হয়নি। তাই তাঁরা ক্ষুব্ধ। তাঁদের আশঙ্কা, এ সিদ্ধান্তের ফলে বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়বে, পাটের দাম কমে যাবে, উৎপাদকরা পাট উৎপাদনে নিরুৎসাহী হবেন। তাঁদের অভিযোগ, নিষেধাজ্ঞার কারণ স্পষ্ট করেনি সরকার। রপ্তানিকারকরা আগের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে উঠছিলেন মাত্র, তখনই আবার নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলো। এটা তাঁদের জন্য মারাত্মক আঘাত। অনেকের বিদেশি ক্রয়াদেশ আছে, আচমকা নিষেধাজ্ঞায় তাঁদের বড় ক্ষতি হবে। তাঁদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার ছিল। এ সিদ্ধান্তে পাট উৎপাদকরাও শঙ্কিত।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় গত ১৮ জানুয়ারি তিন ধরনের কাঁচা পাট রপ্তানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে আদেশ জারি করেছে। বলা হয়েছে, নতুন আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাংলা তোষা রিজেকশন (বিটিআর), আনকাট ও বাংলা হোয়াইট রিজেকশন (বিডাব্লিউআর)—এ তিন ধরনের কাঁচা পাট রপ্তানি বন্ধ থাকবে; তবে অন্যান্য ধরনের কাঁচা পাট রপ্তানি করা যাবে। বাংলা অঞ্চলে ব্যাপক মাত্রায় পাটের চাষ ও পাটের ব্যবসার শুরু প্রায় ২০০ বছর আগে। আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নিয়ামক ভূমিকার কারণেই পাট সোনালি আঁশ আখ্যা পেয়েছিল। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি আন্তর্জাতিক বাজারে কৃত্রিম সুতার সরবরাহ বাড়ায় পাটের চাহিদায় টান পড়ে। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে পাটের বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের কারণে পাট নিয়ে আমাদের গর্ব চূর্ণ হয়। উৎপাদনে ধস নামে। পরবর্তী সময়ে সরকার পাটের উৎপাদন, বাজার ও গৌরব ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়। এতে কিছু কাজ হলেও সোনালি পর্বের প্রত্যাবর্তন এখনো হয়নি।
বাংলাদেশ পর্বে কাঁচা পাটের রপ্তানি বিভিন্ন সময়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ১৯৮৪, ২০১০ বা ২০১৫ সালে রপ্তানি নিষিদ্ধ করার আগে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। ২০১০ সালে পাটদ্রব্য দিয়ে পণ্যের মোড়ক তৈরি বাধ্যতামূলক করা হয়। তখন দেশের পাটকলগুলোর জন্য পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে এক মাস কাঁচা পাট রপ্তানি বন্ধ রাখা হয়েছিল। রাষ্ট্রায়ত্ত মিলগুলো মূলত পণ্য মোড়কজাত করার জন্য চট বা বস্তা তৈরি করে। আর বেসরকারি মিলগুলো মূলত স্পিনিং অর্থাৎ সুতা তৈরি করে। পাটের দেশি ভোক্তা মূলত তারাই। সরকার অভ্যন্তরীণ প্রয়োজন মেটাতে রপ্তানি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতেই পারে; তবে উৎপাদক, রপ্তানিকারক, প্রস্তুতকারক সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া উচিত। উৎপাদিত সব পাট যদি অভ্যন্তরীণভাবে কাজে লাগানো না যায়, তাহলে নিষেধাজ্ঞা ক্ষতিরই কারণ হবে। সংশ্লিষ্টদের স্বার্থ রক্ষা করে, তাদের মতকে সম্মান দিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।