স্টাফ রিপোর্টার :
দক্ষিণ সুরমার মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি এবং স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে তাদের অপসারণ দাবি করেছেন তেতলী ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর এলাকাবাসী। গতকাল সোমবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি জানান। এলাকাবাসীর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শামীম আহমদ।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুল আহাদ ক্ষমতা কুক্ষিগত করে তার নিকটাত্মীয় প্রধান শিক্ষক আব্দুল ছালামকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে অভিযোগের পাহাড়। এলাকার সর্বস্তরের সচেতন জনসাধারণ উক্ত আব্দুল আহাদ ও প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে আসছেন। কিন্তু টাকার জোরে বিদ্যালয়ের ফান্ড ভেঙ্গে সকল অনিয়মকে তারা নিয়মে পরিণত করে দাপটের সাথে কার্যক্রম চালাচ্ছেন। বিদ্যালয়ের সহস্রাধিক ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যতকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছেন। তাদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী। যেকোনো সময় এ ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, ১৯৯৬ সালে এলাকার সর্বস্তরের মানুষ মোহাম্মদী উচ্চ বিদ্যালয় নামে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেন। এটি সার্বজনিন একটি প্রতিষ্ঠান। কারো একার সম্পত্তি নয়। তবুও আব্দুল আহাদ অন্যায়ভাবে সভাপতির পদ আঁকড়ে ধরে বিদ্যালয়ের ক্ষতিসাধন করছেন। এলাকার মানুষ তাদের এ অবৈধ কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে শিক্ষামন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য, শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এসব অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত হচ্ছে না। আব্দুল আহাদ নিজের মার্কেট ও সহায় সম্পত্তি বিক্রি করে বিদ্যালয় নির্মাণ করেছেন বলে যে দাবি করছেন তা মোটেও সত্য নয়। এ ধরণের কোনো প্রমাণ তিনি উপস্থাপন করতে পারেননি। বিদ্যালয়ের বর্তমান ভূমি তিনি একা নয় এলাকার অনেকেই দান করেছেন। বিশেষ করে মরহুম হাজী সমছু মিয়া বিদ্যালয়ের জন্য ১৫ শতক ভূমি দান করেছিলেন। অনুদানের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ করে কার্যক্রম শুরু হয়। তার পরও আব্দুল আহাদ নিজেকে বিদ্যালয়ের একমাত্র প্রতিষ্ঠাতা দাবি করে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অদ্যাবধি কোনো নির্বাচন না দিয়ে সভাপতির পদ আঁকড়ে ধরে আছেন। যা সম্পূর্ণ বেআইনী। এলাকার বিশিষ্ট মুরববী ইলিয়াছ মিয়ার পরিবার বিদ্যালয়ের পাশে মসজিদ নির্মাণ করে যাবতীয় উন্নয়ন কাজ এমনকি ইমামের বেতন পর্যন্ত বহন করে আসছেন। আব্দুল আহাদ যে ভূমি দান করেছিলেন তার অধিকাংশই এখন পর্যন্ত তার নামে রয়ে গেছে। বিদ্যালয়ের পাশে নিয়ম বহির্ভূতভাবে কিন্ডার গার্টেন স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক আব্দুস ছালাম কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করেই কিন্ডার গার্টেন স্কুলের অধ্যক্ষ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। প্রধান শিক্ষক সরকারি নীতিমালা অনুসরণ না করেই তার আত্মীয় স্বজনদের বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুযোগ করে দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, এলাকার ছাত্র ও যুব সমাজসহ সর্বস্তরের মানুষের দাবি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি বাতিল করে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন ও প্রধান শিক্ষককে বরখাস্ত করতে হবে। অন্যথায় যেকোনো প্রতিবাদ কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে এলাকাবাসী। এলাকার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুশিক্ষা গ্রহণের এই প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংস না করতে যত দ্রুত সম্ভব ক্ষমতা লোভীদের বিদ্যালয় থেকে অপসারণ করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সচেতন এলাকাবাসী।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মো. ইলিয়াছ মিয়া, আলহাজ আব্দুল মতিন, শাহীন আহমদ, আলাউদ্দিন আহমদ, দেলোয়ার হোসেন, মাসুম আহমদ, খলিলুর রহমান, লিটন মিয়া, বদরুল আমিন, রেবুল ও জায়েদ প্রমুখ।