কাজির বাজার ডেস্ক
জাতীয় সংসদে ১ জুন আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। রেওয়াজ অনুযায়ী, বাজেট চ‚ড়ান্ত করার আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাজেট তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের আলাদা আলাদা বৈঠক হয়। এবারের বাজেট আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট। তাই এ বাজেটকে নির্বাচনী বাজেটও বলা যায়। এ বাজেটে ৮ বছর পর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন কিছু সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে নতুন পে-স্কেল নয় মহার্ঘ ভাতার বিষয়টি আলোচনা হতে পারে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। জানা গেছে, আগামী ১২ মে গণভবনের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে আরেকটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে বাজেটের অভ্যন্তরীণ উৎস নিয়ে দিক নির্দেশনা নেওয়া হতে পারে।
জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর শেষে মঙ্গলবার সকালে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বৈঠকটি মে মাসের শুরুর দিকে হলেও প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে থাকায় এবার কিছুটা পিছিয়ে করা হচ্ছে। আজকের বৈঠকে বাজেটের সব দিক নিয়েই কথা বলবেন অর্থমন্ত্রী। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, পরিকল্পনা সচিব সত্যজিত কর্মকারসহ বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত অর্থ বিভাগ ও এনবিআরের কর্মকর্তারা বৈঠকে যোগ দেবেন। এদিকে নবম পে-স্কেল, ৫০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতার দাবিতে আন্দোলনে রয়েছেন সরকারি কর্মচারীরা। আগামী ২৬ মে সাত দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহাসমাবেশে ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী ঐক্য পরিষদ।
কর্মচারীরা বলছেন, সর্বশেষ অষ্টম জাতীয় পে-স্কেল কার্যকর হয় প্রায় আট বছর আগে ২০১৫ সালে। দীর্ঘ এ সময়ে দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে কয়েক গুণ। এ অবস্থায় পরিবার নিয়ে টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছেন চাকরিজীবীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে নবম পে-স্কেল বাস্তবায়ন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নতুন করে পে-স্কেল দেওয়ার সম্ভব নয় বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এই অবস্থায় সবার নজর এখন মহার্ঘভাতার দিকে। আজকের বৈঠকে মহার্ঘ ভাতার বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। যদিও বাজেটে প্রস্তুতিতে সরকারি কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার কোনো প্রস্তাব রাখা হয়নি। তবে অর্থমন্ত্রী বা কেউ যদি আলোচনাটি উত্থাপন করেন এবং প্রধানমন্ত্রী যদি তা আমলে নেন, তাহলে কত টাকা বাড়তি লাগতে পারে, সে প্রস্তুতি অবশ্য নিয়ে রেখেছে অর্থ বিভাগ। বাজেটের পর আগস্ট-সেপ্টেম্বরের দিকে এ ব্যাপারে ঘোষণা দেবে সরকার। এর আগে যে কয়টি পে-স্কেল ও মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা করা হয়েছে তা বাজেটের ঘোষণার দুই-তিন মাস পর ঘোষণা করা হয়। ঘোষণা যে মাসেই হোক না কেন তা ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হবে। ব্যাখ্যা হিসেবে অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বাজেটে এ খাতের জন্য সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ রাখা হয় না। অন্য একটি খাত থেকে থোক বরাদ্দ এনে বরাদ্দ দেওয়া হবে।
কত টাকা প্রয়োজন
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি চাকরিজীবী ১৪ লাখের কিছু বেশি। স্বায়ত্তশাসিত, সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকসহ এ সংখ্যা প্রায় ২২ লাখ। এ সংখ্যক কর্মকর্তাদের বেতন ভাতা দিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বেতন-ভাতার জন্য মোট বরাদ্দ ছিল ৭৩ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা। আসন্ন অর্থবছরে বেতন-ভাতা খাতে ৭৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রাক্কলন করেছে অর্থ বিভাগ।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, মহার্ঘ ভাতা শুধু মূল বেতনের ওপর দেওয়া হবে। সে হিসেবে সবাইকে ১০ শতাংশ হারে দিলে ৪ হাজার কোটি টাকা, ১৫ শতাংশ হারে দিলে ৬ হাজার ও ২০ শতাংশ হারে দিলে সর্বোচ্চ ৮ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হতে পারে। যেহেতু মহার্ঘ্য ভাতা মূল বেতনের সঙ্গে যুক্ত হয় না ফলে তাদের বাড়িভাড়া ভাতাসহ অন্য কোনো ভাতার হেরফের হবে না।
মহার্ঘ ভাতায় কত টাকা বেতন বাড়বে
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, মহার্ঘ ভাতায় বাড়ি ভাড়া বাড়ে না। এ ক্ষেত্রে নির্ধারিত সিলিং তৈরি করে শুধু মূল বেতন বৃদ্ধি করা হয়। সর্বশেষ জাতীয় বেতন স্কেলের আওতাভুক্ত চাকরিজীবীদের মূল বেতনের ১০ থেকে ২০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি করা হবে। যদি ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পায় তাহলে একজন সরকারি কর্মচারীর বেতন সর্বনিম্ন বাড়বে ১ হাজার ৬৫০ থেকে সর্বোচ্চ আট হাজার টাকা বৃদ্ধি পাওয়া সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারের জাতীয় বেতন স্কেলের আওতাভুক্ত সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সামরিক বাহিনীর সব সদস্য এ মহার্ঘ ভাতা পাবেন। এছাড়া এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরাও এ ভাতা পাবেন। একইসঙ্গে অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছুটি পূর্বকালীন সর্বশেষ প্রাপ্য মূল বেতনের ভিত্তিতে এ ভাতা পাবেন।
বাড়বে চিকিৎসা, শিক্ষা ও টিফিন ভাতা
চলতি বছর জেলা প্রশাসক সম্মেলনে সরকারি কর্মচারীদের শিক্ষা, চিকিৎসা ও টিফিন ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। ডিসিদের এ প্রস্তাব আমলে নিয়ে এ তিনটি ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
তিনি জানান, গ্রেড অনুযায়ী চিকিৎসা ভাতা ১ হাজার ৫০০ থেকে ২হাজার ৫০০ টাকা, শিক্ষা ভাতা এক সন্তানদের জন্য ৫০০ টাকা এবং দুই সন্তানের জন্য এক হাজার টাকা বৃদ্ধি পেয়ে সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা, টিফিন ভাতা গ্রেড অনুসারে ২০০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হতে পারে।
জানা গেছে, বাজেট প্রস্তুতিতে সরকারি কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার কোনো প্রস্তাব রাখা হয়নি। তবে অর্থমন্ত্রী বা কেউ যদি আলোচনাটি উত্থাপন করেন এবং প্রধানমন্ত্রী যদি তা আমলে নেন, তাহলে কত টাকা বাড়তি লাগতে পারে, সে প্রস্তুতি অবশ্য নিয়ে রেখেছে অর্থ বিভাগ। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেটের মধ্যে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ বরাদ্দ রয়েছে ৭৫ হাজার ১০ কোটি টাকা। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য সম্ভাব্য ৭ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার বাজেট থেকে তাদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দের কথা ভাবা হচ্ছে ৭৭ হাজার কোটি টাকা।
সূত্রগুলো জানায়, মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে ৪ হাজার কোটি, ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি ও ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা বাড়তি ব্যয় যোগ হবে।